রূপকথার কলম্বিয়া
৩ জুলাই ২০১৪ফুটবল-পাগল কলম্বিয়াতেই এটা সম্ভব৷ কতোটা পাগল? ইউগভ ডট কম নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার হয়ে একটি প্রাক-বিশ্বকাপ জরিপ করেছিল৷ সেই জরিপ অনুযায়ী কলম্বিয়ার মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ ফুটবলে আগ্রহী নন; যেমন মেক্সিকোর ৮ শতাংশ এবং আর্জেন্টিনার ১০ শতাংশ মানুষ ফুটবলে আগ্রহী নন, কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ মানুষই ফুটবল – থুড়ি, ‘সকার' সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন৷
কলম্বিয়ার শতকরা চুরানব্বই জন নাগরিক ফুটবলে আগ্রহী৷ সেটা বোঝা যায় বিশ্বকাপের উন্মাদনা দেখে: দেশের অর্ধেক মানুষ জাতীয় দলের হলুদ জার্সি পরে রয়েছে৷ পরে রয়েছে কেন – সেই জার্সি পরে বিয়ারের বোতল নিয়ে খোলা মাঠে সুবিশাল স্ক্রিনে পাবলিক ভিউয়িং দেখতে যাচ্ছে; না, বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে নয়, কেননা যে পরিমাণ মাতলামো হচ্ছিল, তাতে অনেক বড় শহরের মেয়র খেলার দিন মাঠে অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন৷
তাতে উন্মাদনা কিছুমাত্র কমেনি, বরং জাতীয় দলকে নিয়ে গর্ব, আনন্দ, আতিশয্য এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ফার্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে গত ১৮ মাসব্যাপী শান্তি আলাপ-আলোচনা এবার সফল হতে পারে বলে ভাবুকরা স্বপ্ন দেখছেন৷ হায় রে হায়, শান্তি আসবে কোথা থেকে, যখন প্রেসিডেন্ট হুয়ান মানুয়েল সান্তস ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক প্রেসিডেন্ট আলভারো উরিবে এক ফুটবল দলের সাফল্য ছাড়া অন্য কোনো বিষয়েই একমত হতে পারছেন না?
বামপন্থি ফার্ক বিদ্রোহীদের মধ্যস্থরাও বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যাতে উচ্ছ্বাস করে বলা হয়েছিল: ‘‘তোমাদের মতো প্লেয়ার থাকতে আমরা বহুদূর যাব৷'' সেই বহুদূরেই যাচ্ছে কলম্বিয়া: দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে৷ এবারকার প্রতিপক্ষ – ব্রাজিল! কিন্তু তাতে ভয় পাবার পাত্র নয় নববলে বলীয়ান কলম্বিয়া৷ যে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইবালিজম'-এর দরুন কলম্বিয়ায় গত অর্ধ-শতাব্দী ব্যাপী সংঘাতে অন্তত দু'লাখ বিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তা যে বিশ্বকাপে পর পর চারটি ম্যাচ জিতেই শেষ হয়ে যাবে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন মান্ডেলা যেভাবে রাগবি বিশ্বকাপকে ব্যবহার করেছিলেন ভেদাভেদ ও বিভাজন দূর করার জন্য, কলম্বিয়ায় তা ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই, কেননা কলম্বিয়ায় কোনো নেলসন মান্ডেলা নেই৷
এখানে আছে কিছু অতিদরিদ্র পরিবার থেকে আসা ফুটবলার, যাদের কাহিনি অদ্ভুত এবং ট্র্যাজেডি ও সহিংসতায় পূর্ণ৷ ২০০৬ সালে গুস্তাভো উপেগুই নামধারী এক মাদক পাচারকারীকে তার শয়নকক্ষে গুলি করে মারা হয়৷ উপেগুই ছিলেন মেডেলিন শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এনভিগাদো ক্লাবের প্রধান এবং সদ্য এক কিশোর ফুটবলারকে কিনেছিলেন, যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে বলে উপিগুই-এর ধারণা ছিল৷ কিশোরটির নাম? হামেস রডরিগেস, যে এই বিশ্বকাপে এ যাবৎ সবচেয়ে বেশি গোল করেছে: সাকুল্যে পাঁচটি৷
এসি/এসবি (এপি, ডিপিএ)