খাবারে যা যোগ করা হয়
৩০ মে ২০১৬ফুড অ্যাডিটিভ দিয়ে খাবারের রং ফেরানো হয়; মিষ্টত্ব যোগ করা হয়; অথবা খাবার সংরক্ষণ করা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে এ ধরনের সব অ্যাডিটিভ খাবারের লেবেলে ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক৷ পণ্যের লেবেলে অ্যাডিটিভ যোগ করার উদ্দেশ্য ও কোন অ্যাডিটিভ যোগ করা হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে৷ ইইউ-তে অনুমোদিত সব অ্যাডিটিভের আগে একটি ই- নম্বর থাকে, যেমন ই৪১৫, যা কিনা সানথাম গাম বা রবার৷ সাধারণ যে অ্যাডিটিভগুলো যোগ করা হয়ে তাকে, সেগুলি হল অ্যান্টিঅক্সিডান্ট; খাওয়া যায়, এমন রং; ইমাল্সিফায়ার; স্ট্যাবিলাইজার; জেলি করার পদার্থ; ঘন করার পদার্থ; সংরক্ষণ করার পদার্থ; মিষ্টি করার পদার্থ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফুড অ্যাডিটিভের ওপর নজর রাখে ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি বা এফসা৷ তাদের ফুড অ্যাডিটিভ সংক্রান্ত একটি প্যানেল আছে (এএনএস)৷ এই প্যানেল যাবতীয় সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তার ফলাফল, ও সেই সঙ্গে পদার্থটির সম্ভাব্য বিষক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য ঘেঁটে দেখে তাদের মতামত দেয়৷ যেহেতু অধিকাংশ প্রচলিত অ্যাডিটিভ বা সংযোজনদ্রব্যের অনুমোদন গত শতাব্দীর আশির বা নব্বই-এর দশক থেকে – এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সত্তরের দশক থেকে – সেহেতু এফসা আপাতত সব অনুমোদিত অ্যাডিটিভের পুনর্মূল্যায়ন করছে, যা শেষ হবে ২০২০ সালের মধ্যে৷ আর কিছু না হোক, কিছু কিছু অ্যাডিটিভ – যেমন ফুড কলর –ইত্যাদির অ্যাক্সেপ্টেবল ডেইলি ইনটেক (এডিআই) কমিয়ে দেওয়া হতে পারে৷ এডিআই বলতে বোঝায়, একজন মানুষ দিনে তার খাদ্যের সঙ্গে একটি বিশেষ অ্যাডিটিভের কতোটা, বা কী পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে৷
ই১০৪ কুইনোলিন ইয়েলো বা ই১১০ সানসেট ইয়েলো-র মতো খাদ্যে সংযোজনীয় রঙের প্রয়োজন পড়ে যদি প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াজাত করার সময় খাবারের আদত রং বদলে যায়৷ প্যাকেজ করা খাবারটা যা-তে আরো মুখরোচক দেখায়, সেজন্যও রং ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেসব খাবারের কোনো রং নেই, সেগুলোতেও রং যোগ করা হয় ঐ একই কারণে৷ রং বাদ দিলে, ক্যালসিয়াম কার্বনেট (ই১৭০), ল্যাকটিক অ্যাসিড (ই২৭০), সাইট্রিক অ্যাসিড (ই৩৩০),পেক্টিন (ই৪৪০), ফ্যাটি অ্যাসিড (ই৫৭০) বা নাইট্রোজেন (ই৯৪১) গোত্রীয় অ্যাডিটিভ আকছার যোগ করা হয়৷ চিজ আর ড্রায়েড সসেজের ওপরে যে নাটামাইসিন (ই২৩৫), অথবা নুন যা-তে দলা না পাকিয়ে যায়, তার জন্য যে সোডিয়াম ফেরোসায়ানাইড (ই৫৩৫) ব্যবহার করা হয়, তার ব্যবহার আরেকটু বেশি সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত৷
ফুড অ্যাডিটিভের সপক্ষে যে যুক্তিটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়, সেটি হল: বহু খাবারদাবারে এমনিতেই এই সব পদার্থ থাকে – যেমন আপেলের মধ্যে পাওয়া যাবে রিবোফ্লাভিন (ই১০১), ক্যারোটিন (ই১৬০এ), অ্যান্থোসায়ানিন (ই১৬৩), এছাড়া প্রচলিত অ্যাসেটিক অ্যাসিড, অ্যাস্কর্বিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি৷ এক্ষেত্রে যে কথাটা উহ্য থাকে, সেটি হলো এই যে, প্রকৃতিদেবী লক্ষ লক্ষ বছরের ‘গবেষণায়' তাঁর রাসায়নিক ভাঁড়ার বা রান্নাঘরে যে রেসিপিগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছেন, মানুষের তৈরি অ্যাডিটিভ তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে কিনা৷ দ্বিতীয়ত, মানুষের তৈরি অ্যাডিটিভের দীর্ঘমেয়াদি কুফল বা বিষক্রিয়তা নিয়েও পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি৷ বলতে কি, প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সম্পর্কেই – অন্তত পশ্চিমে – গভীর দ্বিধা দেখা দিয়েছে, মানুষজন ঝুঁকছেন অরগ্যানিক ফুডের দিকে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷