ফের ট্রাম্পের মুখে কাশ্মীর
২২ জানুয়ারি ২০২০আবার কাশ্মীরে মধ্যস্থতার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ আবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাশে নিয়ে কাশ্মীর সম্পর্কে তাঁর এই মনোভাবের কথা জানালেন তিনি৷ এর আগে নিজের দেশে ইমরানের সঙ্গে আলোচনার পর এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন৷ এ বার জানালেন দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে৷ গত তিনবারই ভারতের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় কোনও দেশের মধ্য়স্থতার প্রশ্নই আসে না৷ কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ সমস্যা দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে৷ প্রশ্ন হল, তারপরেও ট্রাম্প কেন আবার কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুললেন?
ট্রাম্প দাভোসে বলেছেন, ''আমরা কাশ্মীর নিয়ে এবং ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি৷ আমরা যদি কাশ্মীরে সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই তা করতে চাই৷ আমরা পরিস্থিতির ওপর ভালোভাবে নজর রাখছি৷'' দাভোসে গিয়েও কাশ্মীর প্রসঙ্গ কেন টেনে আনতে হচ্ছে ট্রাম্পকে? দেশে-বিদেশে যখনই ইমরানের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তখনই কাশ্মীরে মধ্যস্থতার কথা কেন বলছেন ট্রাম্প? বিজেপি সাংসদ এবং বিদেশ মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য স্বপন দাশগুপ্তের কাছে উদ্দেশ্যটা পরিস্কার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''ভারত প্রতিবারই পরিষ্কার করে দিয়েছে, কাশ্মীর আমাদের অঙ্গ, তা নিয়ে তৃতীয় কোনও দেশের মধ্যস্থতার প্রশ্নই আসে না৷ তারপরেও ট্রাম্পকে এই কথা বলতে হচ্ছে কারণ, গত কয়েক বছরে অ্য়ামেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খুবই খারাপ হয়েছে৷ কিন্তু আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানকেও ট্রাম্পের দরকার৷ তাই তিনি পাকিস্তানকে নরমে-গরমে রাখতে চান৷ ভারতের অনড় অবস্থানের পরেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ বারবার টেনে আনা, মধ্যস্থতার কথা বলা সেই নরম কৌশলের অঙ্গ৷ এর ফলে ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক বা বানিজ্য লেনদেনে কোনও প্রভাব পড়বে না৷''
ইমরানও দাভোসে বলেছেন, ''বেশ কিছু বিষয় আছে যা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই৷ যেমন, আফগানিস্তান৷ সৌভাগ্যের বিষয়, অন্তত আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনও মতভেদ নেই৷ অন্তত এখানে অ্যামেরিকা হস্তক্ষেপ করুক৷ বড় ভূমিকা নিক৷ ওরাই একমাত্র এই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷'' পাক প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, আফগান সমস্যা সমাধানের বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তিনি৷
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তও মনে করেন, ট্রাম্প জানেন কাশ্মীর নিয়ে ভারত তার অবস্থান বদল করবে না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''এই অবস্থান জেনেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার অর্থ, পাকিস্তানকে খুশি করার একটা ভাব দেখানো৷ ট্রাম্পের কাছে ভারত এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ আসন্ন সফরে ভারতের সঙ্গে বানিজ্য চুক্তি হবে৷ সেখানে দুই দেশের বানিজ্য নিয়ে যে সমস্যা ছিল তা দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সব থেকে বড় কথা, কাশ্মীর পরিস্থিতি, ডেমোক্র্যাটদের ভারত নিয়ে কড়া অবস্থানের পরেও তিনি দিল্লি আসছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমবার৷ তার মানে তো কাশ্মীর নিয়ে ভারত যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা মেনে নিয়েই তিনি আসছেন৷''
ট্রাম্প কবে ভারত আসবেন সেই তারিখ এখনও সরকারিভাবে জানানো হয়নি৷ তবে সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি আসতে পারেন৷ ২৪ ও ২৫ তারিখ তাঁর ভারত সফরের সম্বাবনা আছে৷ তিনি দিল্লি ছাড়া গুজরাটেও যেতে পারেন৷ তবে সফরের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে ভারত-মার্কিন বানিজ্য চুক্তি, অনেক আলোচনার পর যা নিয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ৷