ফেসবুক, গুগল কি সত্যি আড়ি পাতছে?
২৯ অক্টোবর ২০১৮প্রথম ভুল ধারণা হলো, কম্পিউটার নাকি ভাবনাচিন্তা করতে পারে৷ মানতে কষ্ট হলেও অনেক ক্ষেত্রে অ্যালগোরিদম সত্যি আমাদের তুলনায় অনেকে এগিয়ে গেছে৷ যেমন, বিশাল তথ্যভাণ্ডারের মধ্যে প্যাটার্ন বা ছন্দ খোঁজার ক্ষেত্রে৷ তাছাড়া বুদ্ধিমান সফটওয়্যার সংগীত রচনা, ছবি আঁকতেও শিখে গেছে৷ এমনকি আস্ত চিত্রনাট্যও লিখে ফেলছে৷ তবে মানুষ তাদের যে তথ্য দিচ্ছে, তার ভিত্তিতেই কম্পিউটার কাজ করে৷
সবচেয়ে বুদ্ধিমান যন্ত্রগুলিরও নিজস্ব ভাবনাচিন্তা বা লক্ষ্য থাকে না৷ অদূর ভবিষ্যতেও এমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই৷ কম্পিউটার স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপ নেবে – এমন ধারণা সম্পূর্ণ কাল্পনিক৷
দ্বিতীয় এমন ভুল ধারণা হলো,ফেসবুক নাকি সবকিছু শুনতে পায়৷ তারা কি আড়ি পেতে আমাদের কথোপকথন শুনে মানানসই বিজ্ঞাপন পাঠায়? ঘটনা হলো, ২০১৪ সাল থেকে ফেসবুক কমপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক অ্যাপের মাধ্যমে শব্দ রেকর্ড করে তার মূল্যায়ন করছে৷
গুগল, অ্যামাজনের মতো কোম্পানির ডিভাইস, এমনকি বার্বি পুতুলের মধ্যেও মাইক্রোফোন রয়েছে৷ ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে সেগুলি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত৷ জার্মানিতে কিন্তু এমনভাবে আড়িপাতা আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কমপক্ষে জার্মানিতে এখনো এভাবে আড়ি পাতা হচ্ছে না৷ তা সত্ত্বেও ফেসবুক কিন্তু সত্যি আড়ি পাতছে৷
তৃতীয় ভুল ধারণা হলো, ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে৷ মনে রাখতে হবে, অতীতেও যন্ত্র কিন্তু মানুষের কাছ থেকে অনেক কাজ নিয়ে নিয়েছে৷ কিন্তু ডিজিটাল বিপ্লবের ক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যার জন্য বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয়৷
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, কম্পিউটার অদূর ভবিষ্যতে প্রায় অর্ধেক পেশা ছিনিয়ে নেবে৷ যেমন কয়েক বছর পর দোকানের ক্যাশ কাউন্টারে রক্তমাংসের মানুষ আর দেখা যাবে না৷ বাড়ির দালাল অথবা রাঁধুনীদের ভবিষ্যতও তেমন উজ্জ্বল নয়৷
অন্যদিকে সৃজনশীল পেশা, অথবা যেসব কাজে কর্মদক্ষতার প্রয়োজন হয়, সে সবের অবস্থা অনেক ভালো৷ কারণ, কম্পিউটার এখনো এসব কাজে হস্তক্ষেপ করেনি৷ ডিজিটাল বিপ্লব যে সার্বিকভাবে বেশ কিছু চাকরি খেয়ে নেবে, সেই পূর্বাভাষ কিন্তু ভুল নয়৷
চতুর্থ ভুল ধারণা হলো, কম্পিউটার ভবিষ্যতে আমাদের যুদ্ধ পরিচালনা করবে৷ যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের বদলে রোবট পাঠানোর আইডিয়া সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য দারুণ খবর৷ কারণ, কম্পিউটার অনেক কম ভুল করে, আরো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং অপ্রয়োজনীয় আবেগের ধার ধারে না৷
সামরিক বাহিনীর রোবট বর্তমানেই অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছে৷ তবে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধুপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার হাতে রয়েছে৷ ড্রোনের মতো হামলার অস্ত্র মানুষই বোতাম টিপে চালনা করে৷ তবে স্বচালিত হামলা প্রণালী গড়ে তুলতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ রোবটদের যুদ্ধ তাই আজ আর শুধু কল্পবিজ্ঞান নয়৷
ইয়াকব ক্নেসার/এসবি