ফেসবুকে অপরাধী!
৬ ডিসেম্বর ২০১৩ফেসবুক বার্তাগুলো শুরু হয় তদন্তে সহায়তাকারীদের ‘‘প্রিয়'' বলে সম্বোধন করে৷ এরপর তাতে যোগ করা হয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন ‘‘দশ বছর বয়সি এক মেয়ে নিখোঁজ'' – আর বার্তায় সবশেষে থাকে কারো কোনো তথ্য জানা থাকলে দয়া করে ‘‘অপরাধসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরকে'' অবহিত করুন৷
বলা বাহুল্য, পুলিশের এই বার্তা ফেসবুকে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে৷ কেউ কেউ তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন, কেউবা সেটা ইন্টারনেটে আরো বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেন৷ অনেক সময় একেকটি পোস্ট চারশো'বারের মতো শেয়ার হয়৷
গত বছরের মার্চ মাস থেকে তদন্ত কাজে ফেসবুককে ব্যবহার করছে লোয়ার সাক্সেনির পুলিশ৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র সিনেটর মিশায়েল নয়মান মনে করেন, তদন্ত কাজে ফেসবুক ব্যবহারের এই চর্চা শীঘ্রই গোটা জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ফেসবুকের মতো সমাজিক নেটওয়ার্ককে আর উপেক্ষা করতে পারি না৷'' ওসনাব্রুকে বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে একথা বলেন নয়মান৷
পথ দেখাচ্ছে লোয়ার সাক্সেনি
জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের বিচারমন্ত্রীরা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ তবে তারা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি৷ হেসে এবং মেকলেনবুর্গ-ফোরপমার্ন রাজ্যের পুলিশও অপরাধী খুঁজে পেতে সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটের সহায়তা নিচ্ছে৷ তবে লোয়ার সাক্সেনি এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে৷ এক লাখ সত্তর হাজারের বেশি মানুষ নিয়মিত ‘‘লোয়ার সাক্সেনি পুলিশ ইনভেস্টিগেশন'' পাতাটি অনুসরণ করেন৷ আর অনুসারীদের মধ্যে পুলিশের তদন্ত কাজে সহায়তা করার আগ্রহও অনেক৷
লোয়ার সাক্সেনির অপরাধসংক্রান্ত পুলিশ দপ্তরের মুখপাত্র উয়ি শোয়েলনুস তদন্তের এই নতুন পদ্ধতিকে অত্যন্ত সফল মনে করেন৷ এখন পর্যন্ত তদন্তের প্রয়োজনে তথ্য চেয়ে ১৬০টি অনুরোধ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তারা৷ এগুলোর মধ্যে কয়টি অনুরোধ সফল হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি৷
পুরোপুরি ডিলিট সম্ভব নয়
ফেসবুকের সহায়তা নেয়ার এই পদ্ধতিতে শুনতে আধুনিক মনে হলেও এটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে৷ বিশেষ করে আইনি কাঠামোতে বিষয়টি কতটা অনুমোদনযোগ্য তা নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে৷ এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, জার্মানির অপরাধসংক্রান্ত আইন সরকারি তদন্তকাজে বেসরকারি সেবাখাতের সহায়তা নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে না৷ ফেসবুকের সার্ভারগুলো বেসরকারি মালিকানাধীন এবং এর পরিচালনাও হয় বেসরকারি পর্যায়ে৷
মোটের উপর, একবার কোন কিছু ফেসবুকে পোস্ট করা হলে সেটি ফেসবুকের আওতায় চলে যায় এবং সেসব তথ্য পুরোপুরি ডিলিট করা একরকম অসম্ভব৷ দেয়ালে পোস্টার লাগালে সেটি পরবর্তীতে তুলে নেয়া যায়, কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা কন্টেন্ট সার্ভারে থেকে যায়৷
লোয়ার সাক্সেনির পুলিশ অবশ্য এই ইস্যুর একটি সমাধান বের করেছে৷ তারা ফেসবুকে কোনো ছবি বা কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করার আগে সেটি প্রথমে পুলিশের সার্ভারে আপলোড করে৷ আর তদন্ত কাজ শেষ হয়ে গেলে পুলিশের সার্ভার থেকে সেগুলো মুছে ফেলে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াও তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সকল আইন মেনে চলছে না৷ তাছাড়া ফেসবুকে প্রকাশ করা তথ্য পরবর্তীতে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে ব্যবহারের ঝুঁকি থেকে যায়৷
এরকম নানা ইস্যু অমীমাংসিত থাকায় জার্মানির সকল রাজ্যের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এখনই তদন্তের কাজে গোটা দেশে ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না৷ তবে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা থেমে নেই৷ লোয়ার সাক্সেনির পুলিশের ফেসবুক উদ্যোগকে তারা ভালোভাবেই লুফে নিয়েছেন৷