ফেসবুকে হরতাল
২০ মার্চ ২০১৩রাস্তায় বের হলে পিকেটার সন্দেহের পুলিশের পিটুনি খেতে পারেন, হতে পারেন পিকেটারদের আক্রমণের শিকার৷ হরতাল চলাকালে এসব আশঙ্কা থাকেই৷ তাই অনেকেই হয়ে পড়েন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি৷ হরতাল মানেই বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়৷ সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালতেও কাজে পড়ে ভাটা৷ বন্ধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম, আর্থিক ক্ষতি শত কোটি টাকার৷
এত ঝুঁকির মধ্যেও জীবিকার তাগিদে বেরুতে হয় অনেককে৷ আর তারাই হন সহিংসতার নির্মম শিকার৷ গাড়িতে লাগানো আগুনে পুড়ে দগ্ধ হন সাধারণ মানুষ৷ পিকেটারের ছোঁড়া ইটের আঘাতে প্রাণ যায় রিকশা চালকের, ট্রাক ড্রাইভারের৷ হরতাল তাই সবদিক থেকেই ক্ষতিকর৷
‘মোক্ষম অস্ত্র' হরতাল
কিন্তু রাজনীতির এই ‘মোক্ষম অস্ত্র' হাতছাড়া করতে রাজি নন রাজনীতিবিদরা৷ তাই শেখ হাসিনা যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন হরতাল দিয়ে রেকর্ড গড়েন তিনি৷ আর এখন বিরোধী নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া হাসতে হাসতে ঘোষণা করেন হরতাল, জানান প্রাণহানির আগাম খবর৷ রাজনীতিবিদদের এই হরতাল হরতাল খেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনতার প্রাণের কোন দাবি স্থান পায়না৷ বরং ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ির হাতিয়ার হরতাল৷
সাধারণ জনতা এসব হরতালে যে কতটা বিরক্ত, সেটার প্রমাণ মিলল ফেসবুকে৷ রাজনীতিবিদদের ‘মোক্ষম অস্ত্র' ধ্বংসে এবার এক অভিনব হরতালে শরিক হচ্ছেন তারা৷ উদ্যোগের নাম ‘হরতালের প্রতিবাদে ফেসবুকে হরতাল!' আগামী ২৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত নটা থেকে দশটা অবধি পালন করা হবে এই হরতাল৷
ফুটপাতে জুতা বিক্রেতার ছবি
ফেসবুকে এই হরতাল আহ্বান করেছেন রাজিব হাসান নামক এক ব্যক্তি৷ ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নন তিনি৷ তবে দেশের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে হাসান জানান, গত সোমবার (১৮.০৩.১৩) দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবি তাঁকে এই ব্যতিক্রমী হরতাল আহ্বানে উৎসাহিত করেছে৷ তিনি বলেন, ছবিটি ছিল ফুটপাতের এক জুতা বিক্রেতার৷ তিনি হরতালের আগের দিনের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছেন৷ তাঁর পেছনে গাড়িতে আগুন জ্বলছে আর তিনি কোনক্রমে তাঁর জুতাগুলো নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে৷ তাঁর চোখেমুখে ছিল একধরনের আতঙ্ক, ত্রাস, ভয়, আকুতি, মিনতি৷
এই জুতাবিক্রেতাকে চেনেন না হাসান৷ তবে তিনি তাঁর আতঙ্কিত চেহারার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন, খুঁজে পেয়েছেন হরতাল নিয়ে সাধারণ জনতার আতঙ্কিত অভিব্যক্তি৷ ছবিটি দেখার পর তাই কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন হাসান৷ বন্ধুদের সঙ্গে আলাপের পর সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের রাজ্যে হরতাল আহ্বান করবেন তিনি৷ ফেসবুক হচ্ছে সেই রাজ্য৷
অভাবনীয় সাড়া
যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ তবে এই কাজে সাড়া মিলেছে অভাবনীয়৷ হাসান বলেন, ইভেন্টটি তৈরির প্রথম এক ঘণ্টায় সেটার সঙ্গে আট হাজারের বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় দিনেই সম্পৃক্ততার সংখ্যা পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ হাজারের ঘর৷
রাজিব হাসান বলেন, ‘‘হরতালে প্রতি দিন দিনে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়৷ পদ্মা সেতু বানাতে ১৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে শুনেছি৷ মানে কিনা কয়েক দিনের হরতালে আমরা কার্যত একটা পদ্মা সেতু ধ্বংস করছি৷ আমাদের এই হরতাল বিএনপি বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়৷ আমাদের এই হরতাল, হরতালের বিরুদ্ধে৷''
ফেসবুক হরতালের সময় রাজপথের মতো পিকেটিংও করবেন হাসানরা৷ তবে সেটা করা হবে ভদ্র, শালীনভাবে৷ হরতাল চলাকালে ফেসবুকে কেউ কোন কিছু পোস্ট বা শেয়ার করলে হাসানরা সেই পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে গিয়ে পিকেটিং করবেন৷ বলবেন, এখন ফেসবুকে হরতাল চলছে, আপনি আপনার পোস্টটি মুছে ফেলুন৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ফেসবুক প্রজন্মের শক্তি সম্পর্কে ইতোমধ্যেই ধারণা পেয়েছেন রাজনীতিবিদরা৷ শাহবাগের অরাজনৈতিক আন্দোলন তাদেরকে সেই ধারণা দিয়েছে৷ রাজিব হাসান জানান, রাজনীতিবিদরা আমাদের শক্তি সম্পর্কে জানেন৷ তারা বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে সেটা স্বীকারও করেছেন৷ তাই আমাদের এই ফেসবুক হরতালের খবরও তাদের কাছে পৌঁছে যাবে, সেটা নিশ্চিত৷