ফোনের অ্যাপই ডাক্তারের কাজ করছে!
১৬ জুলাই ২০১৯প্রাথমিক সাহায্য দিচ্ছে অ্যাপ
ধরুন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ রোগের উপসর্গগুলি মোবাইল ফোনের অ্যাপে লিখে দিলেই চলবে৷ তখন এক যন্ত্র রক্তমাংসের ডাক্তারের মতো আপনার সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করবে৷ প্রায় ২০টি প্রশ্নের উত্তর পেলে যন্ত্রটি সম্ভাব্য রোগ নির্ণয় করে দেবে৷ এমন এক অ্যাপ কি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার ক্ষমতা রাখে?
এডিএ হেলথ কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল নাটরাট এ বিষয়ে তাঁর মূল্যায়ন জানালেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয়, ডাক্তারের ভূমিকা অবশ্যই কিছুটা বদলে যাবে৷ গত আট বছরে অনেক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সঙ্গে কাজ করে আমার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ আমার মতে, সেরা ডাক্তাররা তাঁরাই, যাঁরা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরও ভালো ডাক্তার হয়ে উঠতে চান৷''
জোরালো উদ্যোগের সুফল
প্রায় আট বছর ধরে ডাক্তার ও প্রোগ্রামাররা মিলে এই অ্যাপ সৃষ্টি করেছেন৷ হাজার হাজার গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা৷ কোম্পানির মেডিক্যাল কনটেন্ট বিভাগের প্রধান এভেলিনা ট্যুর্ক বলেন, ‘‘এডিএ অ্যাপ উপসর্গ বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল বাতলে দেয়, এখানে আমরা সেটাই দেখছি৷ বাম দিকে উপসর্গের তালিকা, তাতে ‘হ্যাঁ' বা ‘না' বেছে নেওয়া হয়েছে৷ ডানদিকে সম্ভাব্য রোগগুলির উল্লেখ রয়েছে৷ কোনো উপসর্গের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ' বেছে নিলে সবুজ রেখা দেখা যায় এবং সেটি কোনো একটি রোগের পক্ষে যুক্তির মাত্রা ইঙ্গিত করে৷ উপসর্গ না থাকলে লাল রেখা দেখা যায় এবং কোন রোগ নেই, তা ইঙ্গিত করে৷''
গোটা বিশ্বে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ ঠিকমতো নির্ণয় করা সম্ভব হয়৷ এ ক্ষেত্রে রক্তমাংসের ডাক্তারের সাফল্যের হারও প্রায় একই রকম৷ সাফল্যের হার আরও বাড়াতে অ্যাপ সৃষ্টিকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করছেন৷ এভেলিনা ট্যুর্ক মনে করেন, ‘‘সেল্ফ লার্নিং প্রক্রিয়ার মূলমন্ত্র হলো, এই অ্যাপ রোগ নির্ণয় করার পর ইউজার সেই ফলাফলের সঙ্গে একমত হলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে৷ এই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটুক, আমরা কিন্তু তা চাই না৷ ডাক্তাররা সব সময়ে সেই সিদ্ধান্ত নেন৷ ইউজার ভুল বক্তব্য রেখে প্রক্রিয়াটি যাতে প্রভাবিত করতে না পারে, এভাবে আমরা তা নিশ্চিত করি৷''
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা
দৈনন্দিন জীবনে এই অ্যাপ কতটা কার্যকর? ভারতের জয়পুর শহরের সুরজ গুর্জর প্রায় ৭০ লক্ষ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের একজন৷ সুরজ মনে করেন, ‘‘এর ভাষা খুব সহজ হতে হবে, যাতে আরও বেশি মানুষ তা বুঝতে পারেন৷ মেদ বাড়া, ডায়াবেটিসের মতো বিপাক সংক্রান্ত রোগও অন্তর্গত করা উচিত, সঙ্গে মানানসই খাদ্য তালিকাও চাই৷''
বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সময় অ্যাপ রোগীদের সতর্ক করে দেয় এবং সম্ভাব্য জটিল রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাবার পরামর্শ দেয়৷ যেমন সুরজের নাকের গহ্বরে সম্ভবত ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ হয়েছে৷ডাক্তারও সেই সমস্যা শনাক্ত করেছেন৷ এএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে ড. সুরেন্দ্র কালা বলেন, ‘‘সফটওয়্যার এই রোগের বেশিরভাগ উপসর্গ সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে৷ সেটা খুব ভালো কথা৷ আমার মতে, এই অ্যাপ ডাক্তারের জায়গা নিতে পারে না, কারণ রোগীর শরীর পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি৷ কিন্তু এটি খুবই প্রয়োজনীয় টুল বা সরঞ্জাম বটে৷''
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ
ডেভেলপারদের আশা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে ইউজার টের পাওয়ার আগেই রোগের পূর্বাভাষ দিতে পারবে৷ ডানিয়েল নাটরাট মনে করেন, ‘‘আমার মতে, মানুষের জীবন আরও দীর্ঘ ও সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে এআই অবশ্যই অবদান রাখবে৷ বিশেষ করে রোগ আগেই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে৷ এডিএ অ্যাপ সেদিকেই যেতে চায়৷''
সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গোটা প্রণালী বেশ কয়েক বছর ধরে ইউজারের সঙ্গী হয়ে থাকবে এবং তাঁর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে৷ এমন সম্ভাবনা সম্পর্কে যাবতীয় সংশয় সত্ত্বেও অ্যাপ সৃষ্টিকারীরা বার বার আশ্বাস দিচ্ছেন, যে সব তথ্যের মালিকানা ব্যবহারকারীর হাতেই থাকবে৷ কোনো নাম ছাড়াই তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে৷
ব্যক্তিগত তথ্যের ক্ষেত্রে আপোশের বদলে আয়ু বাড়ানোর হাতছানি – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চিকিৎসা জগত সম্ভবত সেই পথেই এগোতে চলেছে৷
মিটো স্মিট/এসবি