বাল্যবিবাহ রোধে অ্যাপ চালু
৭ মে ২০১৮বাল্যবিবাহ রোধে শিশু অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল৷ একটি মোবাইল অ্যাপ চালুর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
সোমবার প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই অ্যাপ ১৮ বছর বয়স হয়নি এমন বাংলাদেশি মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করতে ‘বিশেষ প্রভাব' রাখবে বলে তারা আশা করছে৷
আইনুযায়ী বিয়ের জন্য মেয়েদের ১৮ এবং পুরুষের বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা হলেও ইউনিসেফ বলছে, বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকায় শীর্ষের দেশগুলোর সাথেই রয়েছে৷
নতুন মোবাইল অ্যাপটি বিয়ে নিবন্ধনের সাথে জড়িত ঘটক, কাজী, ধর্মীয় এবং আইনি ব্যক্তিদের ডিজিটাল ডাটাবেজের সহায়তা দেবে৷
প্ল্যান বাংলাদেশের পরিচালক সৌম্য গুহ বলেন, ‘‘বিয়ের প্রক্রিয়ার সাথে প্রাথমিকভাবে জড়িতদের যদি প্রথমেই তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কেউই কম বয়সে বিয়েকে আইনিসিদ্ধ বা নিবন্ধনের সাথে যুক্ত হবেন না৷’’
পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর ৬ মাসে এই অ্যাপ দিয়ে ৩ হাজার ৭৫০ বাল্যবিবাহ রোধ করা গেছে দাবি করে সৌম্য গুহ বলেন, ‘‘এটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে৷’’
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করছেন এমন সমাজকর্মীরা বলছেন, বাল্যবিবাহের ফলে বেশিরভাগ মেয়েই স্কুল থেকে ছিটকে পড়েন এবং ধষর্ণ-ঝুঁকি, গৃহ নিপীড়নসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন তারা৷
প্ল্যানের চালু করা অ্যাপটিতে অফলাইন মেসেজ করার সুবিধা রয়েছে৷ এর ফলে ব্যবহারকারী একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দিলেই যার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে, তার সংশ্লিষ্ট তিনটি নথিতে ঢুকতে পারবেন৷
যদি সংশ্লিষ্ট নারীর বয়স ১৮ বা তার বেশি হয়, নম্বর প্রবেশের সাথে সাথেই ‘প্রসিড’ বা এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আসবে৷ আর যদি তা না হয়, তাহলে ‘লাল সতর্কতা’ সংকেত উঠবে৷
বাংলাদেশে সব ধরনের বিয়ের ৩০ দিনের মধ্যেই আইনগতভাবে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না৷
জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুলের ছাড়পত্র বা জাতীয় পরিচয়পত্র বয়সের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে৷ বেশিরভাগ সময়ই সন্তানকে বাল্যবিবাহ দিতে পরিবারের সদস্যরা এসবে জালিয়াতি করেন৷
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাল্যবিবাহ রোধে এবং নতুন অ্যাপটি নিয়ে এরমধ্যে ১ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষিত করেছে৷ সংস্থাটি আশা করছে, চলতি বছরের আগস্ট মাস নাগাদ এটি পুরোদমে চালু হবে৷
অ্যাপটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘আমি মনে করি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছেন, এ অ্যাপটি তাতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখবে৷’’
যদিও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন বাল্যবিবাহ রোধে মেয়েদের মতামত দেওয়ার অধিকারের বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করতে এবং আইনগত ফাঁকফোকর বন্ধের প্রতি জোর দিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের নিবন্ধন মানুষ এড়িয়েও যেতে পারে, কেননা, এটি বিয়ের সামাজিক বৈধতার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা করে না৷ তাছাড়া নিবন্ধন না করলেও খুব সামান্যই জরিমানা দিতে হয়৷এটা বড় কিছু নয়৷’’
‘‘আমরা যদি এরকম কিছুকে (অ্যাপ) জাদুকরী সমাধান ভাবি, তাহলে ভুল হবে’’, বলেন আইনজীবী সারা হোসেন৷
এইচআই/এসিবি (রয়টার্স)