1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্যাক্ট চেক: আফ্রিকায় ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের আস্থা

২৮ ডিসেম্বর ২০২০

আফ্রিকা-জুড়ে একটা প্রচার চলে। পোলিও থেকে শুরু করে করোনা ভ্যাকসিনের আসল উদ্দেশ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ। তা নিয়ে ফ্যাক্ট চেক।

https://p.dw.com/p/3nGoV
দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন নিচ্ছেন এক স্বেচ্ছাসেবক। ছবি: Siphiwe Sibeko/REUTERS

এর আগে পোলিও থেকে শুরু করে অনেক ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই এই প্রচার হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও। আফ্রিকার অনেক দেশেই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিরূপ প্রচার শুরু হয়েছে। তাই এই ফ্যাক্ট চেক জরুরি।

করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে আফ্রিকার মানুষের মনে কি কোনো সন্দেহ আছে?

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেকঃ বিভ্রান্তিকর

কেনিয়ায় থাকেন এরিক মুগেন্ডি। তাঁর দাবি, ''আসলে বড় সমস্যা হলো, করোনা ভ্যাকসিন নেয়া নিয়ে আমরা একটা দ্বিধা দেখতে পাচ্ছি। এর কারণ, কর্তৃপক্ষ মানুষকে সচেতন করছে না।''

ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় উদাহরণ টেনে আনছেন সরকারি কর্তারা। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিচারপতি গত ১১ ডিসেম্বর কোভিড ভ্যাকসিনকে 'জন্তুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শয়তানের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া'-র সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

টুইটারের মাধ্যমেও অনেকে ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবিশ্বাস ছড়াচ্ছেন।

এই ধরনের ঘটনা লোকের আস্থায় আঘাত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সম্প্রতি আফ্রিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন(সিডিসি)-এর সমীক্ষা অন্য কথা বলছে। আফ্রিকার ১৫টি দেশের ১৫ হাজার মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে ৭৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, করোনা ভ্যাকসিন যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয় তাহলে তাঁরা সেটা নেবেন।

বেশির ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে চান। তবে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের মধ্যে সংখ্যার তারতম্য আছে। ইথিওপিয়া ও নাইজারের মতো দেশে ৯৪ ও ৯৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে। কিন্তু সেনেগালে ৬৫ শতাংশ ও কঙ্গোতে ৫৯ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে। 

সমীক্ষা অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনকে নিরাপদ নয় বলে মনে করেন। তা নিতেও চান না।

প্রধান বিচারপতির মতো ব্যক্তিত্বদের কথা মানুষ শোনে কেন? কারণ, তাঁদের উপর মানুষের আস্থা আছে। তাছাড়া ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব আছে। ফলে লোকের মনে সংশয় বাড়ছে।

এই ভাইরাস কি ল্যাবরেটরি থেকে মানবশরীরে এসেছে? এর মধ্যে কি মাইক্রোচিপ আছে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য?

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: অপ্রমাণিত।

অগাস্টে প্যান আফ্রিকান মেডিকেল জার্নালে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, নাইজেরিয়ায় আশঙ্কা হলো, ''গণহারে এই ভ্যাকসিন দেয়ার ছুতোয় সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অরওয়েল কথিত মেকানিজমই নেয়া হচ্ছে।''

কেনিয়ার মুগেন্ডি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কিছু মানুষের ধারণা হলো, ভাইরাস হলো একটি বায়োলজিকাল অস্ত্র, আর এই ভ্যাকসিন দিয়ে আদতে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে আফ্রিকা অভিযান করবে বিদেশি শক্তি। সামাজিক মাধ্যমেও একই ধরনের বিশ্বাসের কথা কিছু মানুষ বলছেন।

সুইডেনের পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ  বেন্টি গেলেটা বলেছেন, এই ধরনের দাবিগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। সাধারণ মানুষের উচিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথা বিশ্বাস করা। কারণ, অপ্রমাণিত কথায় বিশ্বাস করলে মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন। তখন তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এরকম কোনো তথ্য নেই যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা লোকেদের বাণিজ্যিকভাবে প্রতারিত করবে।

এক বছরের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আসা মানে কি তা অকালে তৈরি হওয়া?

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: অপ্রমাণিত

ভ্যাকসিন তড়়িঘড়ি করে তৈরি করা হয়েছে এবং তার ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে কেউ কেউ উদ্বেগ জানিয়েছেন।

বেন্টি মনে করেন, এরকম আশঙ্কা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর দাবি, এই ভ্যাকসিন কয়েকজন বৈজ্ঞানিক এবং কয়েকটি উৎপাদক সংস্থা তৈরি করেছে মনে করা ভুল হবে। ভ্যাকসিনকে নিরাপদ রাখার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করা হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি খুবই কঠিন।

এই ভ্যাকসিনকে টাইফয়েড, পোলিও, ইবোলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এই সব ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক সময় লেগেছে। ৪০ বছরের মতো। তার তুলনায় কোভিড ভ্যাকসিন এক বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন। সেখান থেকেই চক্রান্তের কাহিনির শুরু। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক বছর ধরে করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত সারস ভাইরাস নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। তাছাড়া করোনা নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারগুলি প্রচুর অর্থ খরচ করেছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণার কাজে অর্থ খরচ করেছে।

এরিকের মতো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভ্যাকসিন যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে ঠিকভাবে মানুষকে অবহিত করা হয়নি। যার জন্য এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

বেন্টিও স্বীকার করেন, মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে সচেতনতা বাড়ার কথা ছিল, তা হয়নি। তার ফলে ভুলভাল ধারণা তৈরি হয়েছে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার ক্ষমতা কি আফ্রিকার আছে?

ডিডাব্লিউর ফ্যাক্ট চেক: বিভ্রান্তিকর

বেন্টি জানিয়েছেন, যদি অনেক জায়গায় ভ্যাকসিন নিরাপদে রাখার মতো পরিকাঠামো না থাকে তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। বায়োনটেক-ফাইজারের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে রাখতে হয়। এই তাপমানে ভ্যাকসিন রাখা আফ্রিকার দেশগুলির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এবং অনেকের কাছেই সেই পরিকাঠামো নেই। তবে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিরাপদে রাখতে মাইনেস ২০ এবং মাইনাস দুই থেকে আট ডিগ্রিই যথেষ্ট।

ফলে কেনিয়া সহ আফ্রিকার অনেক দেশই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন চাইছে।

আফ্রিকা কবে ভ্যাকসিন পাবে, সেটাও বড় প্রশ্ন।

ক্যামেরুনের ভাইরোলজিস্ট জন এনকেগাসঙ জানিয়েছেন, আফ্রিকায় ভ্যাকসিন আগামী বছরের এপ্রিলের আগে আসবে বলে মনে হয় না। তবে কেনিয়া অ্যাস্ট্রোজেনেকার কাছে দুই কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছে। সেটা তারা জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে পেয়ে যাবে।

এনকেগাসঙ সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, আফ্রিকার দেশগুলিতে ১৩০ কোটি মানুষ আছেন। তাঁদের ভ্যাকসিন পেতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে।

এখনো পর্যন্ত আফ্রিকায় ২৫ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬০ হাজার মানুষ।

মেরগা বুলা,/জিএইচ