বন উজাড়ে বাড়ছে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি
১ মে ২০২০বিজ্ঞানীরা গত অন্তত দুই দশক ধরে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন৷ তাঁরা বলেছেন, মানুষ যত সীমা লঙ্ঘন করে বনে প্রবেশ করবে৷ বুনো প্রাণীদের হওয়া নানা রোগ তত বেশি মানবজাতিকে সংক্রমিত করবে৷
এ কারণেই চীনরে উহানে নতুন একটি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর একটুও অবাক হননি ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব মাতো গ্রাসো-র ইকোলোজিস্ট আনা লুসিয়ে তোউরিনহো৷ তিনি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হলে কিভাবে বন এবং সমাজ অসুস্থ হয়ে পড়ে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘যখন কোনো নতুন ভাইরাস সেটির প্রাকৃতিক আবাস ত্যাগ করে মানুষের দেহে প্রবেশ করে তখন ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ নতুন করোনা ভাইরাস সেটাই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে৷’’
গত ডিসেম্বরের শেষে দিকে উহানে প্রাদুর্ভাবের পর করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে৷ মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটাই সম্ভবত প্রথম বৈশ্বিক মহামারী যেটাতে পুরো বিশ্ব আক্রান্ত৷ সার্স-কোভি-২ নামের এই ভাইরাসটি কোনো বন্য প্রাণী (সম্ভবত বাদুড়) থেকে মানব দেহে প্রবেশ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়৷
এ ধরনের ভাইরাস যখন নিজের উৎসতে আবদ্ধ থাকে (বিশেষ করে গভীর জঙ্গলে যেখানে মানুষ প্রবেশ করে না) তখন সেটি মানবজাতির জন্য একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷কিন্তু এই প্রাকৃতিক প্রতিরোধ যখন ভেঙে ফেলা হয়৷ অর্থাৎ, যখন বন উজাড় হতে থাকে সমস্যার শুরু হয় তখন৷
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগেই বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বন উজাড়ের কারণে বাদুড়ের আবাস বিনষ্ট হওয়া এবং সেগুলোর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে নানা নতুন করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল৷
এমনকি, পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশর গবেষক আনিতা আফেল্ট তাঁর গবেষণায় পরবর্তী মারাত্মক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এশিয়া মহাদেশ থেকে হবে বলে স্পষ্ট করে দেখিয়েছিলেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ৪০ বছরে এশিয়া মহাদেশে মারাত্মকভাবে বন উজাড় করা হয়েছে৷
২০১৮ সালে নিজের গবেষণাপত্রে আফেল্ট লিখেছিলেন, ‘‘দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (এসইএ) বিশ্বের ওইসব অঞ্চলের অন্যতম যেখানে উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক এবং যেখানে নির্বিচারে বন উজড় হচ্ছে৷ কোনো অঞ্চলে নতুন সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হওয়া বা পুরনো সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার সব রকম পূর্বশর্তই এসইএ অঞ্চলে স্পষ্ট৷’’
তোউরিনহো বলেন, ‘‘গভীর জঙ্গল আসলে এক ধরনের ঢালের মত৷ যেটা বাইরের মানুষদের বন্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ বন্যপ্রাণী অনেক জীবাণু বহন করে যেগুলো নানা রোগব্যাধির কারণ৷ যখন আমরা বন টুকরো টুকরো করে ফেলি তখন সেটির গভীরে প্রবেশের রাস্তা তৈরি হয়৷ এটা টাইম বোমার মত৷ সময় শেষ হলেই বিস্ফোরণ ঘটে৷’’
নাদিয়া পন্টেস/এসএনএল/