বরিশালে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘটে মানুষের ভোগান্তি
৪ নভেম্বর ২০২২শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন ও অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে নগরীর সব সড়ক ছিল ফাঁকা৷ ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন, এমন কয়েকজনের সাথে কথা হয় ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের৷ ধর্মঘটের কারণে আয় বন্ধ থাকায় নতুন বাজার এলাকায় টেম্পু (আলফা) চালক খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘দুইদিনে অন্তত দুই হাজার টাকা আয় হতো আমার৷ বাংলাদেশের জনগণ এখন কি এতো বোকা আছে? তারা বোঝে না, কী কারণে সব কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে?’’
ধর্মঘটের কারণে বরিশালে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস ও তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে দুই একটি রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি৷ বন্ধ রয়েছে খেয়া পারাপারও৷ মোড়ে মোড়ে পুলিশ পাহারায় রয়েছে৷
সকালে বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সব কাউন্টার বন্ধ; বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ টার্মিনাল এলাকায় অন্য সময় মাহেন্দ্র-অটোরিকশা চালকদের হাঁকডাক থাকলেও শুক্রবার পরিবেশ ছিল শান্ত৷
বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাঁচ দফা দাবিতে শুক্র ও শনিবার বরিশাল থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাস মালিক গ্রুপ৷ নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের সকল রুটে বাস চলে৷ ধর্মঘটের কারণে এখন সব বন্ধ৷
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে অবৈধ কোনো যানবাহন চলতে পারবে না৷ কিন্তু ওই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ যান চলছেই৷ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি৷ তাই নথুল্লাহবাদ থেকে বাস ও মাইক্রোবাস বন্ধ রয়েছে৷’’
একই দাবিতে বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৮টি রুটের ১১২টি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান৷ বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে৷
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানিয়েছেন৷
বিডিনিউজকে কবির বলেন, ‘‘একটি লঞ্চে হামলার প্রতিবাদে ভোর থেকে বরিশাল-ভোলাসহ ১১টি রুটের ৩০টি লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে৷’’ যদিও লঞ্চ বন্ধের বিষয়ে মালিক বা শ্রমিক সমিতির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
একইভাবে বন্ধ রয়েছে বরিশাল-ভোলা, সদর উপজেলার তালতলী বাজার-পাতারহাট রুটের স্পিডবোট৷ নগরীর কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা, চরকাউয়া ও চাঁদমারী ঘাট থেকে খেয়া পারাপারও বন্ধ৷
ফিরোজ নামে এক যাত্রী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চাঁদমারী ঘাটে এসে খেয়া পারাপার বন্ধের খবর জানতে পারেন৷ ফিরে যাওয়ার সময় বলেন, ‘‘দেশের সবই আস্তে আস্তে বন্ধ হইয়া যাইতেছে৷ এহন দেহি খেয়াও বন্ধ৷ কী কইতে কী কইয়া আবার বিপদে পড়মু৷’’
কীর্তনখোলা নদীর ব্যস্ততম চরকাউয়া খেয়াঘাটে গিয়ে কোনো খেয়া দেখা যায়নি৷ ছোট্ট একটি মাছ ধরার নৌকায় পাঁচ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে দেখা গেলো তিনজনকে৷ তাদের মধ্যে লিমা নামের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, ‘‘চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম কিন্তু পরীক্ষা হয়নি৷ এখন কী করবো? তাই বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও ফিরে যাচ্ছি৷’’
এদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশেকে কেন্দ্রে করে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দলটির ‘বিপুল সংখ্যক’ নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বৃহস্পতিবার রাত থেকে অবস্থান করছেন৷ দুপুরে নেতাকর্মীদের খাবারের জন্য রান্নার আয়োজন চলছে৷ মাঠের চারপাশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা মিছিল করছেন৷
এবারের সমাবেশের প্রস্ততি কেমন জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘‘বাধা দেওয়ার যত চেষ্টাই করুক না কেন, আমাদের গণসমাবেশ সফল হবে৷’’
এনএস/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)