1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বসনিয়া থেকে কোথায় গেলেন কয়েকশ বাংলাদেশি?

আরাফাতুল ইসলাম ভেলিকা ক্লাদুসা, বসনিয়া থেকে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

২০২০ সালের নভেম্বরে ডয়চে ভেলের সংবাদকর্মীরা বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসা এলাকা পরিদর্শনকালে দেশটির সীমান্তবর্তী জঙ্গল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আটকে থাকা প্রায় ছয়শ বাংলাদেশির অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরেছিলেন৷

https://p.dw.com/p/470Mx
Bosnien Herzegowina | Velika Kladusa
বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসায় দুই বাংলাদেশি অভিবাসীর সাথে কথা বলছেন ডয়চে ভেলের আরাফাতুল ইসলাম (ছবিতে বাম দিকে)৷ ছবি: Arafatul Islam/DW

বসনিয়ার ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গল, সেখানকার মিরাল ক্যাম্প ও আশেপাশের পরিত্যাক্ত ভবনে দেড় বছর আগে প্রায় ছয়শ বাংলাদেশিসহ অনেক অভিবাসী ছিলেন৷ সে জায়গাটিতে এখন আর কেউ নেই৷ বছর দেড়েকের মধ্যে কোথায় গেলেন এই অভিবাসীরা?

গত কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে পৌঁছার চেষ্টা করছেন৷  অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপের সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস-এর তথ্যমতে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা৷

এসকল অভিবাসীদের একটি বড় অংশই ইটালি পৌঁছার চেষ্টা করে থাকেন৷ ইউরোপের বহিঃসীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্স-এর এই হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে অবৈধভাবে ইটালি প্রবেশের তালিকায় বাংলাদেশিরা রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে৷ 

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পৌঁছার লক্ষ্যে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অস্থায়ী ক্যাম্পে আটকে আছেন এমন অনেক বাংলাদেশি৷ সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে বসনিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন ডয়চে ভেলে বাংলার সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম ও  অনুপম দেব কানুনজ্ঞ৷

তারই অংশ হিসেবে বসনিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গলটি পরিদর্শনে গেলে ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের সাথে দেখা হয় কয়েকজন বাংলাদেশির৷

দেড় বছর আগে যখন ডয়চে ভেলের বাংলার সাংবাদিকেরা এ জঙ্গলটিতে যান তখন শত শত বাংলাদেশির সাথে তারাও ছিলেন সেখানে৷

এ দুই বাংলাদেশির দাবি, জঙ্গলটিতে থাকা ছয়শ বাংলাদেশির প্রায় সবাইই ইতিমধ্যে ইটালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন৷

সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের একজন আশরাফুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওরা তো সবাই চলে গেছে৷ ইটালি, ফ্রান্সে চলে গেছে৷ কেউ কেউ ট্যাক্সি গেমে, কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে চলে গেছেন৷’’

অভিবাসীদের ভাষায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পছন্দমতো রাষ্ট্রে পৌঁছানোর নাম ‘গেম'৷ সীমান্ত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দেয়ে এভাবে অবৈধভাবে পৌঁছানোর পুরো প্রক্রিয়াটিকে তারা ‘গেম মারা' বলে থাকেন৷ 

জানা গেছে, এমন ‘গেম মারতে' গিয়ে তারা পাচারকারীদের সহায়তা নেন৷ কেউ কেউ আবার নিজের চেষ্টায়ই এমন ঝুঁকি নিয়ে থাকেন৷

জঙ্গলে আটক থাকা প্রায় ছয়শ বাংলাদেশির মধ্যে আর মাত্র নয়জন আছেন জানিয়ে আশরাফুজ্জামান বলেন, তিনি নিজেও ‘৩০-৩৫ বার এমন গেম মারতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন৷' 

তাছাড়াও আটকে থাকা প্রায় ছয়শ বাংলাদেশির মধ্যে ৩০-৩৫ জনের একটি দল এখনো বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে আছেন বলে জানা গেছে৷  

যারা ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে পৌঁছেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ হয় কি না জানতে চাইলে আশরাফুজ্জামান বলেন, তাদের অনেকের সাথেই তার যোগাযোগ হয় এবং তারা ভাল আছেন৷

তবে তাদের অনেকেই দেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে না পারার কারণে ঝামেলায় আছেন বলে দাবি তার৷   

কেন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা?

আট বছর ধরে ইউরোপে পৌঁছার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের রাজু৷ বর্তমানে আটকে আছেন বসনিয়াতে৷ ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে আড়াই বছর ওমানে থাকার পর চার বছর ইরানে কাটান৷

কেন আট বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এমন চেষ্টা- জানতে চাইলে তিনি বলেন  ‘‘টেকা পয়সা কম, আছে কষ্ট৷ তারপর ফ্যামিলিরে দিলেও হয় না, নিজেরও হয় না৷ এ কারণে এই পথে রওয়ানা দিছি৷’’

এতো কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পৌঁছার চেষ্টা করার কি দরকার- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, ‘‘ফ্যামিলিকে সুখে রাখতে গিয়ে কষ্ট করা লাগে৷ বাংলাদেশে তো কাজ নাই যে তাদেরকে কাজ করে খাওয়াব৷ এ কারণেই এই পথে আসা৷’’

আর আশরাফুজ্জামান জানান, ২০১৮ সালে তিনি ইউরোপের পথে যাত্রা শুরু করেন৷ যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, প্রায় প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে তিনি বসনিয়া এসেছেন৷ চার বছর আগে যাত্রা শুরু করে তিনি ওমান থেকে ইরান হয়ে তুরস্কে পৌঁছান৷ তুরস্ক থেকে গ্রিস হয়ে সার্বিয়া এবং সবশেষ তিনি বসনিয়া এসে পৌঁছান৷

Bosnien Herzegowina | Velika Kladusa
প্রায় দেড় বছর আগে ভেলিকা ক্লাদুসার এ জঙ্গলে অবস্থান করছিলেন কয়েকশ বাংলাদেশিসহ অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ছবি: Arafatul Islam/DW

কেন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুজ্জামান বলেন,  ''বাংলাদেশে যদি ব্যবস্থা ভালো হতো তাহলে তো আসা লাগত না৷ মাস্টার্স পাশ করেও কাজ পাওয়া যায় না৷ তরুণেরা নিজে ঠিকে থাকবে বা ফ্যামিলিকে ঠিক রাখবে সেই ব্যবস্থা নেই৷’’

নিজেগেম মারতে’ শিখে গেছেন

ইটালি পৌঁছার লক্ষ্যে আশরাফুজ্জামান বসনিয়া থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ প্রথম দিকে দালালদের সহায়তায় গেম মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এক পর্যায়ে নিজেই গেম মারতে শুরু করেন বলে জানান তিনি

‘‘ইটালিতে পৌঁছার লক্ষ্যে বসনিয়া থেকে দালালদের সহায়তায় ১০ - ১৫ বার গেম মারার  চেষ্টা করেছি৷ যাইতে যাইতে শিখে গেছি কীভাবে যাইতে হয়৷ মোবাইলে লোকেশন দেখে হেঁটে হেঁটে চলে যাই৷''      

তবে ‘গেম মারতে' গিয়ে বার বারই স্লোভেনিয়াতে আটকে গেছেন তিনি৷ যে কারণে এত বার চেষ্টার পরও ইটালি পৌঁছাতে পারছেন না৷  

‘‘আমি বেশিরভাগই স্লোভেনিয়াতে ধরা খাইছি৷ স্লোভেনিয়াতে গাড়িতে উঠতে গিয়ে, গাড়িতে উঠার আগেই পুলিশ এসে, আবার কুকুর এসে ধরে ফেলছে৷’’

জানা গেছে, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া পুলিশ সীমান্ত পাহারায় তৎপর রয়েছে৷ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে নানা ধরনের নির্যাতনের মুখেও পড়তে হয় বলে দাবি অভিবাসীদের৷  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য