1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাংলাদেশের ভিক্ষুকের জীবনও অনেক ভালো’

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ লিপা, বসনিয়া থেকে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ইউরোপে প্রবেশের অপেক্ষায় বলকান রুটে বসনিয়ার লিপা অভিবাসী ক্যাম্পে বাস করা এক বাংলাদেশি ডয়চে ভেলের কাছে এভাবেই নিজের দুর্দশার বর্ণনা দিলেন৷

https://p.dw.com/p/46xWl
Bosnien Migrantenlager Lipa in der Nähe von Bihac
বসনিয়ার এই অভিবাসী ক্যাম্পটিতে দশজন বাংলাদেশি আছেন বলে জানা গেছে৷ ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW

বসনিয়া অ্যান্ড হ্যার্ৎসেগোভিনার ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল উনা-সানা ক্যান্টনে নবনির্মিত ক্যাম্পে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের একজন মোহাম্মদ মাইনুদ্দীন৷

চার বছর আগে ২০১৮ সালে দেশ ছাড়েন মাইনুদ্দীন৷ দালালদের হাত ধরে ইউরোপে পৌঁছার উদ্দেশে বছরের পর বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বসনিয়া পৌঁছান তিনি৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে থেকে যদি ম্যাসেজ নিতে চান, আমি মনে করি বাংলাদেশের ভিক্ষুকের জীবনও অনেক ভালো যারা বাই পথে আসে তাদের চেয়ে৷ আসলে বাস্তবতা অনেক কঠিন৷ আপনি পাহাড়ে চড়লেন৷ পুলিশের চেক আছে৷ পানি নেই৷ পাহাড়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয়৷ খাবার থাকলেও পানির জন্য খাবার খেতে পারবেন না৷ তখন, কেমন লাগে? আসলে যারা বাস্তবতার সম্মুখীন হয় তারাই বলতে পারবে কষ্টটা কেমন৷’’

শুধু মাইনুদ্দীনই নন, গত কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পৌঁছার চেষ্টা করছেন৷

অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপের সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস-এর তথ্যমতে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা৷

পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অস্থায়ী ক্যাম্পে আটকে আছেন এমন অনেক বাংলাদেশি৷ সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে বসনিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন ডয়চে ভেলে বাংলার সাংবাদিক অনুপম দেব কানুনজ্ঞ ও আরাফাতুল ইসলাম৷

জানা গেছে, বসনিয়ার লিপা ক্যাম্পে পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় তিনশ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন৷

মাইনুদ্দীন জানান, লিপায় অবস্থিত এ ক্যাম্পটিতে বর্তমানে দশজন বাংলাদেশি আছেন৷ তাদের অনেকেই বসনিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে ইটালি পৌঁছার চেষ্টা করছেন৷   

যেভাবে বসনিয়ায় পৌঁছালেন তারা

বাংলাদেশ থেকে কীভাবে বসনিয়া পৌঁছালেন এমন প্রশ্নের জবাবে লিপা ক্যাম্পে থাকা আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেন, ইটালি যাওয়ার ইচ্ছা তার৷ সে ইচ্ছা থেকেই তিনি বাংলাদেশ থেকে দুবাই তারপর ইরান হয়ে তুরস্কে আসেন৷ তুরস্ক থেকে গ্রিস হয়ে সার্বিয়া এবং সার্বিয়া থেকে বসনিয়া পৌঁছান তিনি৷ 

এভাবে আসতে অনেক কষ্ট হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রায় আট-নয় মাস ধরে বসনিয়া আছি এবং ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি৷’’

আর মাইনুদ্দীন জানান, দালালদের হাত ধরে  তার ভাষায় ‘জিয়ারত ভিসায়’ প্রথম ইরাকে আসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইরাকে পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি ইরান হয়ে তুরস্ক যাই৷ কিন্তু তুরস্কে আয়-রোজগারের পথ খুব একটা ভাল নয়৷ তাই সেখান থেকে গ্রিস, আলবেনিয়া হয়ে বসনিয়া এসে পৌঁছাই৷''

মাইনুদ্দীন এবং সালাউদ্দীন জানান, পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইটালিতে পৌঁছার লক্ষ্য তাদের৷

কষ্টের জীবন

বসনিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে নানা ধরনের কষ্টের মুখে পড়েছেন বলে জানান এ দুই বাংলাদেশি৷ তারা বলেন, রাতের পর রাত জঙ্গল পাড়ি দিয়ে পানি ও খাবারের অভাবে কষ্ট করে তারা এখানে এসে পৌঁছাতে পেরেছেন৷

বসনিয়া পর্যন্ত আসতে মোট চার বছর লেগেছে মাইনুদ্দিনের৷ তিনি বলেন, ইউরোপ অনেক সহজ মনে হয়েছিল৷ পাহাড়ে চড়তে হয়, সেই সাথে থাকে পুলিশের পাহারা৷ মাসের পর মাস এভাবে চলতে অনেক কষ্ট হয়৷

আর ক্যাম্পেও তাদের খাবারের কষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাত নিয়মিত খেতে পাওয়া যায় না৷ রুটি খেয়ে থাকতে হয়৷’’

অর্থনৈতিক বিষয়ে মাইনুদ্দীন জানান, দালালদের হাত ধরে টাকা আনাতে হয়৷ দালালদের হাত ধরে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাতে হলে অনেক টাকা দালালদের দিতে হয়৷     

‘‘দালালদের মাধ্যমে যদি আপনি দশ হাজার টাকা আনাতে চান তাহলে আপনার খরচ পড়বে ১৪ হাজার টাকা৷ অর্থাৎ চার হাজার টাকা দালালদের দিতে হয়৷’’

আর কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে  সালাউদ্দীন জানান, এখানে আসার পর যে কষ্ট হয় তা আগে জানলে তিনি এভাবে আসার চেষ্টা করতেন না৷

‘গেম মারতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতন’

গত আট নয় মাস বসনিয়ায় আছেন সালাউদ্দীন৷ এসময়ে বেশ কযেকবার তিনি ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে পুলিশের নজর এড়াতে পারেননি৷ 

‘‘প্রায় ৮-১০ বার গেম মারছি, কিন্তু ক্রোয়েশিয়া পুলিশের, মানে ধরা খেয়ে যাই পথে৷ এইখান থেকে যাইতে পারতেছি না, ইটালির দিকে৷’’

তাদের অভিযোগ, ক্রোয়েশিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ভয়ানক নির্যাতন সইতে হয়৷

মাইনুদ্দীন জানান, প্রায় মাস খানেক আগে তিনি সর্বশেষ ‘গেম মারার’ চেষ্টা করেছেন৷ গেম মারার বিষয়ে দালালরা সহযোগিতা করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্রোয়েশিয়ার পুলিশ তো অনেক মারধর করে৷ মারধর মানে তারা এমন মার দেয় যে ফিল্মের মারকে হার মানাবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান