সীমান্তে স্মার্ট বেড়া বসাচ্ছে ভারত
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮স্মার্ট বর্ডার ফেন্সিং প্রযুক্তি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সীমান্তের কিছু কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়েছে৷ ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী, বিএসএফের ওপর এই কাজের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা এই স্মার্ট ফেন্সিং প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখে বলেছেন, এই প্রযুক্তি খুবই কার্যকর প্রমাণিত৷ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজ্জু৷ তামিলনাড়ুর আরাক্কোনামে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী, সিআইএসএফের আঞ্চলিক ট্রেনিং সেন্টারে মহিলা কনস্টেবলদের দ্বিতীয় ব্যাচের পাসিং-আউট প্যারেডের পার্শ্ব বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভারতের একাধিক সীমান্ত এলাকা তারমধ্যে উপকূলবর্তী জলসীমা প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ৷
পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে, বিশেষ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সব থেকে বেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে৷ দিল্লি ঐসব অনুপ্রবেশপ্রবণ এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়িয়েছে৷ চীনের সঙ্গে অনুপ্রবেশ সমস্যা নেই৷ যেটা আছে সেটা হলো সীমান্ত ইস্যু৷ মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের অভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে আছে বিস্তর ফাঁকফোঁকর৷ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত ভিসা-মুক্ত, বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজ্জু৷
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরা চালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, জাল নোট, আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদকদ্রব্য পাচার রুখতে বিএসএফ আগামী বছরের মধ্যেই স্মার্ট-ফেন্সিংয়ের সঙ্গে কাজে লাগাবে মনুষ্য চালক-বিহীন আকাশযান ইউএভি৷ বিএসএফের মহা-নির্দেশক কে.কে. শর্মা সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়ে বলেন. কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএসএফের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷ আসামের ব্রহ্মপুত্র নদ বরাবর নদী-নালা অধ্যুষিত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ধুবড়ি সীমান্ত এলাকায় দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে কাঁটাতারের স্মার্ট সীমান্ত বেড়া বসানো হবে চলতি বছরের মধ্যেই৷
দেশীয় প্রযুক্তির এই স্মার্ট বেড়া চোরাচালান এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে কিভাবে কাজে লাগানো হবে, সে সম্পর্কে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার বলেন, ইনফ্রা-রেড রশ্মির সাহায্যে অবৈধভাবে মানুষ কিংবা গরু পাচারের গতিবিধি ধরা পড়বে৷ উপগ্রহ-ভিত্তিক সংকেত সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাবে কন্ট্রোল রুমে৷ সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কুইক-রেসপন্স টিম দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে৷ বর্তমানে এই কাজটা করা হয় বিএসএফের পেট্রল বোটের মাধ্যমে৷ কিন্তু নদনদীর গতিপথ পরিবর্তনশীল৷ পরিবর্তনের ফলে কাজটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷ চোরাচালানকারি এবং অনুপ্রবেশকারীরা সেই সুযোগটা কাজে লাগায়৷
সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মহা-নির্দেশক বলেন, আপাতত চারটি মনুষ্য চালকবিহীন আকাশযান কেনার অনুমতি চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে, যেগুলি মোতায়েন করা হবে ৪০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অতি স্পর্শকাতর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায়৷ পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচটি বিএসএফ ব্যাটেলিয়ান (মোট সদস্য পাঁচ হাজার) গড়ে তোলার অনুমতি চেয়েছে সরকারের কাছে৷ বিএসএফ প্রধান বলেন, সীমান্ত এলাকায় অপরাধ দমনে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-র সঙ্গে ভারতীয় বিএসএফের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই আন্তরিক৷ সীমান্ত অপরাধ দমনে বাংলাদেশিদের নিহত হবার সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ বর্তমান স্ট্র্যাটেজিতে তাই পরিবর্তন করা হবে না৷ করা হলে, অর্থাৎ আরও মারাত্মক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বই কমবে না, সেটা হবে দুই দেশের স্বার্থের পরিপন্থী৷
ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা রোধে ভারত-বাংলাদেশ একই সঙ্গে যৌথ অপারেশন চালাবে৷ কারণ, বিএসএফ পাল্টা গুলি চালালে বাংলাদেশিদের হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে৷ আশা করা যায়, এর ফলে পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ গবাদি পশু পাচার সম্পর্কে বিএসএফের মহা-পরিচালক বলেন, গবাদি পশু পাচারের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে৷ কয়েক বছর আগে যেখানে ২০ লাখের মতো গবাদি পশু পাচার হতো, বর্তমানে সেটা পাঁচ থেকে ছয় লাখে এসে দাঁড়িয়েছে৷ চোরাচালান রুখতে বিএসএফ অতি মাত্রায় তত্পর৷ পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি হতাহত হয় এবং বিএসএফের দু'জন অফিসার নিহত হয়৷ সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মাটির নীচে তিনটি সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পাওয়া যায়৷ এটা গুরুতর বিষয়৷ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে, বিশেষ করে জম্মু এলাকায় অনুরূপ সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র পাচার করা হয়, বলেন বিএসএফের ডিজি কে.কে. শর্মা৷
এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷