বাংলাদেশ কি পারবে?
১৫ নভেম্বর ২০১৭সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বের বড় ২৮টি প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকই নিকেল জাতীয় ধাতু উত্তোলনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করছে৷ জানা গেছে, বিশ্বের প্রতি ১০ জন শিশুর একজন শিশু শ্রমিক৷ আর তাদের অর্ধেকই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ তবে নব্বই দশকের পর শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা ১০ কোটি কমে গেছে৷
আইএলও প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, বিশ্বে ১৫ কোটি ২০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে৷ তাদের আড়াই কোটি শিশুকেই জোর করে কাজা বাধ্য করা হচ্ছে৷
ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘টাইম টু রিচার্জ' শীর্ষক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের ২৮টি বড় কোম্পানির অর্ধেকই শিশুদের নিকেল উত্তোলনে ব্যবহার করে৷ তারা জানায়, মাইক্রোসফট অথবা চীনের হুয়াওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিশুশ্রম রয়েছে৷ অ্যামনেস্টি জানায়, সাত বছরের শিশুও এমন জোরপূর্বক শ্রমের শিকার৷ নিকেল উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে তারা৷ স্মার্টফোন, গাড়ির ব্যাটারি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের চাহিদার কারণে সাধারণত নিকেল উত্তোলন করে থাকে তারা৷''
জার্মান গাড়ি শিল্পের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ রয়েছে৷ বিএমডাব্লিউ কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও, বাকি বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি৷ মানেনি আন্তর্জাতিক রীতিও৷ ত্রুটি রয়েছে ফল্কসভাগেন ও ডাইমলারের মতো প্রতিষ্ঠানেরও৷ অ্যাপেল, স্যামসাং, সোনির বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ এনেছে অ্যামনেস্টি৷
গাই রাইডার বলেন, শিশুশ্রম কমে যাওয়ার হার সম্প্রতি অনেক ধীর হয়ে গেছে৷ আমরা জানি না ভবিষ্যতে এই শ্রমবাজার কীভাবে পরিবর্তন হবে৷ আমরা কোনো শিশু শ্রমিক চাই না, কোনো আধুনিক দাসত্ব চাই না৷ সম্মেলনে ২০২৫ সালের বন্ধে শিশুশ্রম বন্ধ করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়৷
বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিক্স (বিবিএস) গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত হিসেবে জানায় বাংলাদেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ৷ কিন্তু ২০০১-২০০৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৫ লাখ৷ গত এক দশকে বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷
২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ১৪ বছরের নীচে কোনো শিশুকে কাজে নেয়া যাবে না৷ ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কাজে নেওয়া যাবে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেওয়া যাবে না৷ আর শিশুদের জন্য ৩৮ ধরনের ঝঁকিপূর্ণ কাজে নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়৷
তবে বিবিএস-এর জরিপেই বলা হয়েছে, ১৭ লাখ শিশু যারা পূর্ণকালীন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে তাদের মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ এছাড়া ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে যে শিশুরা সপ্তাহে এক ঘণ্টার বেশি কর্মে নিয়োজিত থাকে, তাদের সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫০ হাজার৷ সব মিলিয়ে দেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনোভাবে শ্রমের সাথে যুক্ত আছে৷
বাংলাদেশও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন (এসডিজির) লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম দূর করতে চায়৷ কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শাপলা নীড়-এর অ্যাডভোকেসি অফিসার আতিকা বিনতে বাকি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে শিশু শ্রমিক নেই বললেই চলে৷ কিন্তু চামড়া, মোটর গ্যারেজ, ওয়েল্ডিংসহ আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে আজও৷''
তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ‘ড্রপ আউট'-এর হার দেখলেই শিশুশ্রমের বাস্তব অবস্থা বোঝা যায়৷ শিশুদের একটা বড় অংশ কাজ করে ‘নন ফরমাল' গৃহশ্রমিক হিসেবে৷ তাদের প্রকৃত হিসাব কারুর কাছে নেই৷ ফলে প্রকৃত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি হবে৷ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে গৃহশ্রমিক হিসেবে শিশুদের নিয়োগ বন্ধের পরিকল্পনা করেছে৷ ২০১৫ সালে শিশুশ্রম বন্ধে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে৷ কিন্তু তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি৷ ২০১৮ সালে কিছু প্রকল্প আসছে৷ তখন থেকে হয়ত শিশুশ্রম কমবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শিশুশ্রম কমছে৷ তবে বিবিএস যে বলছে, এখন শিশু শ্রমিক ১৭ লাখ তা কীসের ভিত্তিতে বলছে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়৷''
ওদিকে শিশু অধিকার ফোরামের প্রধান এমরানুল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে এখন ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ ২০২১ সালের মধ্যে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বাইরে নিতে হবে৷ ২০২৫ সালে দেশে শিশু শ্রমিক থাকবে না৷ কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে যথেষ্ঠ উদ্যোগ নেই৷ ফলে আমি লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সন্দিহান৷ এ জন্য বাজেট এবং প্রকল্পও নেই৷ নেই শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়৷''
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই আমরা৷ তাই লিখুন নীচের ঘরে৷