বাংলাদেশ কি নিরাপদ?
১ অক্টোবর ২০১৬নিরাপত্তা নিয়ে লম্বা সময় আলোচনার পর বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দল৷ ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মোট পাঁচটি ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামছে দলটি, যার তিনটি একদিনের এবং দু'টি টেস্ট ম্যাচ৷ তবে ইংলিশ দলের দু'জন খেলোয়াড় এবং একটি সমর্থক গোষ্ঠী নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশে সফরে অংশ নেয়নি৷ গত জুলাইয়ে গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ বিদেশিসহ কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি নিহতের পর, এটাই দেশটিতে বিদেশিদের বড় ধরনের সফর৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস সেই হামলার দায় স্বীকার করে৷
জঙ্গি গোষ্ঠীর সেই বর্বর হামলা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল এবং অনেক পশ্চিমারাষ্ট্র তখন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকদের উপর বিভিন্ন সতর্কতা জারি করেছিল৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা সত্যিই আছে এবং সেটা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী৷ গুলশান হামলার পর আর কোনো বড় হামলার ঘটনা ছাড়া তিনমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সতর্কতা প্রত্যাহার করেনি৷
অনেক সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত
গুলশান হামলার পর সন্ত্রাসীদের দমনে কড়া অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ৷ বিভিন্ন সম্ভাব্য জঙ্গি আস্তানায় তাদের চালানো অভিযানে প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গি৷ ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে এক অভিযানে প্রাণ হারায় নয় সন্দেহভাজন, যারা অধিকাংশই শিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ আর ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আরেক অভিযানে প্রাণ হারায় তিন সন্দেহভাজন জঙ্গি, যাদের মধ্যে একজন অতীতে সিরিয়া গিয়েছিল এবং গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড' বলে দাবি করে পুলিশ৷
জিহাদিদের অনলাইন কার্যক্রম মনিটর করা সুইডেনে বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল মনে করেন, সম্ভাব্য জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের এ সব অভিযানে জিহাদিরা কোনঠাসা হয়ে গেছে এবং সামগ্রিকভাবে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷ তবে সন্দেহভাজন শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে না পারার সমালোচনা করেছেন তিনি৷
‘‘(গুলশান হামলার পর) পুলিশ এখনো কোনো শীর্ষ জঙ্গিকে জীবিত গ্রেপ্তার করতে পারেনি, যা বর্তমান সরকারের এক বড় ব্যর্থতা'', ডয়চে ভেলেকে বলেন খলিল এবং সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘অতীতে এক সরকার কিন্তু একটি স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের জীবিত গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছিল৷ পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়া সম্ভব হয়েছিল৷ তাদের জীবিত গ্রেপ্তার এই কাজে সহায়তা করেছিল৷''
‘‘কিন্তু বর্তমানে সেটা হচ্ছে না, যা উদ্বেগজনক'', বলেন খলিল৷
ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র মশিউর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, পুলিশের অভিযানের সময় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ইচ্ছাকৃতভাবে মারা হয়নি৷ ‘‘আমরা সন্দেহভাজনদের জীবিত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করি এবং সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে৷ কিন্তু তাদের যদি গ্রেপ্তার সম্ভব না হয় এবং তারা যদি আমাদের দিকে গুলি ছোঁড়ে তাহলে আমাদেরও পাল্টা গুলি ছোঁড়ার আইনি অধিকার রয়েছে'', বলেন তিনি৷
‘পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে'
পুলিশের অভিযান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তা ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনছে৷ ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকায় কর্মরত অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যান্ড্রু ইগল মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷
‘‘গুলশান হামলার পর মনে হয়েছিল, সম্ভবত কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারবে না৷ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক কতটা বড় সে সম্পর্কেও তখন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল না'', ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গিরা বাংলাদেশে কতটা প্রতিষ্ঠিত সে সম্পর্কে এখন আগের চেয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে৷ এবং আমি মনে করি, তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়৷''
গত আটবছর ধরে ঢাকায় থাকা ইগল অবশ্য স্বীকার করেছেন গুলশান হামলার পর অনেক বিদেশি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন এবং তারা শীঘ্রই আবার ফিরে আসবেন এমন আশা করা যায় না, কেননা এখনো যে কোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটার শঙ্কা রয়ে গেছে৷
‘‘কিন্তু আমার ধারণা, এরকম ভাবনা আজকাল বিশ্বের যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য'', বলেন এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক৷
খলিল অবশ্য মনে করেন না আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিদেশিদের বাংলাদেশে নিরাপদ বলা যেতে পারে৷ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘আল-কায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকায় এখনো সক্রিয় রয়েছে৷''
ঢাকায় গত ২৯ আগস্ট সংক্ষিপ্ত সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও জানিয়েছেন, তাঁর দেশ বিশ্বাস করে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে বাংলাদেশে সক্রিয় জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে৷ হাসিনা সরকার অবশ্য সেদেশে ইসলামিক স্টেটের কোনো অস্তিত রয়েছে বলে মনে করে না৷
এদিকে, ঢাকা সফররত ইংল্যান্ড দলের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ যে হোটেলে ইংলিশ দল রয়েছে, সেটির চারপাশে ট্যাংক এবং স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে৷ এমনকি প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের উদ্যোগে তৈরি বিশেষ বাহিনী কাজ করছে৷
‘‘ইংলিশ দল এবং তাদের সমর্থকরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন'', নিশ্চিত করেছেন পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান৷
আপনার কী মনে হয়? বাংলাদেশ কি বিদেশিদের জন্য আদৌ নিরাপদ? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷