মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করতে হবে এখনই!
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকের পর, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ সব মন্তব্য করেন৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাংসদরা মৃত্যুদণ্ড বন্ধের আহ্বান জানালে আইনমন্ত্রী তাঁদের এখনই আইনে পরিবর্তন আনা হবে না বলে জানান৷ এর মানে হচ্ছে, ইউরোপ থেকে যাওয়া অতিথিদের মুখে ঠান্ডা মাথায় হিসাব কষে চড় দেয়া, আর এটাও পরিষ্কার করে দেয়া যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ইসলামি নেতাদের বিচার চালিয়ে যেতে চান৷ আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন ও পরিচালনার রাজনৈতিক প্রভাব আর পুনর্বিবেচনা করে দেখতে চায় না সরকার৷
এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত৷ বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের কার্যক্রম চালাতে বাধা দেয়া হয়েছে, বিবাদী পক্ষের কয়েকজন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হয়নি এবং বাদী পক্ষের কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ছিল হাস্যকর ও জনশ্রুতির উপর ভিত্তি করে করা৷ জনশ্রুতির বিষয়টিতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, কেননা অপরাধ সংঘটন ও বিচার চলার মধ্যে অনেক সময় চলে গেছে৷ ট্রাইব্যুনাল যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পরিচালিত হচ্ছে না সেটি স্পষ্ট৷ তবুও বাংলাদেশ সরকারের বিরোধী পক্ষে থাকা ইসলামি নেতাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে৷
মৃত্যুদণ্ডের রায় অপরিবর্তনীয়৷ এই রায় যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া হয় তখন সেটা শহিদের জন্ম দেয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে৷ শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড জনপ্রিয় হলেও এর ধারাবাহিক ব্যবহার যে ইসলামি জঙ্গির প্রসার ঘটাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই৷ মার্কিন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জেমস ক্ল্যাপার সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে, হাসিনা সরকারের বিরোধীদের দুর্বল করার ধারাবাহিক চেষ্টা ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটাবে৷ তিনি ঠিকই বলেছেন৷ ইসলামি সন্ত্রাসীরা যে ২০১৩ সাল থেকে ১১ জন প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করেছে সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন ক্ল্যাপার৷ তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন৷
১৯৭১ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটানোর বাংলাদেশের যে ইচ্ছা তা যেমন বোধগম্য তেমনি মর্যাদার৷ তবে মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটি যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে আর যারা ইসলামের ভূমিকাকে বড় করতে দেখতে চায় তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের পথ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে৷ তাই আরও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ড বন্ধে রাজনৈতিক পরিসরে আলোচনা শুরুর প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷
বন্ধু, বাংলাদেশে কি মৃত্যদণ্ড বন্ধ করে দেয়া উচিত? আপনার কী মনে হয়? জানান নীচের ঘরে৷