বাংলাদেশে ‘গোপন-আটক’!
৬ জুলাই ২০১৭সংস্থাটি বলছে, ২০১৩ সাল থেকে দেশটির সরকার শত শত মানুষকে গোপন স্থানে আটক করে রেখেছ৷ গত বছরই ৯০ জনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে৷
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এই সংস্থাটি এভাবে আটক হওয়া ২১ জনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছে৷ যাদেরকে পরে হত্যাও করা হয়৷ আরও ন'জন কোথায় রয়েছে, সেটা জানা যাচ্ছে না৷
বাংলাদেশের নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সংস্থাটি একটি ফেসবুক ইভেন্ট করেছে৷ এতে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক ফেসবুক লাইভে এসেছেন৷
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অবাধে মানুষ আটক করে তাঁরা অপরাধী নাকি নির্দোষ-সেই সিদ্ধান্তও দিয়ে দিচ্ছে৷ শাস্তিও নির্ধরণ করছে, এমনকি তারা বেঁচে থাকতে পারবে কি-না, সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে৷
এ রকম নিখোঁজদের একজন সাজেদুর ইসলাম সুমন (৩৭)৷ যিনি দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷
সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম জানিয়েছেন, ব়্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন ব়্যাবের কর্মকর্তারা তাঁর ভাইসহ আরো পাঁচজনকে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর আটক করে৷ বিএনপির বয়কটের মধ্যে ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের এক মাস আগে এই ঘটনা ঘটে৷
তিনি বলেন, সেখানে ২০ জনের মতো নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন৷ তাঁরা দেখেছেন, তাঁর ভাই ও অন্যদের ব়্যাব ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলছে৷ তাঁরা এরপর আর ফিরে আসেননি৷
গত ৩ বছর এবং ৮ মাসে আমরা সব সংস্থার দপ্তরের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি৷ আমার ভাইয়ের খবর জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরেও গিয়েছি৷
ব়্যাব এবং পুলিশ এই নিখোঁজের সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে৷
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে৷ এর মধ্যে এ সব ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে জবাব আদায় করতে হারিয়ে যাওয়া ২২ বিএনপি কর্মীর মা মিলে গঠন করেছেন ‘মায়ের ডাক' নামে একটি সংগঠন৷
সানজিদা বলেন, অপহরণের অভিযোগের মধ্যে ফরহাদ মজহারকে পুলিশ উদ্ধার করেছে৷ আমরা তাই আশাবাদী৷ আমরা চাই, আমার ভাই ফিরে আসুক৷ যার দু'টো বাচ্চাও রয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮ জন নিখোঁজ হয়েছে৷ স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ৩২৬ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে৷
বিএনপি এবং তাদের প্রধান জোট সহযোগী জামাত ইসলামির ১০ হাজার নেতাকর্মী সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দল দু'টোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে৷
যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে নানা বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল৷ সামাজিক মাধ্যমে সংস্থাটির তুমুল সমালোচনায়মুখর হয়েছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দেশীয় সহযোগীদের হাতে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়৷
সমালোচকদের অভিযোগ, সংস্থাটি একাত্তরে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷