বাংলাদেশে ‘নিখোঁজ' হওয়ার ঘটনা তদন্তের তাগিদ
২০ মার্চ ২০১৫গত ১০ই মার্চ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ উত্তরার একটি বাসা থেকে ‘নিখোঁজ' হন৷ তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের দাবি, তাঁকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ-র এশিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিরোধী দলের সদস্যের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তদন্তে ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস আছে বাংলাদেশের সরকারের৷ তাই সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন৷''
এইচআরডাব্লিউ বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ই মার্চ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সর্বশেষ দেখা যায়৷ ঐ দিন রাতে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে কিছু লোক তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ পরিবার এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও, পুলিশ এবং ব়্যাব উভয় বাহিনীই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে৷
সংস্থাটি বলছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ‘নিখোঁজ' হওয়ার ঘটনাগুলো তালিকাভুক্ত করেছে৷ ২০১২ সালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানাতেও ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
সংস্থাটির কথায়, ‘‘প্রথমে অস্বীকার করলেও ২০১৪ সালের মে মাসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যার সঙ্গে ব়্যাব-এর সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়৷ আর সেই তদন্তে ঘটনাটির সঙ্গে ব়্যাব-এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়াও যায়৷''
এইচআরডাব্লিউ বলছে, বাংলাদেশে এ বছরের শুরু থেকেই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সহিংসতায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো কয়েকশ'৷ সারাদেশে ধরপাকড় চালিয়ে বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে আটক করেছে সরকার৷
গত বছরের জানুয়ারি মাসের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধীদের দীর্ঘদিন ধরে মতানৈক্যের কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছে এইচআরডাব্লিউ৷
তারা বলছে, নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে কয়েকশ' মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ হয়েছেন৷
সংগঠনটির এশিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘অনেকে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা স্বীকার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এমন অনেক ঘটনারই যথার্থ তদন্তের প্রমাণ নেই৷ এমনকি এ সব ঘটনায় দায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়নি৷''
ব্র্যাড অ্যাডামসের মতে, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটিও এই নিয়মের একটি অংশ হয়ে উঠেছে৷''
তাই বাংলাদেশে চলমান হরতাল-অবরোধের মাঝে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের ‘নিখোঁজ' হওয়ার প্রেক্ষাপটে, অতীতের ঘটনাগুলোসহ সব ধরণের নিখোঁজের ঘটনা তদন্ত করার তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
এদিকে শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, গত ১০ দিনেও তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ সরকারের মন্ত্রী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ নিয়ে নানারকম হাস্যকর কথা বলছেন৷ তাই তাঁকে উদ্ধারে এফবিআই অথবা ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার দাবি জানান তিনি৷
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের আমলেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়৷ তাঁকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ আর এখন সালাহ উদ্দিনকে গুম করা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে খুঁজে বের করতে পারছে না৷ তাঁকে খুঁজে বের না করলে এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে৷''