ফরমালিন বিরোধী অভিযান
১০ জুন ২০১৪বাংলাদেশে এখন আমের মৌসুম৷ কিন্তু এ মৌসুমে যে সব আম পাওয়া যাচ্ছে, চার প্রায় শতভাগ বিষাক্ত ফরমালিন মিশ্রিত৷ লিচুর ক্ষেত্রে বিষাক্ত ফলের পরিমাণ ৮০ শতাংশ৷ দেশি-বিদেশি অন্যান্য ফলের অবস্থাও এক৷ এমনকি ‘ফরমালিন মুক্ত বাজার' থেকে আম ও লিচু কিনে পরীক্ষা করেও তাতে মাত্রারিক্ত পরিমাণে ফরমালিন পেয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন৷
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পরীক্ষাগারের ঐ পরীক্ষায় দেখা গেছে আম শতকরা ৯৪ ভাগ, লিচু ৯০ ভাগ এবং জামগুলি ১০০ ভাগ ফরমালিন যুক্ত৷''
মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ফরমালিন আজকাল ফল-মূল এবং শাক-সবজি তাজা রাখার জন্য বাংলাদেশে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি-র অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান জানান, ‘‘সাধারণত ফলে ০.০৩ থেকে ০.১৫ পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন) ফরমালিন স্বাভাবিকভাবেই থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে ঢাকার বাজারে আম, লিচু, জাম থেকে শুরু করে আমদানি করা ফলে ৩.৫ থেকে ৪৬ পিপিএম ফরমালিন পাওয়া যাচ্ছে – যা ভয়াবহ৷ এ সব ফল খেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই, কেউ কেউ আবার তাৎক্ষণিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা৷
ওদিকে জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট আমসহ দেশি-বিদেশি ফলের ১০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করে উচ্চ মাত্রার ফরমালিন পেয়েছে৷ আসলে তাদের পরীক্ষায় ফরমালিনমুক্ত কোনো ফলই পাওয়া যায়নি৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ জানান যে, তারাও বাজার থেকে নানা ধরণের মৌসুমী ফল কিনে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে উচ্চ মাত্রার ফরমালিন পেয়ে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আগামী কাল, অর্থাৎ বুধবার থেকে তারা ঢাকার প্রবেশ পথসহ ৮টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ফরমালিন বিরোধী অভিযান শুরু করবেন৷
তিনি জানান, ফরমালিন শনাক্ত করার কিট দিয়ে কাজটি করা হবে৷ এছাড়া ফলবাহী যানবাহন থামিয়ে তা পরীক্ষাও করা হবে৷ কোনো ফলে সহনীয় প্রাকৃতিক মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ২,০০,০০ টাকা জরিমানা এবং ফল বাজেয়াপ্ত করে তা ধ্বংস করা হবে৷
অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, ফল-মূল এবং খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানোর বিরুদ্ধে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে সরকার৷