জার্মানের চোখে বাংলাদেশ
৮ ডিসেম্বর ২০১৫বলছি সিগফ্রিড স্মিড্ট-এর কথা৷ প্রথমবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন সেই ১৯৮৯ সালে৷ সেবার সেদেশ ত্যাগ করেছিলেন আর কখনো না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে৷ কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা যায়নি৷ বরং পরবর্তীতে নিয়মিতই গেছেন বাংলাদেশে৷ এখন প্রতিবার ফেরার সময় বিমানবন্দরে নাকি চোখের পানি ফেলেন তিনি৷ দেশটাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন মধ্য ইউরোপের এই শিক্ষক, যাঁর শখ ছবি তোলা৷
সিগফ্রিড, যাঁর ডাক নাম সিগি, বাংলাদেশের মানুষের, সমাজের, প্রকৃতির, স্থাপত্যের অসংখ্য ছবি তুলেছেন৷ বাঙালির উষ্ণ আতিথিয়তা তাঁকে স্পর্শ করেছে গভীরভাবে৷ ছবি তোলার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি স্মরণ করেন সেদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দুর্দশার কথা৷ প্রথমদিকে বাংলাদেশে গিয়ে যখন দেখেছেন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রাস্তায় চাকার মতো ঘুরে ঘুরে যাতায়াত করে, সহ্য করতে পারেননি৷ হাতে ক্যামেরা থাকলেও সেই দৃশ্যের ছবি তাঁর তোলা হয়নি৷ বরং সেই স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে দিনের পর দিন৷ পরে অবশ্য অভ্যস্থ হয়েছেন৷
সিগির ভিডিও সাক্ষাৎকার দেখতে ক্লিক করুন নীচের লিংকে:
শুক্রবার হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দুপুরে' নিজের তোলা বাংলাদেশের কিছু ছবি প্রদর্শন করেন সিগি৷ তিনি মনে করেন, পর্যটন খাতে বাংলাদেশের সম্ভবনা অনেক৷ দেশটির রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত৷ সেই সৈকতের কিছু অসাধারণ দৃশ্য তিনি ক্যামেরাবন্দি করেছেন৷ গিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে৷ তবে সেখানে বিদেশিদের যাতায়াতে বিশেষ অনুমতি লাগে, যা তাঁর পছন্দ হয়নি৷ তাঁর কথায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা গেলে পর্যটন খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে৷
সিগির ছবি মুগ্ধ চোখে দেখেছেন ‘বাংলাদেশ দুপুরে' আগত অতিথিরা৷ জার্মান ভাষায় দেয়া তাঁর প্রজেন্টেশনের তাৎক্ষণিক বাংলা ভাষান্তর করেন ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আব্দুল্লাহ আল-ফারূক৷ সিগি জানান তাঁর হতাশার কথাও৷ তাঁর পরিচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুনি হয়েছেন ২০১২ সালে৷ সেই হত্যাকাণ্ডের আজও বিচার হয়নি৷ এখন কেউ সেই দম্পতি কথা বলেও না৷ সাংবাদিক দম্পতির এই পরিণতি কষ্ট দেয় তাঁকে৷ সেই কথা তিনি উল্লেখ করেন প্রদর্শনীর সময়৷
বর্তমানে অবসর জীবনের অনেকটা সময় সিগি কাটান ছবির পেছনে৷ ম্যানুয়াল ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো ডিজিটাল করেছেন তিনি৷ সেগুলো সম্পাদনা করেছেন৷ এখন দশ হাজার বাংলাদেশের ছবি, যেগুলো তিনি হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটে দিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলোর ক্যাপশন লিখছেন৷ সিগি জানান, বাংলাদেশে থাকা প্রতিটি দিনের স্মৃতি তিনি তাৎক্ষণিক লিখে রেখেছিলেন ডায়েরিতে৷ সেই ডায়েরি এখন তাঁকে ছবির ক্যাপশন লিখতে সাহায্য করছে৷
সিগি আশা করছেন, তাঁর তোলা ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেবে৷ দেশটি সম্পর্কে বিদেশিদের জানায় এখনো অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে৷ সেই ঘাটতি ছবি দিয়ে কিছুটা হলেও পুরণ করতে চান এই শখের আলোকচিত্রী৷
সিগিকে আপনি কী কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷