বাংলাদেশে লকডাউন কতটা কার্যকর
২৪ এপ্রিল ২০২০অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির৷
উন্নত দেশগুলোর মতো করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লকডাউনকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু প্রায় একমাস ধরে চলা এ অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিতে সীমাহীন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷
দুর্বল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো এবং নাজুক স্বাস্থ্যনীতির কারণে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব ক্ষেত্রেই চরম সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে৷ হতদরিদ্র মানুষ লকডাউন ভেঙে ত্রাণ বা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামছেন, কখনো জনগণ ধর্ম ও রাজনীতির নামে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে জনসমাগমের মাধ্যমে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন৷ পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে করা হচ্ছে নিষ্ঠুর পরিহাস৷
‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে লকডাউনের কারণেই করোনা পরিস্থিতি এখনো মারাত্মক সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি৷
তিনি বলেন, ‘‘যদি সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়, তবে ব্যাপক জনগোষ্ঠী অল্প কয়েকদিন অসুস্থ থেকে এটাকে সামাল দিয়ে উঠতে পারবে৷ অনেকেই এখন এ পদ্ধতির কথা বলছেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এই সময় যত মানুষ অসুস্থ হতেন, তাদের চাপ সামলানোর মতো অবস্থা আমাদের দেশে নেই৷ অন্যান্য অসুস্থতার রোগীরাও তখন চিকিৎসা পাবেন না৷’’
এ বিষয়ে নুরুল কবির বলেন, ‘‘লকডাউনের লক্ষ্য মূলত সংক্রমিত লোকজনকে এক জায়গায় আটকে রাখা এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের আলাদা করে ফেলা৷ কিন্তু আমাদের দেশে পরীক্ষার হার অনেক কম৷ জনগণকে শুরুতে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ভুল বা অন্যায়ভাবে আস্বস্ত করা হয়েছে৷ এখন লকডাউনে কর্মহীন মানুষ খাদ্যাভাবে মরতে বসেছে৷’’
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সামর্থ্যে অনেক ঘাটতি রয়েছে৷ উন্নত দেশের অনুকরণে দেশ ‘লকডাইন' করে দেওয়া তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে নুরুল কবির বলেন, সামর্থ্যের ঘাটতির কারণে লকডাউন যে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা সম্ভব না সেটা এখন প্রমাণিত৷’’
তবে তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারেননি নাঈমুল ইসলাম খান৷ বরং তিনি বলেন, ‘‘সামর্থ্যের ঘাটতির কারণেই লকডাউন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল৷ এর ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার গতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা আটকে রাখা গেছে৷ এই সময়ে সরকার করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা যেমন বাড়াতে পেরেছে, তেমনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত করতে পেরেছে৷’’
দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে মানবকল্যাণে রাজনৈতিক কর্মীদের অংশগ্রহণ একেবারে নেই বলেই মনে করেন নুরুল কবির৷ বলেন, ‘‘দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে ভোটের রাজনীতি না থাকায় এমনটা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোতে এখন কোনো আদর্শ নেই৷ তারা পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে৷ ফলে এরকম দুর্বিষহ অবস্থায়ও ত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটছে৷’’
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘পৃথিবী নতুন একটি সংকট মোকাবেলা করছে৷ সরকার সংকট উত্তরণের চেষ্টা করছে৷ কিছু ভুল-ত্রুটি সরকারের আছে৷ গণমাধ্যমের দায়িত্ব এই ভুল তুলে ধরা৷ কিন্তু তা নিয়ে আতঙ্ক সৃ্ষ্টি করা এই সময়ে একদমই উচিত নয়৷’’
এসএনএল/এসিবি