1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় ‘বড় বাধা’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

৩১ অক্টোবর ২০২১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আবারো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা৷ তাদের মতে এই আইনের কারণে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা ‘নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের’ মুখে রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/42PCN
ফাইল ছবিছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

শনিবার ঢাকায় ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ, গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক আলোচনায় দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা কথা বলেন৷ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে৷’’ তিনি আদালত বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, ‘‘আপনারা দয়া করে একটু দেখুন, কিছু কিছু আইন আছে সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে৷’’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানির মামলার আইনসহ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা তৈরি করে এমন সব আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি৷

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়েই সংবাদমাধ্যমের পথচলা কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, এখনো নেই৷ এই সময়ে গণমাধ্যমের সংখ্যা ও গুণগত সম্প্রসারণ হয়েছে সত্য, কিন্তু পেশাগত ঐক্যের স্বপ্ন ক্রমেই ফিকে হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, সাংবাদিকতার যে সুমহান ব্রত শত বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল, তাতেও চিড় ধরেছে৷’’

কে কখন গ্রেপ্তার হবেন বলা যায় না
সম্পাদক পরিষদের আয়োজিত এই আলোচনা সভায় ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বক্তব্য রাখেন৷ তিনি রোববার ডয়চে ভেলের কাছে ওই দিনের আলোচনার সারাংশ তুলে ধরেন৷ বলেন, ‘‘সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জনের সাথে আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করেছি৷ অনেক চ্যালেঞ্জই আছে৷ কিন্তু এই সময়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা৷ আমরা মনে করি এটা এখন খড়গের মতো চেপে আছে৷ বাংলাদেশে বিশেষ করে তৃণমূলে বহু সাংবাদিক এই আইনটির শিকার হচ্ছেন৷ গ্রেপ্তার হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ এই আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি৷ এই আইনে কখন কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কে গ্রেপ্তার হবে তা বলা যায় না৷’’

শ্যামল দত্ত

আইনটি করার সময় এর কিছু ধারার বিরোধিতা করেছিলেন সাংবাদিকরা৷ তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, কিছু ধারা সংশোধন হবে৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি নিজে আইনজীবী হিসেবে তাদের পক্ষে দাঁড়াবেন বলেও জানান৷ শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীর ওই কথার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না৷ তথ্য প্রযুক্তি আইনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি ছাড়া মামলা নেয়া যাবে না৷ তাও কার্যকর হয়নি৷’’

বিভিন্ন সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী৷ এ বিষয়ে সম্প্রতি কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটির ‘অপব্যবহারের’ কথা স্বীকার করেন৷ এই বিষয়ে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের সঙ্গে সরকার আলোচনা করছে বলেও জানান৷

আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশে৷ পরে এর প্রতিক্রিয়া ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করি৷ কে কী আপত্তি করল না করল, সেটা গৌণ বিষয়৷’’

এর জবাবে শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘এটা কোনো গৌণ বিষয় নয়৷ তিনি যদি বলেন এটা অপব্যবহার হচ্ছে না তাহলে যারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন তাদের ইনডেক্সগুলো দেখতে পারেন বাংলদেশের অবস্থান সেখানে কোথায়৷’’

তথ্য উপাত্ত কী বলছে?
সংবাদমাধ্যম ও বাক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিক্যাল-১৯ এর হিসাবে, ২০২০ সালে অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলায় ৭৫ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে৷ কারাগারে পাঠানো হয়েছে ৩২ জনকে৷ এই সময়ে ডিজিটাল আইনে মোট মামলা হয়েছে ১৯৭টি৷ আসামি করা হয়েছে ৩৬৮ জনকে৷

চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে ২৫টি৷ আসামি করা হয়েছে ৪৮ জনকে৷ গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জনকে৷ এই সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ১৮৮টি৷ আসামি করা হয়েছে ৩৫৩ জনকে৷

আর্টিক্যাল-১৯ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার ৫১টি করেছে পুলিশ ও র‌্যাব৷ ৭৯টি করেছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা৷ ১৩০টি মামলা ভুয়া তথ্যের ওপর করা হয়েছে৷ ওইসব মামলার কোনো ধরনের ভিত্তি নেই৷ শতকরা হিসেবে এই ধরনের মামলা ৬৯ ভাগ৷

রুক ফয়সাল

আরো দুইটি আইন হচ্ছে
আর্টিক্যাল-১৯ এর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘(ডিজিটাল নিরাপত্তা) আইনটি করাই হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য৷ যাদের প্রতিকার পাওয়া দরকার তাদের জন্য নয়৷ আইনের দরকার আছে৷ কিন্তু সেটা করতে হবে ভুক্তভোগীদের জন্য৷ আমাদের লন্ডন অফিস এই আইনের একটা বিশ্লেষণ করেছে৷ সেটা আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘে পাঠিয়েছি৷ আমার ধারণা সরকার এটা নিয়ে জাতিসংঘের সাথে কথা বলছে৷ কিন্তু সরকার এরমধ্যে আরো দুইটি আইন করার কথা বলছে৷ একটি হলো স্যোসাল মিডিয়া কন্ট্রোল করার আইন৷ আরেকটি হলো ডিজিটাল ডাটা প্রটেকশন আইন৷ এই দুইটি আইনও সাধারণ মানুষের বিপক্ষে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলাগুলো হয়রানিমূলক৷ তাই যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে তাদের শাস্তির জন্য আলাদা আইনের দাবী করছি আমরা৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর প্রকাশিত গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্স বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের দায়মুক্তি সূচকের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন৷  তাদের সদ্য প্রকাশিত ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম৷ ফারুক ফয়সাল মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন তলানীতে৷’’

গত মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান