বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ ড্রাইভারের লাইসেন্স ভুয়া
১৪ মে ২০১২সাংবাদিক বিভাস চন্দ্র সাহাকে শুক্রবার ঢাকায় চাপা দেয় বৈশাখী পরিহনের একটি বাস৷ সেই বাসের ড্রাইভার ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়৷ রোববার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে স্বীকার করে নাম স্বাক্ষর করা ছাড়া সে আর কোন লেখা-পড়া জানেনা৷ টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে৷
অবাক করা ব্যাপার হল এইসব লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিদের লাইসেন্স দেয় খোদ সরকারী সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ৷ ১৯৯০ সালে ১ লাখ ৮৯ হাজার ড্রাইভারকে কোন পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়৷ তারপর এই ধারা অব্যাহত থাকে৷ আর বিআরিটএ'র হিসাব অনুযায়ি দেশের ৫ লাখ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়া বা জাল৷ যা মোট ড্রাইভারের শতকরা ৮০ ভাগ৷ তারা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে৷ আর বিআরটিএ নিচ্ছে না কোন ব্যবস্থা৷ স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু মনে করেন এইসব ড্রাইভারদের দুর্ঘটনার কারণে কারোর মৃত্যু হলে তা হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত৷ দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় দুর্ঘটনার পরিবর্তে আইন সংশোধন করে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলার বিধান করা উচিত৷ কিন্তু তা করতে গেলে নানা চাপ আসে৷
বুয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে এখন যেসব ড্রাইভার গাড়ি চালান তাদের ৬০ ভাগই এক বা একাধিক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন৷ এর কারণ তাদের অদক্ষতা এবং ন্যুনতম পড়াশুনার অভাব৷ এমনকি তারা সড়ক চিহ্নগুলোর মানে বোঝেন না৷ তবুও এদের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছেন শ্রমিক নেতা এবং নৌ পরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান৷ তিনি আগে বলেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পড়াশুনার দরকার নেই , ছবি চিনলেই হবে৷ তাকে এ বিষয়ে আবার প্রশ্ন করলে তিনি এবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান৷
বিভিন্ন সময় সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইনের উদ্যোগ নিলে এ পর্যন্ত অন্তত ১০ বার পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকে সারা দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে তা প্রতিহত করে৷ তাদের সঙ্গে সব সময়ই থাকে স্বার্থভোগী একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ৷ এর ফলে বাড়ে দুর্ঘটনা, বাড়ে অদক্ষ এবং ভূয়া লাইসেন্সধারী চালক৷ আর বাড়তে থাকে বিভাস চন্দ্র সাহার স্ত্রীর মত স্বজন হারানো আরো অনেকের কান্না৷
প্রতিবেদন: হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম