সাংঘাতিক বছর
১৯ ডিসেম্বর ২০১২‘২০১২ ছিল চরম প্রাণঘাতী এক বছর' – অকপটে সেকথা স্বীকার করেছেন উলরিক গ্রুসকা৷ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক সংগঠন রিপোটার্স উইদাউট বডার্সের (আরএসএফ) কর্মকর্তা তিনি৷ প্রতিষ্ঠানটির সদ্য প্রকাশিত বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিত্যদিনের কাজ করতে গিয়ে চলতি বছর প্রাণ হারিয়েছেন ১৪১ সাংবাদিক, ব্লগার এবং গণমাধ্যমকর্মী৷ নিহতদের মধ্যে ৬ জন গণমাধ্যমকর্মী, ৪৭ জন ব্লগার, যাঁদের আরএসএফ বলছে ‘সিটিজেন জার্নালিস্ট'৷ অন্যদিকে, ৮৮ সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন দায়িত্ব পালনের সময়৷
আরএসএফ-এর বিবেচনায়, ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক নিহতের সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ৷ চলতি বছর নিহত সাংবাদিকদের অনেকে যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সময় কিংবা বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ কেউ কেউ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন৷
আরএসএফ-এর এর প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে মিশরের সাংবাদিক আল হুসাইনি আবু দিয়াফের কথা৷ ৩৩ বছর বয়সি এই ফটোসাংবাদিক ডয়চে ভেলে অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং তিনি কাজ করতেন আল-ফাগর পত্রিকায়৷ চলতি ডিসেম্বর মাসে কায়রোর প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে মুরসি সমর্থক এবং বিরোধীদের সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি, মারা যান ছয়দিন পর৷
ব্লগার নিহতের ক্ষেত্রে ভয়ংকর এক চিত্র ফুটে উঠেছে আরএসএফ-এর প্রতিবেদনে৷ ২০১১ সালে প্রাণ হারায় পাঁচজন ব্লগার৷ অথচ ২০১২ সালে এখন অবধি এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে৷ এঁদের মধ্যে ৪৪ জনই মারা গেছেন সিরিয়ায়৷ প্রতিষ্ঠানটির মতে, সিরিয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুকূপ৷ আরব এবং ইসলামি বিশ্ব সম্পর্কিত পত্রিকা জেনিথ ম্যাগাজিনের সম্পাদক নিলস বুটচার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সিরিয়ার সাংবাদিকরা মূলত ক্রসফায়ারে প্রাণ হারাণ৷ সেদেশের বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক মনে করে না৷ অনেক ইসলামপন্থী দল রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপর পরিকল্পতিভাবে হামলা করছে, তাঁদেরকে অপহরণ এবং হত্যা করেছে৷''
প্রসঙ্গত, রিপোটার্স উইদাআউট বডার্স সিরিয়ার সাংবাদিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট মাজান দরবেশকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে৷ সিরিয়ায় বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখায তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়৷ গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সিরিয়ায় কারাবন্দি আছেন দরবেশ৷ কারাগারে তাঁকে নিয়মিত নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে আরএসএফ৷