বার্লিনকে ‘নিজের চরকায় তেল' দিতে বললো তুরস্ক
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭গত সপ্তাহে যে দু'জন জার্মান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, বলে সোমবার জানায় বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আইনজীবীর কাছ থেকে এই ‘‘ইতিবাচক খবর'' পাওয়া গিয়েছে, বলে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে যোগ করা হয়৷
এর মাত্র একদিন আগে তুর্কি কর্মকর্তারা বার্লিনকে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো থেকে বিরত থাকতে বলেন৷ ইতিপূর্বে খবর বেরোয় যে, সংশ্লিষ্ট দু'জন জার্মান নাগরিককে ‘‘রাজনৈতিক কারণে'' গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
তুরস্কের আনাদোলু সংবাদ সংস্থার বিবরণ অনুযায়ী তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু জার্মানিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, এটা জার্মানির ব্যাপার নয় – তিনি যুগপৎ জার্মান সরকারের তীব্র প্রতিক্রিয়াকে উপেক্ষা করেন৷
‘‘আমরা যখন (সামরিক অভ্যুত্থানের একজন যড়যন্ত্রকারীকে) গ্রেপ্তার করি, তখন জার্মানি উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু আমরা কি করতে পারি?'' আনাদোলুর বিবরণ অনুযায়ী চাভুসোগলু মন্তব্য করেছেন৷ ‘‘এটা একজন তুর্কি নাগরিকও বটে, কিন্তু (জার্মানি) জানতে চায়, তোমরা আমাদের নাগরিককে গ্রেপ্তার করছ কেন?''
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে প্রায় ৫০,০০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৫৫ জন জার্মান নাগরিক হিসেবে জ্ঞাত এবং সেই ৫৫ জনের মধ্যে ১২ জনকে ‘‘রাজনৈতিক বন্দি'' হিসেবে ধরে রাখা হয়েছে, বলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
সর্বাধুনিক গ্রেপ্তারিগুলি ঘটে গত সপ্তাহের শেষে, যখন দু'জন জার্মান নাগরিককে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের আন্টালিয়া বিমানবন্দরে আটক করা হয়৷ ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, বলে সন্দেহ করা হচ্ছে – বলে জানিয়েছে তুরস্কের দোগান সংবাদ সংস্থা৷
গ্রেপ্তারকৃত দু'জন ব্যক্তি তুর্কি নাগরিক, বলে জানিয়েছেন আংকারা সরকার; কিন্তু শুক্রবার জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে যে. সংশ্লিষ্ট দু'জনের শুধু জার্মান পাসপোর্ট ছিল, বলে বার্লিনের বিশ্বাস৷
চাভুসোগলুর মন্তব্যের আগের দিন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ঐ দু'জন জার্মান নাগরিকের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জার্মান বিধায়কদের তাদের ‘‘নিজের চরকায় তেল'' দিতে বলেন৷
জার্মানি তুরস্কের ইইউ সদস্যতা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা বাতিল করতে প্রস্তুত
গত বছরের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ও তার ফলশ্রুতি হিসেবে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে তুর্কি সরকারের দমন অভিযান যাবৎ বার্লিন ও আংকারার মধ্যে সম্পর্কে গুরুতর অবনতি ঘটেছে৷ জার্মান ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকার ইস্তানবুল সংবাদদাতা ডেনিজ ইউচেল ও জার্মান মানবাধিকার আন্দোলনকারী পেটার স্টয়েডনার-এর গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷
রবিবার সন্ধ্যায় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎসের মধ্যে টেলিভিশন বিতর্কে ম্যার্কেল ঘোষণা করেন যে, তিনি তুরস্কের ইইউ সদস্যতা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা বাতিল করার জন্য সচেষ্ট হবেন৷ তুরস্ক কখনো ইইউ-তে যোগ দেবে ও তা কোনোদিন ঘটবে বলে তিনি মনে করেন না – ম্যার্কেল যোগ করেন৷
গত সপ্তাহে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলকে বলতে শোনা যায় যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান যতদিন তুরস্কের নেতৃপদে রয়েছেন, ততদিন তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের কোনো প্রশ্ন ওঠে না৷
‘‘এর্দোয়ান সরকারের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক কোনোদিন ইইউ-তে যোগদান সংক্রান্ত আন্তরিক আলাপ-আলোচনা চালাতে পারবে না, কেননা উনি তুরস্ককে ইউরোপ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন'', গাব্রিয়েল জার্মান জেডডিএফ টেলিভিশনকে বলেন৷ ‘‘কিন্তু উনি জার্মানি ও তুরস্কের তুর্কিদেরএই ধারণা দিতে চান যে, আমরাই সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছি'', গাব্রিয়েল মন্তব্য করেন৷
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে জার্মানি তুরস্কের প্রতি তার মনোভাব আরো কড়া করেছে৷ গত জুলাই মাসে গাব্রিয়েল জার্মান সরকারের তরফ থেকে তুরস্ক ও এর্দোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে এ যাবৎ সবচেয়ে কড়া বিবৃতি দেন৷ তুরস্কের প্রতি জার্মানির নীতির ‘‘পুনর্বিন্যাস''-এর অঙ্গ হিসেবে গাব্রিয়েল জার্মান নাগরিকদের তুরস্ক যাত্রার সময় অতীব সাবধান থাকার পরামর্শ দেন ও জার্মান কোম্পানিদের তুরস্কে বিনিয়োগ বা ব্যবসা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন৷
এসি/ডিজি