বার্লিনালে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩মুজিচ'এর গাঁয়ের বাইরে গ্রামবাসীরা গাছের গায়ে একটি রঙচঙে নোটিস লটকে দিয়েছেন: ‘‘বসনিয়ার সেরা অভিনেতা এখানেই বাস করেন৷'' এবং পুরনো লোহালক্কড় কুড়িয়ে কোনোমতে দিন গুজরান করেন - যদিও নোটিসে তা লেখা নেই৷ এমনকি ‘অভিনেতা' কথাটাও অর্ধসত্য, কেননা মুজিচ তাঁর নিজের ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন, তাঁর নিজের জীবনকাহিনী নিয়েই তৈরি হয় বসনীয় চিত্রপরিচালক দানিস তানোভিচএর ‘‘এক লোহা-কুড়ুনের জীবনের একটি ঘটনা'' - যে ছবি সদ্য-সমাপ্ত বার্লিনালেতে ঢেউ তোলে৷
অতি কম বাজেটের ছবি৷ ন'দিন ধরে ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে তোলা৷ সোয়াটোভাচ গ্রামটি উত্তর বসনিয়ার টুজলা শহরের কাছে একটি হতদরিদ্র, ছোট্ট বসতি৷ মুজিচ ও তাঁর পরিবার এখানেই একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন৷ শীতকালেও বাড়ির একটিমাত্র ছোট ঘরে হিটিং'এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বাকি ঘরগুলো হিমশীতল৷
৪২ বছর বয়সি মুজিচ কিন্তু বার্লিন থেকে ফেরা অবধি যেন একটা ঘোরে আছেন, যেন তাঁর এখনও স্বপ্নভঙ্গ হয়নি৷ অপরদিকে মুজিচের ৩২ বছর বয়সি স্ত্রী সেনাদা আলিমানোভিচ তাঁর নিজের বাস্তবেই থেকে গেছেন, যদিও তানোভিচের ছবি সেনাদার কাহিনিও বটে৷ সেনাদা সেই কাহিনি শোনান এএফপি সংবাদ সংস্থার রিপোর্টারকে৷
সেনাদার পেটে তখন পাঁচমাসের সন্তান৷ ডাক্তাররা জানান যে, তাঁর পেটের সন্তান পেটেই মারা গেছে৷ কিন্তু যেহেতু মুজিচদের কোনো স্বাস্থ্য বিমা নেই, তাই টুজলা হাসপাতালে সেনাদার ট্রিটমেন্ট করা হয়নি৷ সেনাদা আর নাজিফকে যেতে হয়েছে আরেক হাসপাতালে৷ সেনাদা সেখানে তাঁর ননদ সেজে চিকিৎসা পান, কেননা তাঁর ননদের স্বাস্থ্য বিমা আছে৷
সেনাদা আজ দুই মেয়ের মা - সেমসা ও স্যান্ড্রা৷ তার পরে তাঁর যে পুত্রসন্তানটি হয়েছে, ঠিক পাঁচ মাস আগে, সেনাদা আর নাজিফ তার নাম রেখেছেন তানোভিচ - দানিস তানোভিচের নামে৷ আর মুজিফ তাঁর সিলভার বেয়ার মূর্তিটিকে বলেন তাঁর ও সেনাদার সেই মৃত দ্বিতীয় সন্তান৷ দু'জনে আদর করে বার্লিনালের পুরস্কারকে ডাকেন ‘টেডি বেয়ার' বলে৷
এটা এই একদা অজ্ঞাত, আজ সুপরিচিত, দরিদ্র রোমা দম্পতির পক্ষে একটি বড় সম্মান, না বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য বড় সম্মান, সেটা বিচার করবেন আপনারা৷
এসি / জেডএইচ (এএফপি)