বার্লিনে হয়ে গেল ‘‘সবুজ সপ্তাহ’’
২৯ জানুয়ারি ২০১২বিভিন্ন দেশের কৃষিমন্ত্রী, কৃষি ও খাদ্য সংক্রান্ত একাধিক সংস্থা ও সংগঠনের প্রধান, এবং সমগ্র ‘কৃষিশিল্পের' সর্বোচ্চ প্রতিনিধিরা জানেন, বার্লিনের আন্তর্জাতিক সবুজ সপ্তাহ কৃষি ও পরিবেশ সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতামত ও ধ্যানধারণা উপস্থাপন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ৷ যেমন আগামী জুন মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানিরো'তে জাতিসংঘের পরবর্তী পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ বার্লিনের সবুজ সপ্তাহের ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার' আলোচনা রিও'র সম্ভাব্য সাফল্য-অসাফল্যের একটা ইঙ্গিত দিতে পারে৷
ইন্দোনেশিয়ার মোট ২৪ কোটি মানুষের মোটামুটি ভাতই মূল খাদ্য৷ প্রত্যেক ইন্দোনেশিয়াবাসীর বছরে গড়ে ১০০ কিলোগ্রাম চাল লাগে৷ দেশে বর্তমানে প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ বেশি ধান উৎপন্ন হয়৷ ওদিকে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ কাজেই ইন্দোনেশিয়ার কৃষিমন্ত্রী আসিরাফ সুসভোনো চান খাদ্যশস্য ও বীজধানের ক্ষেত্রে আরো বেশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে জিন-প্রযুক্তির ব্যবহারে৷
কিন্তু জিন-প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলিতে হাওয়া কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যদিকে বইছে৷ বিশেষ করে ইউরোপে প্রতিরোধ বাড়ছে, এবং তা অ্যাতোটাই যে জার্মান রাসায়নিক সংস্থা বিএএসএফ গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে, বিএএসএফ তার জিন-প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণার শাখাটি জার্মানি থেকে তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি কমিশনার ডাচিয়া চিওলস মনে করেন, জিন-পরিবর্তিত উদ্ভিদের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করা যাবে, এটা ভাবা ভুল৷
যেমন একদিকে সর্বাধুনিক কৃষিশিল্প বিজ্ঞান, রসায়ন ও প্রযুক্তির যাবতীয় পন্থা ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করে চলেছে, অন্যদিকে উন্নয়নশীল বিশ্বে চাষের জমি থেকে শুরু করে সেচের পানি এবং বীজধান, সব কিছুর অভাব৷ তাই বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংগঠন এফএও'র নূতন প্রধান হোসে গ্রাৎসিয়ানো দা সিলভা বলছেন: ‘‘বর্তমানেই আমরা বিশ্বের সব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করছি৷ তবুও বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে৷ একইসঙ্গে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেদগ্রস্ত, তাদের মাত্রাধিক ওজন৷ সমস্যাটার নাম হল ভুল খাওয়া৷ ... মানুষজনকে শেখাতে হবে, ঠিক কি এবং কিভাবে খাওয়া উচিৎ৷''
জার্মান কৃষিমন্ত্রী ইলসে আইগনার বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলিতে খাদ্যের অপচয়ের কথা৷ শিল্পোন্নত দেশগুলিতে প্রতিবছর যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় করা হয়, সাহারার দক্ষিণের দেশগুলিতে বছরে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়৷ আইগনার বলেন: ‘‘আমরা চরম প্রাচুর্যে থাকি বলে আমাদের এই খাবার ফেলে দেওয়ার সমস্যাটা আছে৷ কেনিয়া কিংবা চীনের মতো দেশে প্রশ্ন হল, সযত্নে উৎপাদন করা খাদ্যপণ্যটাকে কিভাবে মাঠ থেকে এনে গুদামজাত করা যায়, কিভাবে সেটা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছনো যায়৷ যে কোনো পণ্য ফেলে দেওয়ার অর্থই হল অপচয়৷''
এফএএও-প্রধান দা সিলভা বিগত কয়েক মাসে খাদ্যপণ্যের দাম ওঠানামার কথা বলেন৷ এফএও সেই কারণে মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ছোটচাষীদের উৎসাহিত করার উপর জোর দিচ্ছে৷ এফএও চায় স্থানীয় পণ্য আঞ্চলিক বাজারে বিক্রি হোক৷ রাসায়নিক ব্যবহার করে বড় মাপের চাষ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির অর্থ, পরিবেশেরও ক্ষতি৷ তাই দা সিলভা চান উভয় ক্ষেত্রেই সবুজ বিপ্লব৷
জার্মান কৃষিমন্ত্রী ইলসে আইগনার'এর স্বপ্ন আরো অনেকদূর অবধি বিস্তৃত: ‘‘আমাদের আরো দৃঢ়ভাবে ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামতে হবে, সেক্ষেত্রে আরো ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে৷ চাষের জমি নষ্ট, ফসল তোলা, পরিবহন এবং সংরক্ষণে শস্যের অপচয় যতোদূর সম্ভব কমাতে হবে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে ভূমি সংস্কার৷ আমি বিশেষভাবে দেখতে চাই, মহিলাদের কিভাবে উৎসাহ দেওয়া যায়, কেননা এই সব দেশগুলিতে কৃষিকাজের মূল ভার থাকে মহিলাদের উপর৷ আফ্রিকায় কৃষিকাজে নিযুক্তদের ৭০ শতাংশ হলেন মহিলা৷''
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক