বাল্যবিবাহ কমছে সারা বিশ্বে
৬ মার্চ ২০১৮খানিকটা হলেও আশার আলো৷ সম্প্রতি ইউনিসেফ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পৃথিবী জুড়ে বাল্যবিবাহের শতকরা হার আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে৷ তবে এখনো বাল্যবিবাহের হার নিরাপদ নয়৷ বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য লড়াই চালাতে হবে আরো অনেকদিন৷
সমীক্ষা বলছে, গত কয়েক বছরে বাল্যবিবাহ ১০ শতাংশ কমেছে৷ তথ্যটি আশাপ্রদ হলেও এখনো বিশ্বের প্রতি পাঁচজন কিশোরীর একজন ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে৷ ইউনিসেফের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটিকে শূন্যে নিয়ে যাওয়া যাবে৷
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবশ্য বাল্যবিবাহ আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে৷ ইউনিসেফের দাবি, এর কারণ, শিক্ষা এবং সচেতনতা৷ ওই অঞ্চলের সরকারগুলিও বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য বিবিধ পদক্ষেপ করেছে৷ ফলও মিলেছে হাতেনাতে৷ একদশক আগে যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাল্যবিবাহের হার ছিল ৫০ শতাংশ, সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে৷
কিন্তু এত উন্নতির পরেও মোট বাল্যবিবাহের হার বেশ উদ্বেগের৷ এখনো বিশ্বের ৬৫০ মিলিয়ন কিশোরী বয়সের আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে৷ এর একটা বড় অংশ আফ্রিকা মহাদেশে ঘটছে৷ বিশেষত সাহারা অঞ্চলে৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০০৮ সালে তারা যা ধারণা করেছিল, তার চেয়ে ৮ মিলিয়ন কম কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়েছে৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের জন্য সুখবর রয়েছে৷ উপমহাদেশে বাল্যবিবাহ বহু শতাব্দীর সংকট৷ সেই বিদ্যাসাগরের আমলেও বাল্যবিবাহ নিয়ে বহু হইচই হয়েছে৷ ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে বাল্যবিবাহ এখনো সামাজিক রীতি৷ কিন্তু ইউনিসেফ বলছে, গত এক দশকে ভারতে বাল্যবিবাহের হার চোখে পড়ার মতো কমেছে৷ ৪৭ শতাংশ থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ৷ তবে এখনই উৎফুল্ল হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ ৩০ শতাংশ মানে, এখনো ১০০ জন কিশোরীর মধ্যে ৩০ জন বাল্যবিবাহের শিকার৷ ইউনিসেফের আশা, শিক্ষার বিস্তার এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে আগামী কয়েক দশকে সংখ্যাটিকে আরো অনেকটাই কমানো যাবে৷
বস্তুত, গত কয়েক বছরে ভারতে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য বহু সামাজিক আন্দোলন হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, বাল্যবিবাহের শিকার বহু কিশোরীই সেই আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে পুরুলিয়া অঞ্চলে বেশ কয়েকজন স্কুলছাত্রী সেই আন্দোলনের সূচনা করেছিলো৷ তাঁরা পাশে পেয়েছিলো বহু সমাজকর্মীকে৷ রাজস্থান এবং হরিয়ানাতেও বেশ কয়েকটি বাল্যবিবাহবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল৷
ইউনিসেফের মুখপাত্র অনজু মালহোত্রা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বাল্যবিবাহের শিকার হলে একের পর এক সামাজিক এবং শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করেন কিশোরীরা৷ প্রথমত, তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়৷ দ্বিতীয়ত, যৌনমিলনের কারণে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়৷ আনন্দের কথা, বাল্যবিবাহের হার কমছে৷ কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি৷ অনেক পথ চলার বাকি৷
বিশ্বের একশ'টি দেশে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত সমীক্ষা চালিয়েছিল ইউনিসেফ৷ সেখান থেকেই এই ফলাফল পেয়েছে তারা৷ ইউনিসেফ সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক বছর বিষয়টি নিয়ে লাগাতার প্রচার এবং আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা৷ তাদের আশা, ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহের সমস্যা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারবে তারা৷
আলেকজান্ডার পিয়ারসন, এসজি (রয়টার্স, এফপি)