1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাল্যবিয়ে কমাতেই এই আইন করেছি’

৯ মে ২০১৭

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ এই আইন শিশুদের আরো বেশি যৌন হয়রানির ঝুঁকিতে ফেলবে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শিশু অধিকার সংগঠন৷ তবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বললেন ভিন্ন কথা৷

https://p.dw.com/p/2cWZf
Bangladesch Meher Afroz Chumki in Dhaka
ছবি: DW/S. K. Dey

নতুন আইনে ধর্ষণের শিকার অপ্রাপ্তবয়স্কের সম্মান রক্ষায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে৷ শিশু অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, এই বিধান নারীর শরীর বা অধিকার রক্ষায় মোটেই সহায়ক নয়৷

এছাড়া আইনে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট' বিবেচনায় ১৮ বছরের কম বয়সিদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে৷

আলোচিত এই আইনের বিভিন্ন দিক ও উদ্ভূত আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি৷

ডয়চে ভেলে: বাল্যবিবাহ নিরোধ যে আইনটি হয়েছে তার বিশেষত্ব কি?

মেহের আফরোজ চুমকি: আপনারা জানেন বাল্যবিবাহ নিরোধ যে আইনটি ছিল, সেটি দীর্ঘদিনের পুরাতন একটি আইন৷ আইনটি পুরনো হওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়নে অনেক ফাঁকফোকর ছিল৷ সেগুলো বন্ধ করে আরো শক্তভাবে ও যুগোপযোগী করে আমরা নতুন আইনটি করেছি৷ নতুন এই আইনে যে ধারাগুলো আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- যারা বিয়ে দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে এটি আরো কঠোর হয়েছে৷ তাদের অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷ ন্যূনতম এক লাখ টাকা করা হয়েছে৷ তাদের সাজার মেয়াদ দুই বছর করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ইউএনও এবং জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাদের ‘ম্যাজেষ্ট্রেসি পাওয়ার' দেয়া হয়েছে৷ আগে রোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে দেয়া হত, সেই জায়গাটাও বন্ধ হয়ে গেছে৷ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সমস্যা থেকে যাতে পরিত্রাণ পায় সে ব্যাপারেও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কোন বিয়ে যদি আমরা বন্ধ করি সেখানে একটা মুচলেকা রাখা হবে৷ ভবিষ্যতে যাতে সে এই কাজ না করে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷

State Minister Meher Afroz Chumki for Alaap - MP3-Stereo

এই আইনটি বাল্যবিবাহ রোধে কতটুকু ভূমিকা রাখবে?

এই আইন বাল্যবিবাহ রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে৷ পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করবে৷ কাজী, ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার, অভিভাবক - এঁরা বাল্যবিয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ এই অভিভাবকদের কঠোর আইনের মধ্যে আনা হচ্ছে, ফলে তাঁরা এখন চিন্তা করবেন৷ ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার যদি কোথাও বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন তাহলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে৷ 

এই আইনে যে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে, তাতে অনেকের আশঙ্কা, বাল্যবিয়ে বেড়ে যেতে পারে? অনেক অভিভাবক ইচ্ছা করে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে দিতে পারেন? এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?

বয়স বাড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ আর সব আইনেই বিশেষ ধারা থাকে, এখানেও আছে৷ এখানেও কিন্তু ‘স্পেশাল কেস'৷ সেটা করাও কিন্তু সহজ না৷ এখানে অভিভাবক, আইন-আদালতের সম্মতি নিয়েই কিন্তু বিয়েটা দিতে হবে৷ সেখানে কিন্তু আমরা দেখব এই বিয়ের ফলে মেয়েটি কোনো উপকার পাচ্ছে কি-না? তাকে জোর, জবরদস্তি করে বিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ এগুলো দেখার নির্ধারিত কমিটি থাকবে৷ আদালতে যেতে হলেও এই কমিটির মাধ্যম দিয়েই যেতে হবে৷ আপনি কি কালই সব সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন? যদি না পারেন তাহলে তো বিষয়গুলো দেখতে হবে৷ এক্ষেত্রে তো সামাজিক অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে৷ ধরেন, অত্যন্ত গরিব একটি পরিবার, তাদের একটি ঘর৷ সেই ঘরে বাবা-মা থাকেন, আবার মেয়েও থাকেন৷ এই বাবা কিন্তু এইভাবে মেয়েকে ১৮ বছর পর্যন্ত রাখতে চাইবেন না৷ তাদের একটা বাড়ি তৈরি করে দেয়া দরকার৷ আমরা কি সেটা পারছি? পারছি না৷ কালকেই পারব সেটাও বলতে পারছি না৷ তার জন্য একটু সময়ের দরকার আছে৷ কোন কোন সময় কিন্তু অনেক জটিলতা আসবে৷ সেই জটিলতাটাও আমাদের বুঝতে হবে৷ একদিকে আইন এবং অন্যদিকে আমরা অনেক ধরনের কর্মসূচি চলমান রেখেছি৷

এই আইনটা করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দলগুলোর কি কোনো চাপ ছিল?

এই আইন করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোনো দলের প্রভাব ছিল না৷ এরপর ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে যখন আমরা বসব তখন আপনারাই বুঝতে পারবেন যে তারাই আমাদের প্রতি বেশি দূর্বল হচ্ছে৷ মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আমরা তাদের প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি৷

সংসদে এই আইনটি পাস করার আগে বিরোধী দল আরো জনমত যাচাই এবং সংস্কারের কথা বলেছিল৷ তাদের মতামত এখানে গুরুত্ব পায়নি৷ ভবিষ্যতে বিলটি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি-না?

গুরুত্ব পায়নি এই কথা ঠিক নয়৷ স্থায়ী কমিটিতে ১০ জন সদস্য আছেন৷ তার মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যও আছেন৷ বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা বসেছি৷ তারা হয়ত বয়সের কথা বলেছে, সেটা আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই ঠিক করেছি৷ আমরা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি৷ একটা বিষয় আলোচনা করলে সবাই কিন্তু একমত নাও হতে পারেন৷ শতভাগ মানুষ প্রত্যেকটি ধারায় একমত হবে, এমনটা নাও হতে পারে৷ আমরা সামাজিকতাকে নিয়ে চিন্তা করেছি৷ সমাজকে সিকিউরিটি দেয়া, বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের সিকিউরিটির কথাটা আমরা বিবেচনা করেছি৷

আমরা তো নারী শিক্ষা বা নারীর অগ্রগতিতে অনেকদূর এগিয়েছি, এই আইনটা কি নারীদের অগ্রগতিতে কোনো বাধার সৃষ্টি করবে?

যাঁরা এটা ভাবছেন, তাঁদের আমি বলব আপনারা একটু ধৈর্য্য ধারণ করুন৷ এটা নিয়ে কথা না বলে মাঠে আমরা কি করছি আপনারা দেখেন৷ আমরা কি বাল্যবিয়েতে উৎসাহ দিচ্ছি, না এটা বন্ধ করার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি, সেটা আপনারা একটু দেখেন৷ আমরা সবাই মিলেই তো এই আইনটা করেছি৷ নিশ্চয় আমরা বাল্যবিয়ে বাড়ানোর জন্য এই আইনটা করিনি, বাল্যবিয়ে কমানোর জন্যই করেছি৷ এই ধরনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে আমার মনে হয় ভালো হয়৷

এই আইনটার মতো কি বিশ্বের আর কোনো দেশে আইন আছে?

অনেক দেশে এই আইন আছে৷ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে দেখেন, বিশেষ ‘কজ' তাদেরও আছে৷ সেখানে বলা আছে, ১৫ বছর বয়সে একটা মেয়ে বিয়ে করতে পারবে৷ আর ১৮ বছর বয়স হলে সে যদি মনে করে এই বিয়েটা তার ভুল হয়েছে তাহলে সে ডিভোর্স দিতেও পারবে৷ ভারত ছাড়াও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও এমন আইন আছে৷ তাহলে বাংলাদেশে এটা নিয়ে এত অস্থির হওয়ার কী আছে আমি বুঝলাম না৷

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে শুধু মেয়েদের বয়স নিয়ে আলোচনা হয়, এক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স নিয়ে আলোচনা হয় না৷ এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া কতটা জরুরি?

আলোচনা হয় না কেন? সবগুলো নিয়েই আলোচনা হওয়া জরুরি৷ তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলেরা ২১ বছরের নীচে বিয়েতে খুব একটা উৎসাহিত থাকে না৷ খুবই কমই হয়৷ তারপরও এ বিষয়টা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না৷ আমার মনে হয়, ক'দিন পরে মেয়েদের বয়স যে ১৮ বছর, এটা নিয়ে আলোচনাও কমে যাবে৷ আমার বিশ্বাস, এক বছরের মধ্যেই এই আলোচনা অর্ধেকে নেমে আসবে৷ আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, কিছুদিন পর দেখবেন ছেলেরাই বলবে, ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করব না৷ আর মেয়েরা বলবে, আমরাও ১৮ বছরের আগে বিয়ে করব না৷ তখন অর্ধেক সমস্যা এখানেই সমাধান হয়ে যাবে৷

বিশেষ বিধানে সর্বনিম্ন বয়স কত, এটা কিন্তু উল্লেখ নেই?

এটা তো ‘স্পেশাল' বিষয়৷ সে কারণে এখানে বয়সের কোনো বিষয় আসেনি৷ তার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশে ৫/৭ বছরে বা ১০ বছরে বিয়ে দেয়৷ এটা কিন্তু বাংলাদেশে নাই বললেই চলে৷

এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

বাংলাদেশে অন্য আইনগুলো যেভাবে প্রয়োগ হয়, এটাও সেভাবে প্রয়োগ হবে৷ আজকেই যদি কেউ একটা বিয়ে দেয় আর বলে এটা ‘স্পেশাল' তাহলে তাকে বলতে হবে এটা কীভাবে স্পেশাল৷ সেই স্পেশালের সমাধান যদি না থাকে, তাহলে বিয়ে হবে৷ আর যদি আমরা সমাধান করতে পারি তাহলে তো হলোই, বিয়ে হবে না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য