কারাগারেও ছড়াচ্ছে করোনা
২৯ এপ্রিল ২০২০ঢাকায় অন্তত ১২ জন কারারক্ষী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে৷ দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৭,১০৩ জন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় একজন সাংবাদিকসহ মারা গেছেন ৮ জন; মোট মৃত্যু ১৬৩৷
এদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন৷ তবে অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে উঠেছেন৷ তাদের নাম এখনো সুস্থদের তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি৷ মোট সুস্থদের চারতৃতীয়াংশ মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়েছেন বলে জানায় আইইডিসিআর৷
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর ৫৫তম দিনে মারা যাওয়া ১৬৩ জনের মধ্যে ১৩৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন৷
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য তুলে ধরেন৷
কারারক্ষী আক্রান্ত
এখন পর্যন্ত ১২ জন কারারক্ষী আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান৷
তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই ওই রক্ষীরা আক্রান্ত হয়েছেন৷
‘‘নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারের কোয়ার্টারে প্রায় দুইশ কারারক্ষী থাকেন৷ অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কারাবন্দিরা ভর্তি হলে সেখানে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন এখানকার কারারক্ষীরা৷
‘‘আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে নয় জন মুগদা, দুইজন কেরানীগঞ্জ বিশ শয্যা হাসপাতালে ও একজন মিরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন৷ তাদের সবাই এখনো শারীরিকভাবে ভালোই আছেন৷ তবে এখন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ কারাগারের কোনো বন্দি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি৷’’
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা শুরু
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় পরীক্ষার আওতা বাড়াতে প্রথমবারের মতো চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ এর মধ্যে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল (সাবেক অ্যাপোলো), স্কয়ার হাসপাতাল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল শুধু তাদের ভর্তি রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করবে৷
আর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাইরের রোগীদের নমুনাও পরীক্ষা করতে পারবে৷
এই চারটি বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে দেশে এখন ২৯টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হলো৷
করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে প্রথম সাংবাদিকের মৃত্যু
তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মারা যান দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন৷ পরে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়৷
অসুস্থ খোকনকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোয়া ১০টার তিনি মারা যান বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ হুমায়ুন কবির খোকনের স্ত্রী ও সন্তানদের হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে৷
রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহেদ বুধবার বলেন, ‘‘আমরা রাতেই নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলাম, ভোরে আমাদের জানানো হয়েছে, তার করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে৷
‘‘আমাদের ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক হুমায়ুন কবিরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷’’
হুমায়ুন কবির খোকনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদ নগরে৷ তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন৷
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে৷ এ সময়ে অনেকেই হোম অফিস করছেন৷ খোকনও গত ১৫ দিন ধরে বাসা থেকেই অফিসের কাজ করছিলেন বলে জানান সময়ের আলো'র সিনিয়র রিপোর্টার হাবিব রহমান ৷
বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা দেখা দেয়৷ এরপর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ৯টার দিকে তাকে রিজেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়৷’’
হাসপাতালে ভর্তির সময়ই এই সাংবাদিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল৷ ডাক্তাররা চেষ্টা করলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়৷ হুমায়ুন কবির এর আগে দৈনিক মানবজমিন, আমাদের সময়সহ কয়েকটি সংবাদপত্রে কাজ করেন৷ তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ৷
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন৷ কয়েকজন এরই মধ্যে সুস্থও হয়ে উঠেছেন৷ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হুমায়ুন কবিরই প্রথম সাংবাদিক যিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন৷
এসএনএল/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)