বায়ার্ন থেকে রেয়ালে!
২৭ মে ২০১৩চলতি মরশুমে বায়ার্নের কাহিনি যদি একটি মহাকাব্যের মতো হয়, তবে সেই মহাকাব্যের আসল নায়ক ৬৮ বছর বয়সি ইয়ুপ হাইনকেস৷ তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন থেকে শুরু করে কোচ হিসেবে উত্থান-পতন, এ সব কিছুর এতো চর্ব্বিত-চর্বণ হয়ে গেছে যে, তার পুনরাবৃত্তি করার কোনো প্রয়োজন নেই৷ তবে ইয়ুর্গেন ক্লিনসমানকে বিদায় দেবার পর বায়ার্নের বস উলি হোয়েনেস সরাসরি বায়ার্নের এক পুরনো কোচ – এবং হোয়েনেসের নিজের বন্ধুপ্রতিম ইয়ুপ হাইকেসকে টেলিফোনে আহ্বান জানান: এসো ভাই, নাও সামলাও৷
অপরদিকে হাইনকেস যে মিউনিখে ফিরেই কিছু ভেলকি দেখাতে শুরু করেন, এমন নয়৷ কিন্তু গতবছর ঐ আলিয়ানৎস অ্যারেনাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চেলসির কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হারার পর বায়ার্নের প্লেয়ারদের যেন রোখ চেপে যায়৷ তারা একাই যেন বিশ্বজয় করতে যাবে৷ সেই সময়ে যদি আবার হাইনকেসের মতো একজন অভিজ্ঞ, প্রবীণ, রেয়ালের সঙ্গে একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা, যুগপৎ পিতৃপ্রতিম কোচ এসে লাগাম ধরেন, তবে এ সব প্রতিভাধর ছেলেদের আর পায় কে!
হাইনকেসের স্ট্র্যাটেজি
ভাষ্যকাররা বার বার যে কথাটা বলছেন সেটা হলো, হাইনকেস মূলত কা-কে মাঠে নামাচ্ছেন অথবা নামাচ্ছেন না, শুধু সে টুকু লাগাম টানা কি ছাড়া দিয়েই তিনি বায়ার্নের জুড়িগাড়ি হাঁকিয়ে গেছেন৷ যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল খোদ আরিয়েন রবেনকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখে টোনি ক্রোসকে অগ্রাধিকার দেওয়া৷ পরে টোনি ক্রোসের ইনজুরিই আবার রবেনকে মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়৷ এবং রবেন সে সুযোগের চরম সদ্ব্যবহার করে ঋণ পরিশোধ করেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে: বায়ার্নের দু'টি গোলের মধ্যে প্রথমটি হয় তাঁর পাসে; দ্বিতীয়টি তিনি নিজেই করেন, রিবেরির হিল করা পাস থেকে৷
হাইনকেসের কথায় ফিরতে গেলে: হাইনকেস দেখিয়েছেন ফুটবলার হিসেবে অভিজ্ঞতার সঙ্গে মানুষ হিসেবে অভিজ্ঞতার গাঁটছড়া পড়া প্রয়োজন৷ ইয়ং ছেলেপিলেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাবটা প্রবল হয়, আর হয় তাদের মান-অভিমান৷ মান রাখতে তারা জান লড়াতে প্রস্তুত৷ আবার পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিকার মাধ্যমেই তারা একক প্লেয়ার থেকে একটা টিম হয়ে ওঠে, মাঠে নামলে যে টিম হয় মোক্ষম অস্ত্র৷
হাইনকেসের প্রতিশোধ?
বায়ার্ন এ মরশুমে ২৫টা বুন্ডেসলিগার রেকর্ড ছুঁয়েছে, নয়ত ভেঙেছে৷ এবার জার্মান কাপ জিতলে তারাই হবে ত্রিমুকুট জয়ী প্রথম জার্মান দল৷ হাইনকেসের এই ‘গ্লোরিয়াস সানসেট'-এর পিছনে কিন্তু খানিকটা ক্ষোভও লুকিয়ে আছে, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ বায়ার্নের ‘কু' হিসেবে পেপ গুয়ার্দিওলাকে বার্সেলোনা থেকে মিউনিখে তুলে আনার কথাটা হাইনেকেসের বর্তমানেই, তাঁকে প্রায় বাদ দিয়ে যেভাবে ঘোষণা করা হয়, তা-তে হাইনকেসের মতো মানুষ – এবং কোচের – বিশেষ খুশি হবার কথা নয়৷
অপরদিকে আগুন নেভাতে আসা দমকলের মতো হাইনকেসের মিউনিখে শেষ সিজনের আশ্চর্য় সাফল্য নিশ্চয় তাঁর চেয়ে ২৬ বছরের ছোট পেপ গুয়ার্দিওলাকে চিন্তায় ফেলেছে: আরো ক্ষুদ্র মৌচাক রচো দেখে যাই৷ ব্যাপারটা তাও সেখানে শেষ করে দেওয়া যেতো যদি না বোমাটা ফাটতো একেবারে মাদ্রিদ থেকে: না, রেয়াল মাদ্রিদ নয়, কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদ সংক্রান্ত বটে৷ খবরটা ফাঁস করেছেন হাইনকেসের স্প্যানিশ এজেন্ট এনরিকে রাইয়েস৷
প্রস্তাবটা কার?
রাইয়েস একটি স্প্যানিশ রেডিও স্টেশনকে বলেছেন, ‘‘ইয়ুপ রেয়াল মাদ্রিদে ফিরতে চান এবং সেখানে ফিরতে পারলে খুব খুশি হবেন৷ (রেয়ালের প্রেসিডেন্ট) ফ্লোরেন্তিনো পেরেস আমাদের টেলিফোন করলে আমরা নিশ্চয় তাঁর অফার অ্যাক্সেপ্ট করব৷ (ইয়ুপ হাইনকেস) এখন শুধু বুন্ডেসলিগা থেকে রিটায়ার করছেন৷''
রাইয়েস আরো একটি মারাত্মক কথা যোগ করেছেন: ‘‘হাইনকেস নয়, পেরেসকেই প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে হবে৷'' রেয়াল মাত্র গত সপ্তাহে কনফার্ম করেছে যে, জোসে মুরিনিও এ মরশুমের শেষে মাদ্রিদ ছাড়ছেন৷ তবে জোর গুজব যে, প্যারি সাঁ-জার্মার কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি এখনও পেরেস এবং মাদ্রিদের ফেবারিট৷ তবুও, রাইয়েসের কথা যদি সত্য হয়, তা হলে রেয়ালকে হাইনকেসের ‘‘প্রস্তাবই'' এক হিসেবে বায়ার্নকে কলা দেখানো৷
হাইনকেস যেন বলছেন: এর নাম ফুটবল৷ আমি স্প্যানিশ ফুটবলকে চিনি, রেয়ালকেও চিনি৷ এ বছর বায়ার্ন, ডর্টমুন্ড, জার্মান ফুটবলের বছর গেল – কিন্তু আগামী বছর? বায়ার্ন গুয়ার্দিওলাকে আনছে কোচ করে৷ বুন্ডেসলিগায় বায়ার্নের যে আধিপত্য, আভিজাত্য, অর্থবল, তা অন্য কোনো দলের নেই৷ কাজেই বায়ার্ন ডর্টমুন্ডের মারিও গোয়েটৎসে, এমনকি রবার্ট লেভান্ডোভস্কিকে চাইলেই ভাঙিয়ে আনতে পারে৷ কিন্তু তার মানেই ইউরোপীয় ফুটবলে বায়ার্নের কায়েমি শাসন, কায়েমি বন্দোবস্ত নয়৷ আরো বড় কথা, বায়ার্নের স্ট্র্যাটেজিই ডর্টমুন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো তরুণ তুর্কিদের বাতলে দেবে, তৃণমূলের ফুটবল খেলে কিভাবে বায়ার্নের মতো পরাশক্তিদের ঠেকানো যায়৷