‘বায়ুদূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়’
৬ মার্চ ২০১৯পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়াল ‘বিশ্ব বাতাসের মান প্রতিবেদন ২০১৮’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে৷ এতে দেশের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান ও ভারত৷
বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার উপস্থিতির পরিমাণ হিসেব করে বায়ুদূষণের মাত্রা হিসাব করা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম২.৫) গড় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে৷ কিন্তু ঢাকার বাতাসে এই কণিকার মাত্রা ২০১৮ সালে প্রতি ঘনমিটারে পাওয়া যায় ৯৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি৷ তবে এক বছর আগে ২০১৭ সালে এই মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম৷ ২০১৭ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল মঙ্গোলিয়া৷
দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান ও ভারতের বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৭৪ দশমিক ৩ ও ৭২ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম ছিল৷ চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও বাহরাইন৷ এরপর রয়েছে যথাক্রমে মঙ্গোলিয়া, কুয়েত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নাইজেরিয়া৷
সবচেয়ে কম দূষিত দেশ হিসেবে তালিকার নীচের দিকে রয়েছে যথাক্রমে আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া ও সুইডেনের নাম৷
বিশ্বের ৭৩টি দেশকে নিয়ে এই গবেষণা করা হয়৷ এইসব দেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৭তম হলেও রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়৷ আর শীর্ষ দূষিত রাজধানী ভারতের নতুন দিল্লি৷
বায়ুদূষণের শীর্ষ তালিকায় থাকা রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের তালিকায় প্রথম ২০টির মধ্যে ১৫টিই ভারতের৷ বাকি পাঁচটি হলো, ঢাকা, পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ ও লাহোর এবং চীনের হোতান ও কাশগর৷ ভারতের গুরগাঁও সবচেয়ে দূষিত শহর৷
দূষণের কারণ
বাংলাদেশে বায়ুদূষণেরপ্রধান কারণ হিসেবে ইটভাটা এবং যানবাহনের জ্বালানি তেলকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি সারাদেশের অবস্থা খারাপ বলবনা৷ তবে ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা খারাপ৷ এটা অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই৷ ঢাকার বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশ কারণ শহরের আশেপাশের ইটভাটা৷ এরপর রয়েছে নির্মাণকাজ৷ নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলো যুক্ত হয়৷ এরপরে রয়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি৷ এছাড়া নতুন একটি কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, তা হলো বর্জ্য পোড়ানো৷ ঢাকায় এখন নানা ধরণের বর্জ্য পোড়ানো হয় এবং এটা দিন দিন বাড়ছে৷ শিল্প কারখানার মধ্যে স্টিল রিরোলিং মিল বায়ু দূষণ করে, ক্ষুদ্র কণা ছড়ায়৷ এরপরে আছে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরেও বায়ুদূষণের কারণগুলো প্রায় একই রকম৷ তবে ঢাকার বাইরে বায়ুদূষণ অনেক কম৷ তাই আমি মনে করি এই প্রতিবেদনটি ঠিক নয়৷ এখানে পদ্ধতিগত সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি৷ কারণ ঢাকার বাইরে দূষণ অনেক কম৷ তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে দূষণে এক নম্বর হয়?’’
মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘‘আমরা বায়ুদূষণ মনিটর করি৷ ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭টি পয়েন্টে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা আছে৷ আমাদের যন্ত্রপাতি আছে৷ তবে বায়ুদূষণ কমিয়ে আনায় আমাদের একক কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই৷ আমরা ইটভাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারি৷ ইটের বিকল্পের জন্য প্রচার চালাতে পারি৷ কিন্তু দূষণের জন্য আরো অনেক কিছু দায়ী, যেখানে আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই৷ এখানে সমন্বয়ের অভাব আছে৷ আর সচেতনতা তৈরির কাজও কার্যকরভাবে হচ্ছেনা৷’’
‘সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এয়ার কোয়ালিটি রিচার্স অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার’-এর প্রকল্প ম্যানেজার এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বায়ুদূষণের ঘটনা দুইভাবে ঘটে৷ একটি হলো ক্ষুদ্র কণিকার কারণে৷ আকেটি হলো নানা কেমিকেল ও দূষিত পদার্থের কারণে৷ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি৷ আর প্রধান কারণ এখন ইট ভাটা৷ তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে যতটা বলা হচ্ছে ততটা নয়৷ দিল্লিতে স্কুল, কলেজ দূষণের কারণে বন্ধ করে দিতে হয়৷ আমাদের এখানেতো তা হয়না৷ আর দূষণের কারণ যে আমাদের দেশই, শুধু তা নাও হতে পারে৷ পার্শ্ববর্তী দেশের কারণেও দূষিত হতে পারে৷ আর আমাদের এখানে বায়ুদূষণটা সিজনাল৷ শীতের সময় বেশি হয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি৷ আর নানা রোগের সঙ্গে এর কী কার্যকারণ সম্পর্ক আছে তাও আমরা দেখার চেষ্টা করছি৷’’
অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন বলেন, ‘‘এই বায়ুদূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান নয়৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তেমন দক্ষ এবং তৎপর নয়৷ দূষণ পরিমাপে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাও তত আধুনিক নয়৷ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই বললেই চলে৷’’