বায়ুদূষণেই আয়ু কমছে, মৃত্যুদণ্ড কেন?
১১ ডিসেম্বর ২০১৯দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি, যে মানুষের আয়ু এমনিই কমে আসছে, তাহলে আর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মানে কী? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সুপ্রিম কোর্টের কাছে দিল্লি গণধর্ষণ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এক আসামির আবেদন।
ইতিমধ্যেই নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত ৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। সূত্রের খবর, এ মাসেই তাদের ফাঁসি হওয়ার সম্ভাবনা। মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন করে আগেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল তিন অভিযুক্ত। আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। কিন্তু অক্ষয় সিংহ ঠাকুর নামে চতুর্থ অভিযুক্ত এতদিন পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আবেদন করেনি। শেষ মুহূর্তে পৌঁছে এ সপ্তাহেই তার আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টের কাছে অক্ষয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। যার বয়ানে বলা হয়েছে, দিল্লির বায়ু দূষণ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে একে এখন গ্যাস চেম্বার বলা যায়। এমনিতেই এখানে মানুষের আয়ু কমে আসছে। অক্ষয়ও দিল্লির জেলে থাকলে বেশি দিন বাঁচবে না। তাহলে আলাদা করে আর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অর্থ কী? অক্ষয়ের প্রাণভিক্ষার বয়ান পড়ে অবাক দেশের আইনমহল। অনেকেই বলছেন, এমন আবেদন কখনও দেখেননি তাঁরা। তাঁদের ধারণা, সময় কেনার জন্যই এমন অবাস্তব বয়ান তৈরি করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, অক্ষয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদনে আরও আশ্চর্য সমস্ত কথা লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে ভারতীয় পূরাণ অনুযায়ী সত্য যুগে মানুষ হাজার বছর বাঁচত। ক্রমে তা কমতে কমতে কলি যুগে এসে পৌঁছেছি আমরা। মানুষের মৃত্যুর গড় বয়স এখন ৫০-৬০। সে কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আর কোনও অর্থ হয় না। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও সেখানে সওয়াল করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বিতর্ক চলছে ভারতের আইন মহলে। অনেকেই এখন সর্বোচ্চ শাস্তির বিপক্ষে। আবার অনেকের মতে বিরলতম ঘটনার ক্ষেত্রে এখনও মৃত্যুদণ্ড থাকা উচিত। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডকে তেমনই এক বিরলতম ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছিল আদালত। যে ভাবে নির্ভয়াকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তা নজিরবিহীন এবং মনুষ্যতর। নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত, সর্বত্রই অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। নির্ভয়া কাণ্ড বদলে দিয়েছে ধর্ষণের আইনও। এখন দেখার, অক্ষয়ের এই নয়া আবেদন আদালত আদৌ গ্রাহ্যের মধ্যে আনে কি না।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই/এএফপি/ইন্ডিয়া টুডে)