জরিমানার মুখে জার্মানি?
১৮ মে ২০১৮ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১০ সালে ‘ইইউ বায়ুদূষণ নীতিমালা' ঘোষণা করে৷ ওই নীতিমালা অনুযায়ী, এর আওতাভুক্ত দেশগুলোর বাতাসে ১০ মাইক্রো মিলিমিটারের ক্ষুদ্র ক্ষতিকর ধূলিকণা বা পিএম১০ এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়৷
কিন্তু অনেক সদস্যরাষ্ট্রই বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বায়ুদূষণ করছে৷ বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে এই চিত্র নিয়মিত৷
উদাহরণ হিসেবে জার্মানির শহর স্টুটগার্টের বাতাসে প্রতি কিউবিক মিটারে ৮২ মাইক্রোগ্রাম নাইট্রোজেন অক্সাইড পাওয়া গেছে, যা নীতিমালায় উল্লেখিত মাত্রা ৪০ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণেরও বেশি৷
ইইউ পরিবেশ কমিশনার কারমেনু ভেলা গত জানুয়ারিতে অভিযুক্ত ছয়টি দেশের পরিবেশ মন্ত্রীদেরকে ব্রাসেলসে ডেকেছিলেন সতর্ক করার জন্য৷ এর মধ্যে জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী বারবারা হেন্ড্রিকসও ছিলেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিবেশের পরিবর্তনে স্বাস্থ্যের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে যেসব সংগঠন কাজ করে তাদের মোর্চার নাম স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অ্যালায়েন্স৷
এর মুখপাত্র অ্যানি স্টাফনার বলেন, ‘‘এটি খুব ভালো ব্যাপার যে, ভেলা মন্ত্রীদের ব্রাসেলসে ডেকেছিলেন এবং বায়ুদূষণ কমাতে চাপ দিয়েছেন৷''
বায়ুদূষণের সমস্যাটি অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হলেও এটি সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন৷
ইউরোপীয় কমিশন ২০১৭ সালে যে এক ডজন সদস্য রাষ্ট্রকে বায়ুদূষণ নীতিমালা নিয়ে সতর্ক করেছিল, তার মধ্যে জার্মানিও ছিল৷ এখন তাদেরকে জরিমানা গুণতে হবে৷
বায়ুদূষণ নীতিমালা ভঙ্গ করায় পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷
এরপরেই জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, গ্রেট ব্রিটেন, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়া তাদের পরিবেশ দূষণের অভিযোগ খণ্ডাতে বাড়তি সময় পায়৷
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র এনরিকো ব্রিভিও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বায়ুদূষণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে কীভাবে কাজ করবে তা প্রত্যেকটি দেশ নিজেরাই ঠিক করবে৷ তাদেরকে কমানোর পদ্ধতি নিয়ে নির্দেশ দেওয়া আমাদের কাজ নয়৷''
জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী ভেলার কাছে জানুয়ারির ৯ তারিখে দেশটির পরিবেশ ও পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি চিঠি পাঠায়৷ চিঠিতে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বায়ুদূষণ কমানোর একটি পরিকল্পনা আছে৷
পরিকল্পনায় রয়েছে, জার্মানিতে বায়ুদূষণ কমাতে ডিজেলচালিত পাবলিক বাসগুলোর ধোঁয়ার দূষণ কমাতে বায়ুশোধন যন্ত্র সংযুক্তকরণ, ই-কারগুলোর জন্য আরও অনেক বেশি চার্জিং পয়েন্ট তেরি করা এবং ই-মোবিলিটির ব্যবস্থা আরও শক্তিশালীকরণ৷ বিনামূল্যে যাতায়াতের সম্ভাবনা বন্ধের কথাও এতে বলা হয়েছে৷
কিন্তু পরিবেশবাদীরা বলছেন, জার্মানির পরিকল্পনা ইউরোপীয়ান কমিশনকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি৷
পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ (বিইউএনডি)-এর মুখপাত্র জেন্স হিলজেনবার্গ বলেন,‘‘ যদিও প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু সুফল রয়েছে৷ কিন্তু এটি এখনই দূষণ কমাতে কাজে আসবে না৷ বায়ুদূষণের মাত্রা সহনীয় রাখতে জার্মানিকে তার কারিগরি দিকটি পরিবর্তন করতে হবে৷ পাশাপাশি নিবিড়ভাবে নাগরিকদের আচরণ পরিবর্তনের দিকেও জোর দিতে হবে৷''
ব্রিজিট অস্টেরাথ/এইচআই