1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে এইচআরডাব্লিউর উদ্বেগ

২৭ নভেম্বর ২০২৩

নির্বাচনের আগে ‘সহিংস দমন-পীড়ন’ চলছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ বিএনপির প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বড় অংশের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছে এইচআরডাব্লিউ৷

https://p.dw.com/p/4ZUtm
বিএনাপির সমাবেশের সময় ঢাকার পল্টনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা
এইচআরডাব্লিউ দাবি করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গণগ্রেপ্তার, গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ তারা পেয়েছে ছবি: Mortuza Rashed/DW

সংগঠনটির এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্রেকনার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘যখন সরকার স্বাধীন মতপ্রকাশ বন্ধ করে দেয়, নির্বিচার গ্রেপ্তার, গুম, হয়রানি, ভয় দেখানোর মাধ্যমে বিরোধী, সমালোচক ও অধিকারকর্মীদের পদ্ধতিগতভাবে অকার্যকর করে দেয়, তখন একটি অবাধ নির্বাচন অসম্ভব৷” বর্তমানে সক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি আসামি কারাগারে রয়েছে বলে দাবি করে এইচআরডাব্লিউ৷
বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মৃধা বলেন, ‘‘৫ নভেম্বর বিকেলে অবরোধ সমর্থনে মিছিল শেষ করে আমি আমার ঢাকার পরিবাগের বাসার পাশে ‘সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্রে’ বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম ৷ আমার সঙ্গে আমার এক বড় ভাইও ছিলেন৷ তখন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন এসে আমাকে খোঁজাখুঁজি করে৷ আমি বুঝতে পেরে সেখান থেকে চলে যাই৷ তারা আমাকে না পেয়ে আমার চাচাতো ভাই তরিকুল ইসলাম সজীব মৃধাকে ধরে নিয়ে যায়৷ তারা তাকে নির্যাতন করে ও শাহবাগ থানা পুলিশে তুলে দেয়৷ পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়৷ সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার তো করাই হচ্ছে, তাদের না পেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে আটক করা হচ্ছে৷ আমি গ্রেপ্তার এড়াতে এখন আত্মগোপনে আছি৷”

আমাকে না পেয়ে আমার চাচাতো ভাইকে ধরে নিয়ে যায়: জুয়েল মৃধা

ভোলার ছাত্রদল নেতা মো. হাবিুবর রহমানকে ৪ নভেম্বর রাতে তাদের পৌরসভার বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়৷ তার ভাই মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘‘ভোর রাত ৪টার দিকে পুলিশ কোনো ওয়ারেন্ট বা মামলা ছাড়াই তাকে নিয়ে যায়৷ পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরাও ছিল৷ আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না৷ এখন গায়েবি মামলায় তাকে আসামি দেখানো হয়েছে৷ জামিনের আবেদন করে তার জামিন করাতে পারছি না৷”

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল এমরান বলেন, ‘‘আমি এখন বাসায় নেই৷ বাসায় থাকতে পারি না৷ আমি শুধু নয় যারা বিএনপির সাধারণ সমর্থক, যারা বিএনপিকে ভোট দেয়, তারাও পলাতক অবস্থায় আছেন৷ তারা ভয়ে রাস্তাঘাটে বের হতে পারছেন না৷ কারণ, পুলিশ একাধিক গায়েবি মামলা দিয়ে রেখেছে৷ কাউকে ধরতে পারলেই তাদের ওই মামলায় আসামি করে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ তারা বাসায় থাকতে পারছেন না ৷ পুলিশ বার বার গিয়ে আমাদের বাড়ি-ঘরে হয়রানি করছে৷ সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনও যাচ্ছে৷”

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘গায়েবি মামলার কারণে আমাদের চর ফ্যাশনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাইরেই বের হতে পারছে না৷ তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ অথচ তাদের নামে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেয়া হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ নিজেরাই গাড়ি পুড়িয়ে আমাদের নামে মামলা দিচ্ছে৷”

এইচআরডাব্লিউ বলছে, সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রতিযোগিতা দূর করতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক ও সহিংস দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে এবং ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা-কর্মী৷ তাদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে৷ বিএনপির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরডাব্লিউ দাবি করে, দলটির প্রায় ৫০ লাখ সদস্যের অর্ধেকই বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের সম্মুখীন৷

বিএনপিকে কারাগারে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচন?

বিএনপির এক কর্মী তাদের জনিয়েছেন, ‘‘উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত কাউকে ছাড়া হচ্ছে না, সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷'‘
আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশে বিরোধী দলকে দমন এবং সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রতিযোগিতা দূর করার জন্য বিরোধী রাজনীতিকদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷

এটাকে ‘সহিংস স্বৈরাচারী দমন-পীড়ন’ উল্লেখ করে এইচআরডাব্লিউ জানায়, অক্টোবরে বিক্ষোভ কর্মসূচি বেড়ে যাওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন৷ আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫০০'র বেশ মানুষ৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর বিএনপি ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয়৷ হরতাল চলাকালে এবং হরতালের পরে পুলিশ, বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ যদিও সব পক্ষেই সহিংসতা হয়েছে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে৷
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বিরোধীদের ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির' জন্য দায়ী করেছে৷ তারা অপরাধস্থল (ক্রাইম সিন) হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপির কার্যালয়গুলো সিলগালা করেছে৷

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের সিনিয়র নেতারা বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলাকে উৎসাহিত করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে চলমান সহিংসতাকে উসকে দিয়েছেন৷ সব পক্ষের সহিংসতার ঘটনা পুলিশের তদন্ত করা উচিত৷ কিন্তু তারা যখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালায়, তখন তাদের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার সক্ষমতা ক্ষুন্ন হয়৷ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চলমান সহিংসতায় দায়মুক্তি ভোগ করছে৷ কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে, প্রায়ই নির্বিচার গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন৷

সংস্থাটি দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, যথেচ্ছা গণগ্রেপ্তার, গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী থাকার প্রমাণ হাতে পেয়েছে৷

সরকার দেশে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে: ফারুক ফয়সাল

এইচআরডাব্লিউ বলছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ বাংলাদেশের মোট বার্ষিক রপ্তানি পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ৮৫ শতাংশই এই খাত থেকে আসে৷ অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশের কারখানাগুলো থেকে পোশাক কিনে থাকে৷ কূটনীতিক অংশীদারদের বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার যে এ ধরনের দমন-পীড়ন অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বিপদে ফেলতে পারে৷”

বিএনপি রবিবার জানায়, অক্টোবর থেকে শুরু করে তাদের অন্তত ১৬ হাজার ৬২৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অসংখ্য শীর্ষ নেতা আছেন৷ প্রসিকিউটর ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে বিএনপির অন্তত ৫২৬ জন নেতা-কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তাদের অধিকাংশের অনুপস্থিতিতে সাজা দেয়া হয়েছে৷ দলটির দাবি, বেশিরভাগই অভিযোগই ‘সাজানো‘৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সহিংস অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার এবং ভিডিও ও পুলিশের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এইচআরডাব্লিউ তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে দাবি করেছে৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যা বলেছে, তা সঠিক মনে করি৷ সরকার হঠাৎ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এমন আচরণ শুরু করেছে যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে না আসে তার ব্যবস্থা করছে৷ যেভাবে মানুষ আটকাচ্ছে, জেলখানায় নিচ্ছে তাতে এই সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে৷”

তিনি আরো মনে করেন, ‘‘এই সরকার দেশে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে৷ মানুষ যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে৷”

এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে কয়েকদিন আগে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্তি পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ দাবি করেছিলেন, ‘‘পুলিশ রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না৷ যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা এবং ওয়ারেন্ট আছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷”

২০২১ সালের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান