1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিক্ষোভে প্রতিবাদে সোচ্চার দিল্লি

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি | স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

লালকেল্লা, মান্ডি হাউস, যন্তর মন্তর, জামা মসজিদে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হলেন শয়ে শয়ে মানুষ৷ বিক্ষোভ বন্ধের জন্য পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করল। তাও তা বন্ধ হল কই?

https://p.dw.com/p/3V4tT
ছবি: DW/S. Ghosh

আয়তক্ষেত্রর মতো এলাকা জুড়ে শুধু পুলিশ৷ একদিকে ঐতিহাসিক লালকেল্লা, অন্যদিকে চাঁদনি চক৷ দুয়ের মাঝখানের রাস্তা ঘিরে ফেলা হয়েছে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে৷ তার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিশ তাদের সোজা নিয়ে গিয়ে তুলছে লালকেল্লার সামনে রাখা বাসের মধ্যে৷ ছেলে, মেয়ে, তরুণ, বৃদ্ধ প্রতিবাদ করতে আসা সকলের একই অবস্থা হচ্ছে৷ কারণ, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ প্রতিবাদ বন্ধ করে দিয়েছে৷

ক্ষোভ, বিক্ষোভ থাকলে তার বহিঃপ্রকাশ হবে কী করে? সারাদিন ধরে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে দিল্লি৷ যেখানেই প্রতিবাদ হয়েছে, সব জায়গায় ছবিটা একই৷ মান্ডি হউসে ১৯টি বাম দল ও সংগঠনের ডাকে প্রতিবাদ মিছিল ছিল আইটিও র ভগত সিং পার্ক পর্যন্ত৷ সেখানেও বিক্ষোভকারী দেখলেই ধরে বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, কংগ্রেস নেতা ও শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত সহ সব বিক্ষোভকারীকে তুমুল তৎপরতার সঙ্গে তুলে দেওয়া হল বাসে৷ সেখান থেকে কাছের থানায়৷

Indien Protest gegen neues Einbürgerungsgesetz
ছবি: DW/S. Ghosh

জামা মসজিদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে জামিয়ার ছাত্র আজিজের প্রশ্ন, ''আমরা কোথায় প্রতিবাদ জানাব বলতে পারেন? জামিয়ায় প্রতিবাদ বন্ধ, লালকেল্লার সামনে বন্ধ৷ তাই জামা মসজিদে এসে প্রতিবাদ দেখাচ্ছি৷ গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের বিভাজনমূলক আইন করা হবে, তার বিরুদ্ধে বলতে পারব না?'' শুধু দিল্লি কেন, বাঙ্গালোরে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ গান্ধীজির ছবি হাতে নিয়ে নিজের কথা বলতে এসেছিলেন, তাঁকে পর্যন্ত পুলিশের জনা কয়েক কনস্টেবল ধাক্কা মেরে নিয়ে চলে গেল৷ গান্ধীগিরিও দেখানো যাবে না৷ সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে সারা দেশের কাছে পৌঁছে গেল সেই ছবি, ভিডিও৷

লালকেল্লার সামনে একটা পোস্টার হাতে তুলে দেখাচ্ছিল এক যুবক৷ তাঁকে ঘিরে চিত্রসাংবাদিকরা ছবি তুলতে শুরু করতেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে উঠিয়ে দিল বাসে৷ জনা কুড়ি, পঁচিশের দল একটু দূরে চাঁদনি চকের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল৷ কিছুক্ষণ পরে তারাও স্লোগান দিতে দিতে বাসের দিকে চলে গেল৷ দুপাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ৷ লালকেল্লার সামনের প্রান্তর ভরা ছিল বাসে৷ প্রথমে গাদাখানেক সরকারি বাস৷ সেগুলিও ভরে গেল বিক্ষোভকারীতে৷ তখন গুচ্ছের বেসরকারি বাস নিয়ে আসা হল৷

দিল্লিতে বিক্ষোভ

বিক্ষোভ রুখতে মধ্য থেকে পুরনো দিল্লির বিশাল এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ ছিল। উনিশটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ ছিল৷ ট্রেনগুলো সেই সব স্টেশনে দাঁড়াচ্ছিল না পর্যন্ত৷ শুধু জংশন স্টেশনগুলিতে দাঁড়চ্ছিল৷ সেটাও শুধু  যাত্রীদের ট্রেন বদলের জন্য৷ উদ্দেশ্য একটাই, বিক্ষোভ চলবে না৷ পুরনো দিল্লি, মান্ডি হাউস, জামিয়ার মতো জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ করে রাখা হল৷ পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা হিংসা ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং বিক্ষোভ হতে দেয়নি৷ জামিয়া, আলিগড় সহ বেশ কিছু বিক্ষোভে হিংসা হওয়ায় তারা এই সাবধানতা নিয়েছে৷ এ দিন অবশ্য কোনও বিক্ষোভেই হিংসা হয়নি৷

পুলিশি ব্যবস্থা সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামানো গেল কি? এককথায় জবাব, না৷ দেশের দশ রাজ্যের তেরোটি বড় শহরে হাজার হাজার লোক প্রতিবাদে সামিল হলেন৷ পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু বিক্ষোভ থামল না৷ এই ঘটনা চিন্তায় রাখবে মোদী-শাহকে৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো