বিক্ষোভে মোদীকে উৎখাতের ঘোষণা দিলেন মমতা
২৯ নভেম্বর ২০১৬দেশজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনের অস্ত্রে শান দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ কলকাতা শহর হয়ে উঠেছে তাঁর মোদি-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান ক্ষেত্র৷ আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একের পর এক বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছেন মমতা, যার শুরু হলো সোমবার, ২৮ নভেম্বর৷ কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করলেন নেত্রী, সঙ্গে পথ হাঁটল জনসমুদ্র৷ তবে এই আন্দোলন যে শুধুই রাজনৈতিক নয়, বরং নাগরিক আন্দোলন, সেটা বোঝানোর জন্যই মমতা সঙ্গে রেখেছিলেন লেখক, শিল্পী এবং তাঁর অতি প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের৷ তাঁদের নিয়েই মঞ্চে উঠলেন তিনি৷ এবং ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে৷ বললেন, মোদীর হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে সারা দেশ রসাতলে যাচ্ছে আর মোদী আরামে ঘুমোচ্ছেন৷ নগদবিহীন লেনদেন বা ‘ক্যাশলেস' অর্থনীতি চালু করার যে কেন্দ্র সরকারি উদ্যোগ, তাকে ব্যঙ্গ করে মমতা বলেন, ‘‘ক্যাশলেস নয়, এই সরকার বেসলেস!''
বড় নোট বাতিলের এই ইস্যুতেই এদিন ১২ ঘণ্টার বনধ্ ডেকেছিল বামফ্রন্ট৷ মমতা ব্যানার্জি সেই বনধ্কে সমর্থন করেননি এবং জানিয়েছিলেন, জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে৷ কার্যত ছিলও তাই৷ বিন্দুমাত্র কোনও প্রভাব ফেলেনি বামেদের ডাকা বনধ্৷ যে ব্যর্থতার পর দু-তিন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বাম শিবিরে৷ একদিকে নেতারা দাবি করেছেন, যে বনধের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, যেহেতু ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের এমনিতেই বহু ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে রোজ৷ অন্য দিকে তাঁরাই বলেছেন, বনধের ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল৷ ফের তাঁরাই বলেছেন, বনধ্ ডাকা যে ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, তা মানুষ আজ না হলেও একদিন বুঝতে পারবেন৷
সব মিলিয়ে বাংলায় বাম রাজনীতির ছন্নছাড়া, বিভ্রান্ত চেহারাটাই এদিন আরও স্পষ্ট হয়েছে৷ এর পরেই কটাক্ষ করেছেন মমতা ব্যানার্জিও৷ বাম নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘রাস্তায় নেমে রাজনীতি করুন৷ শুনুন মানুষ কী বলছে!''
তৃণমূল নেত্রী এদিন বলেন, রাতারাতি বড় নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল৷ সেকথা তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছিলেন৷ বিকল্প পথ কী হতে পারে, তা-ও বাতলে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু মোদী সরকার কোনও কথাই শুনছেন না৷ মমতার হুঁশিয়ারি, হয় এই কালা সিদ্ধান্ত সরকার প্রত্যাহার করুক, নয় তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন৷ মঙ্গলবারই উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌতে সভা করতে যাচ্ছেন মমতা৷ সেখানে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে পুরনো বড় নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে একইরকম বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিরোধীরা৷ সেই বিক্ষোভে নিজের সমর্থন জানিয়ে আসবেন মমতা ব্যানার্জি৷
এদিকে এদিনই কালো টাকা স্বীকার করে, আয়কর এবং জরিমানা দিয়ে কিছু টাকা অন্তত বাঁচাবার নতুন এক সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছে৷ ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা' নামে এই ব্যবস্থায় যে কেউ নিজের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কালো টাকা বাঁচাতে পারবেন৷ ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া কালো টাকার ৩০ শতাংশ আয়কর, ১০ শতাংশ জরিমানা এবং কর ধার্য হওয়া অঙ্কের ৩৩ শতাংশ, অর্থাৎ মোট টাকার ১০ শতাংশ গরিব কল্যাণ হিসেবে ছেড়ে দিয়ে৷ এই সুযোগ থাকবে এপ্রিল, ২০১৭ পর্যন্ত৷