বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীর নির্বাচনি রোডম্যাপ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩আগামী বছর সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপি নেতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম চূড়ান্ত করা হয় দীর্ঘ টালবাহানার পর৷ আপত্তি ছিল দলের একাংশের৷ তাহলে কেন করা হলো মোদীকে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী? প্রথমত, দলের নেতা-কর্মীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ চাইছেন মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে৷ দ্বিতীয়ত, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে হিন্দুত্ব কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেয়া হবে৷ যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত মৌলবাদী হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি রাম মন্দির নির্মাণ, জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেয়া সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা বিলোপ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন ইত্যাদি৷ উল্লেখ্য, ভারতের দেওয়ানি বিধি মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়না৷ যেমন তালাক, ভরণপোষণ ভাতা, বিষয়সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা ইত্যাদির ফয়সালা হয় মুসলিম পার্সোনাল আইন অনুসারে৷
তবে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষিত হবার পর মোদী এবং অরুণ জেটলির মত বিজেপির কিছু শীর্ষ মনে করেন, ১৯৯০-এর দশকের হিন্দুত্ব এবং ২০১৪ সালের হিন্দুত্বের মধ্যে ফারাক বিস্তর৷ তাঁদের মতে, নির্বাচনী প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হবে মনমোহন সিং সরকারের দুর্নীতি, সরকারের নীতি পঙ্গুত্ব, সন্ত্রাস তথা দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় কংগ্রেস জোট সরকারের চরম ব্যর্থতা৷
তাই হরিয়ানায় তাঁর প্রথম নির্বাচনী সভায় মোদীর কণ্ঠে ছিল কট্টরপন্থির পরিবর্তে উদারপন্থির সুর৷ হিন্দুত্ববাদের কথা একবারও তোলেননি৷ জোর দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রে যোগ্য ও বলিষ্ঠ সরকার না থাকলে দেশের নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি নেই৷ তাই শক্তিশালী সরকার, শক্তিশালী নেতা শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রতীক৷ পাকিস্তানের প্রতিও কোনো হুঙ্কার না দিয়ে বলেছেন, লড়াই আমাদের দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে৷ পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, সন্ত্রাস আর বন্দুক-সংস্কৃতিতে কারোরই মঙ্গল হয়না৷ মোটকথা রাষ্ট্রনেতার ধাঁচেই পাকিস্তানের প্রতি তাঁর বার্তা৷ ভেঙে দিলেন তাঁদের ধারণা, যাঁরা ভেবেছিলেন মোদী এলেই যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হবে৷
পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিজেপি সরকার গড়ার মত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেনা৷ অর্থাৎ পাটিগণিতের হিসেবে সংসদের নিম্নসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৭২টি আসন হলো ম্যাজিক সংখ্যা৷ সেটা হয়ত নাও পেতে পারে বিজেপি৷ সেক্ষেত্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার গড়ার জন্য খুঁজতে হবে শরিকদল৷ মোদী-বিতর্কে বিহারের সংযুক্ত জনতাদলের নীতিশ কুমার বেরিয়ে গেছেন ধর্মীয় মেরুকরণের আশঙ্কায়৷ হালে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমে মুজফ্ফরনগরে জাঠ-মুসলিম গোষ্ঠী সংঘর্ষ তারই ইঙ্গিত স্পষ্ট৷ ফলে অন্য দল যেমন, তৃণমূল, বিজু জনতা দল মোদীর ডাকে সাড়া দেবে কিনা, সে বিষয়ে আছে ঘোরতর সংশয়৷
কাজেই মোদীর প্রথম পরীক্ষা দলের কোয়ালিশন নীতিতে ভারসাম্য আনা৷ ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা৷ সুনিশ্চিত করা উন্নয়নের রোডম্যাপ৷ বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক সংস্কারে মন দিয়ে জয় করা দেশি বিদেশি শিল্পপতিদের মন৷ এই পরীক্ষায় নরেন্দ্র মোদী কতটা সফল হবেন তা ভবিষ্যতই বলবে৷
গুজরাটের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্ম ১৯৫০-এ৷ ১৯৭১ সালে যোগ দেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসে৷ ১৯৮৭-তে বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক৷ ১৯৯০-এ এল কে আডবানির হিন্দুত্ব প্রচারের ‘রথযাত্রায়‘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন ২০০১ সালে৷ তাঁর শাসনকালের সবথেকে কলঙ্কজনক অধ্যায় গোধরা দাঙ্গা৷ তারপরও তিনি জয়ী হন বিপুল ভোটে৷ ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী৷