বিজ্ঞান ও শিল্পকলার মেলবন্ধন
৩ অক্টোবর ২০১৬বার্লিনের কেন্দ্রস্থলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের পেছনেই রয়েছে ‘পল ড্রুড ইনস্টিটিউট ফর সলিড স্টেট ইলেকট্রনিক্স'৷ এখানে ভিডিও শিল্পীরা গবেষণার তথ্যগুলিকে সমৃদ্ধ রংয়ের সম্ভারে পরিণত করেছেন৷ বিজ্ঞান এখানে জীবন্ত রূপ পাচ্ছে৷
রঙিন জানালার পেছনে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে যে কাজ চলছে, বার্লিনে তার কোনো তুলনা খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদার্থবিদ হেনিং রিশার্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় ও সাম্প্রতিকতম যন্ত্রগুলির একটি৷ এখানে গ্যালিয়াম নাইট্রাইট-এর স্তর সৃষ্টি হয়৷ এই উপকরণের জন্যই এ বছরের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে৷ ১৯৯৪ সাল থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে গ্যালিয়াম নাইট্রাইট নিয়ে কাজ চলছে৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো নতুন উপাদান পরীক্ষা করে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির জন্য নতুন প্রয়োগ খোঁজা৷ অর্থাৎ বলা যেতে পারে, আমরা ভবিষ্যতের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বার্তা বহন করি৷''
যারা ভেবেছিল, পরমাণু খালি চোখে দেখা যায় না, তাদের আবার নতুন করে ভাবতে হবে৷ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের দৌলতে গবেষণার মাধ্যমে সেই অসাধ্য সাধন করা গেছে৷ অতি ক্ষুদ্র জগত মানুষের নাগালে চলে এসেছে৷ কাটিয়া বার্লিন ভবিষ্যতের পৃথিবীর প্রয়োজনীয় জ্ঞান আরোহন করছেন৷ ইলেকট্রন রশ্মি বস্তু ভেদ করে তার রহস্য উন্মোচন করছে৷
হেনিং রিশার্ট জানান, ‘‘আমরা এক স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করি, যার মধ্যে আমরা পরমাণুর চরিত্র বদলে দিয়ে সাবস্ট্রেট-এর সুনির্দিষ্ট স্থানে বসাতে পারি৷''
আনাড়িদের মনে হতে পারে, এই মাইক্রোস্কোপ যেন কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র থেকে উঠে এসেছে৷ অদ্ভুত এই বস্তুটি দেখলে কেমন যেন ভয় লাগে৷
পদার্থবিজ্ঞানী খেসুস মার্টিনেস ব্লাংকো যন্ত্রটিকে খুব ভালো করে চেনেন৷ এটির সাহায্যে তিনি পরমাণুর চেন তৈরি করতে পারেন, তাদের চরিত্র বদলে দিতে পারেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন আমার বন্ধুরা ল্যাব দেখতে আসে, তাদেরকে আমার কাজ দেখাতে হয়৷ অথবা কাজের গতি-প্রকৃতি বোঝাতে হয়৷ এই প্রযুক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী বলে বোঝানো কঠিন৷ পরমাণু সত্যি দেখা যায়, তার চরিত্র বদলানো যায়৷ কিন্তু সবটাই অত্যন্ত ছোট জায়গায় ঘটে৷ সিস্টেম যাতে গরম না হয়ে যায়, তার জন্য সব লুকানো থাকে৷ মাইক্রোস্কোপের কাজ সম্পর্কে তো আর নতুন করে কিছুই বলার নেই৷ তাই আমাকে এটা তৈরি করতে হয়েছে৷ এটা আসলে এক থ্রিডি প্রিন্টার৷''
অর্থাৎ খেসুস-এর সত্যি এক সমস্যা হয়েছিল এবং প্রায় প্রতিবারের মতো তিনি এক সমাধানও খুঁজে বার করেছিলেন৷ নিজের কল্পনাশক্তি ও খেলার ইনস্টিংক্ট কাজে লাগিয়ে তিনি এ কাজ করেছিলেন৷
সংগীতশিল্পী জন করিম ফারাহ বার্লিন ও টোরন্টো – দুই শহরেই থাকেন৷ তিনি ধ্রুপদ, জ্যাজ ও আরব জগতের সংগীত পরিবেশন করেন৷ ভৌগলিক ও সময়ের সীমানা তাঁর কাছে কোনো বাধা নয়৷
‘স্টেট অফ টাইম' নামের একটি উৎসবে জটিল বিজ্ঞান ও শিল্পকলার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা চলেছে৷ উদ্যোগটি বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ক্রিস্টিয়ান রাউখ-এর নেতৃত্বে এক টিম এই ভাবনা নিয়েই কাজ শুরু করে৷ ক্রিস্টিয়ান রাউখ বলেন, ‘‘বিজ্ঞানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতেই এই সৃজনশীল উৎসবের আইডিয়া উঠে এসেছিল৷ দারুণ এই উদ্যোগ সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত স্তরে উদ্দীপনা জোগায়৷ শিল্পও এক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারে৷''
এই যেমন, কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে টাইম মেশিন – সেই ১৯৭০ সাল থেকে ইউনিক্স ঘড়ি সেকেন্ড গুনে চলেছে৷