বিতর্কিত নাটক
২৩ জুলাই ২০১২ইসলাম ধর্মের নবি হযরত মুহাম্মদ-এর অন্যতম নিকটতম সঙ্গী এবং দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবন আল-খাত্তাব'কে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঐতিহাসিক নাটক ‘ওমর'৷ ৭ম শতাব্দীতে ইসলাম ধর্মের সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা ছিল এই প্রভাবশালী শাসক ও ধর্মীয় নেতার৷
সৌদি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্য সম্প্রচার কেন্দ্র - এমবিসি জানিয়েছে, আরবি ভাষায় এটিই সবচেয়ে বড় মাপের নাট্যকর্ম৷ এই নাটকটিতে কাজ করেছেন ৩০ হাজার অভিনয় শিল্পী৷ কারিগরি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল ১০টি দেশের দক্ষ কর্মী৷ কলাকুশলীদের এই বিশাল বড় দলটি ৩০০ দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে ৩১ পর্বের এই নাটকটি তৈরি করেন৷ মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র রমজান মাসে এই নাটকটি দেখানো হচ্ছে৷ আর এই মাসে আরব অঞ্চলে টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যা থাকে সর্বোচ্চ৷
কিন্তু এখন এই নাটক সম্প্রচার নিয়ে শুরু হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক৷ সুন্নি মুসলমানদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ মিশরের রাজধানী কায়রো'য় অবস্থিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়৷ সেখান থেকে রায় দেওয়া হয়েছে, নবি মুহাম্মদ এবং তাঁর সঙ্গীদের ছবি তুলে ধরা ইসলামে নিষিদ্ধ৷ প্রায় একই মত এসেছে সৌদি আরবের ইসলামি অনুশাসন নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র দার আল-ইফতা থেকেও৷ ফলে সুন্নি পণ্ডিতরা একমত যে, ধর্মীয় শীর্ষ ব্যক্তিত্বের ছবি দেখানো হলে তাঁদের প্রতি অগাধ ভক্তি থেকে তাঁদের পূজা করা শুরু হতে পারে৷ অথচ ব্যক্তিপূজা করা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ৷
তাই এই নাটকটির সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য হাজার হাজার মানুষ ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে দাবি তুলেছেন৷ অনেকের মন্তব্য, এই নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রকারান্তরে নবি মুহাম্মদ এবং তাঁর সঙ্গীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে৷
মিশরের টেলিভিশন সমালোচক তারেক আল-শেন্নাউয়ি বলেন, এই নাটকের সম্প্রচার অব্যাহত রাখার অর্থ হলো আল-আজহার এবং দার আল-ইফতা'র মতো বড়মাপের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রায়কে অবজ্ঞা করা৷ তবে কায়রো'র সিনেমা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সানা হাশেম বলেন, ‘‘ধর্মীয় শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের এভাবে তুলে ধরা হলে বরং তাঁদের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটে৷''
এছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দাবি, এই নাটকটি তৈরির আগে এর ঘটনাপ্রবাহের ঐতিহাসিক সত্যতা এবং পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে মিশরের পণ্ডিত শেখ ইউসেফ আল-কারাদাউয়ি'সহ ইসলামের বড় বড় পণ্ডিতদের সাথে আলোচনা করে তাঁদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে৷ ফলে এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকে না৷
এএইচ / ডিজি (এএফপি)