বিপন্ন সুদানের মানবাধিকার
১ মার্চ ২০১৮মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, গণমাধ্যমের উপর আঘাত, অস্বচ্ছ নির্বাচন, মানবাধিকার সংগঠনগুলির ওপর আঘাত, এমনই বিবিধ অভিযোগ রয়েছে সুদান সরকারের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ আজকের নয়, দীর্ঘদিন ধরে বহু সংগঠনের রিপোর্টে বার বার উঠে এসেছে সুদানের ভয়াবহতার প্রসঙ্গ৷ এসেছে, সেখানকার গোপন জেলের কথা৷ বহু মানবাধিকার কর্মীকে নাকি সে সমস্ত জেলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয় এবং অত্যাচার চালানো হয়৷ কিন্তু এই কোনো অভিযোগই মানতে রাজি নয় সুদান সরকার৷ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম ঘানডৌরের মতে, তাঁদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে৷ এবং সে কারণেই এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে সুদানের বিরুদ্ধে৷ সুদানের মানবাধিকার নাকি বিশ্বের বহু দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে৷
মানবাধিকার লঙ্ঘন
দীর্ঘদিন ধরেই ‘কনফ্লিক্ট জোন’ বা যুদ্ধাঞ্চল হয়ে রয়েছে সুদান৷ সশস্ত্র সরকারবিরোধী শক্তির সঙ্গে সেখানে লাগাতার সংঘর্ষ লেগে আছে সরকারপক্ষের৷ অভিযোগ, বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করতে সাধারণ মানুষের উপরেও নানারকম অত্যাচার চালায় সুদান সরকার৷ সাম্প্রতিক অতীতে সেখানে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন ঘটনাটিকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছিল৷ খুন, ধর্ষণ, অকথ্য অত্যাচার কিছুই বাদ দেয়নি সরকারের সৈন্যবাহিনী৷ শুধু তাই নয়, দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা মানবাধিকার কর্মীদের ওপরেও অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল৷ ইব্রাহিম অবশ্য এসব কিছুই মানতে চাননি৷ তাঁর বক্তব্য, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের শবক শেখানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়৷ কিন্তু তা কখনোই মাত্রা ছাড়ায়নি৷
যদিও ‘গণহত্যা’-র পর সুদানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক আদালত৷ তবে তা কখনোই কার্যকরী হয়নি৷ এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে আদালতে সুদানের কোনো প্রতিনিধিই নেই, সে আদালতের রায়কে গুরুত্ব দেন না তাঁরা৷ যদিও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আফ্রিকান কমিশন অন হিউম্যান অ্যান্ড পিপলস রাইটসের মতো সংগঠন বারংবার তাদের রিপোর্টে সুদানের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেছে৷ তাদের সর্বশেষ রিপোর্টেও বলা হয়েছে, সুদানে এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরাই মুখ খুলছেন, তাঁদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে৷ ছাত্র, বিরোধী রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী কাউকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না৷
অকথ্য অত্যাচার
সুদানের ‘গণহত্যা’-র পর অসংখ্য ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলিও তাদের রিপোর্টে বহু ছবি ব্যবহার করেছিল৷ অকথ্য অত্যাচারের সমস্ত প্রমাণ মিলেছিল ওই সমস্ত ছবিতে৷ কিন্তু সে সব কোনো কিছুই মানতে নারাজ মন্ত্রীমশাই৷ তাঁর বক্তব্য, সুদানের অবস্থা খুব স্থিতিশীল নয়৷ নানারকম সমস্যা ঘিরে রয়েছে দেশটিকে৷ ফলে কখনো কখনো কঠোর হতে হয়৷ কিন্তু তা কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নয়৷ সুদানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না৷ গোপন জেলের প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, সেখানে তেমন কোনো কারাগার নেই৷ যা আছে, সবই প্রকাশ্যে৷ যদি সেখানকার গোপন কারাগারেরও যথেষ্ট প্রমাণ আছে আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে৷ এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইব্রাহিম বলেন, এনজিও-গুলি সুদান সম্পর্কে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে৷ আসল পরিস্থিতির কথা কোথাও বলা হয় না৷ এবং সে কারণেই এনজিও-গুলির কাজকর্ম নিয়ে খুশি নয় সুদান সরকার৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, কোনো এনজিও ঠিক তথ্য পরিবেশন করতে চাইলে সুদান সরকার সবরকম সহায়তা করবে৷
নির্বাচন দুর্নীতি
দক্ষিণ সুদান আলাদা হওয়ার পর ২০১৫ সালে সুদানে প্রথম নির্বাচন হয়৷ বিরোধীদের বক্তব্য নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছিল৷ প্রায় সমস্ত ভোটই লুঠ করেছিল বর্তমান সরকার৷ সাধারণ মানুষের রায় ভোটে প্রতিফলিত হয়নি৷ কিন্তু মন্ত্রীমশাইয়ের বক্তব্য, তিনি নিজে ছিলেন নির্বাচনের দায়িত্বে৷ ফলে তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারেন যে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছ হয়েছিল৷ বরং বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রমাণ করুক তারা৷ এদিকে আফ্রিকান ইউনিয়নও সুদানের নির্বাচনকে স্বচ্ছ বলতে রাজি নয়৷ তাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে যে, নির্বাচনের সময় বিরোধী তো বটেই, এমনকি, বহু সাংবাদিককেও গ্রেফতার করে গোপন কারাগারে পাঠানো হয়েছিল৷
গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ
সুদানের বিরুদ্ধে আরো একটি বড় অভিযোগ হলো, সেখানে সংবাদমাধ্যমকে ঠিকমতো কাজ করতে দেওয়া হয় না৷ সরকারবিরোধী কথা বললেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়৷ নানারকম অত্যাচারও চালানো হয়৷ যদিও এই অভিযোগও মানতে রাজি নন ইব্রাহিম৷ তাঁর বক্তব্য দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই সরকারের সমালোচনা করে৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সরকার কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয় না৷ যদিও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, দু-একটি ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বাধ্য হয়েছে তাঁর সরকার৷
এসজি/ডিজি
সুদানে কি সত্যিই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে? মন্তব্য করুন নীচের ঘরে৷