উন্নয়নে নতুন চিন্তাভাবনা
১৮ জুলাই ২০১৩প্রবল বৃষ্টি, নদীতে জলস্ফীতি এবং হিমবাহ হ্রদ ভেঙে পড়ায় উত্তরাখণ্ডের হিমালয় এলাকায় নামে ধস৷ উত্তরাখণ্ড সরকারের সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, এই বিপর্যয় যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানুষের তৈরি৷ পরিবেশবিদরা মনে করেন, রাজ্যে বহমান প্রধান তিনটি নদী মন্দাকিনি, অলকানন্দা এবং ভাগিরথী নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ, পর্বত ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া, বেআইনিভাবে ব্যাপক অরণ্য নিধন করা, নদীতীরে এবং শুষ্ক নদীবক্ষে বাড়িঘর, হোটেল, গেস্টহাউস গড়ে ওঠা এবং তার ওপর প্রবল বর্ষণ – এসবের অভিঘাতেই নেমে আসে এই ধ্বংসলীলা৷ প্রসঙ্গত, ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে হিমালয় অপেক্ষাকৃত নতুন৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই ভঙ্গুর৷
তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় নিবারণে নতুনভাবে উন্নয়নের ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার৷ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়েছে, যাতে উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা হাত ধরাধরি করে চলতে পারে৷ সংবাদমাধ্যমের কাছে একথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা৷ তাঁর কথায়, ভবিষ্যতে নজর দিতে হবে ইকো-সিস্টেমের দিকে৷ পালটাতে হবে নির্মাণ প্রযুক্তি৷ একমাত্র তবেই পাশাপাশি চলতে পারবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া৷
রাজ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৫০০টি ছোট-বড় বাঁধ নির্মাণ বা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরাখণ্ড জলবিদ্যুৎ নিগম ৪৫টি বাঁধ নির্মাণ করেছে এবং ছোট-বড় প্রায় ২০০টি বাঁধ তৈরির কাজ চলেছে এ মুহূর্তে৷ রাজস্ব বাড়াতে এই সব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্য রাজ্যকে বিক্রি করারও কথা৷
বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, ভূতাত্ত্বিক ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উত্তরাখণ্ডে একটি ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷ ঐ কর্তৃপক্ষ জলবিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজের দায়িত্বে থাকবে৷ নদীতীরে নির্মিত বাড়ি-ঘর আংশিক বেআইনি হলেও নদীপথ পরিবর্তনই এর প্রধান কারণ৷ নদী এমন জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যেটা অভূতপূর্ব৷ সেটা আর হতে দেয়া হবেনা৷ এমনকি, শুকনো নদীবক্ষেও সব নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হবে৷ মজবুত করা হবে নদী পাড়৷
জানা গেছে, উত্তরাখণ্ডে এখনও প্রায় চার হাজার গ্রাম বিচ্ছিন্ন৷ সেখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে পানীয় জল, না আছে টেলিফোনের মতো কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ অবশ্য টেলিফোন গত দু-তিন দিনে আংশিকভাবে চালু হয়েছে৷
উত্তরাখণ্ড ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেদারনাথ মন্দির এলাকার জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরি হবে৷ রোপ-ওয়ে তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে৷ এর জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার এবং উত্তরকাশির হিমালয় মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সাহায্য নেয়া হচ্ছে৷ এই দেবভূমির চারটি তীর্থ, যার চলতি নাম ‘চারধাম‘, সেই চারধামের যাত্রাপথ যাতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ খুলে দেয়া যায় তার জন্য যুদ্ধকালীন অবস্থার ভিত্তিতে কাজ চলবে৷
উত্তরাখণ্ড পুনর্নির্মাণের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা৷ বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক আংশিক আর্থিক সাহায্য দিলেও, রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডের উন্নতি পিছিয়ে গেল অন্তত তিন বছর৷