1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিপর্যয়ও চোখ খুলে দেয় না

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা১৩ মে ২০১৩

কর্মস্থলে দুর্ঘটনার যেসব খবর বিভিন্ন সময়ে সমাজকে সচকিত করে, তার থেকে কতটা শিক্ষা নেয় প্রশাসন অথবা নাগরিক সমাজ? আদৌ কোনও শিক্ষা নেয় কি?

https://p.dw.com/p/18Wij
In this photo taken on April 7, 2009, a textile worker works at a garment factory in Erode about 120 kilometers (74.5 miles) east of Coimbatore, India. For years, textile jobs helped tens of millions of Indians clamber onto the bottom rungs of the nation's fast-expanding middle class. Now, the global economic meltdown is pushing them and many others back into poverty. (AP Photo/Aijaz Rahi)
ছবি: AP

শুনলে অবাক হবেন, খাস কলকাতা শহরে এমন জায়গা আছে, যেখানে ছবি তোলা যায় না৷ যদিও সেটা কোনও সংরক্ষিত সরকারি এলাকা নয়, যে গোপনীয়তার স্বার্থে ছবি তোলা নিষিদ্ধ৷ নয় কোনও ধর্মীয় স্থান যে পবিত্রতা রক্ষার খাতিরে ক্যামেরা দরজাতেই ছেড়ে আসতে হয়৷ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত কোনও দূর্মূল্য প্রত্মবস্তু বা কোনও সুরক্ষিত সেতুপথ বা গণ পরিবহণ ব্যবস্থাও নয় যে ছবি তুললে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে৷

এটা রীতিমত সর্বজনিক একটা জায়গা, বস্তুত রেডিমেড পোশাক তৈরির এক বিরাট কারখানা যেখানে কয়েক হাজার কর্মচারী কয়েকটা শিফটে কাজ করেন৷ কলকাতার বন্দর এলাকায় শুধু এই একটা কারখানাই নয়, কার্যত একটা বিস্তীর্ণ এলাকা এই রকম পোশাক কারখানায় ঠাসাঠাসি৷ এরা যে পোশাক তৈরি করেন, তা বিভিন্ন নামজাদা লেবেল লাগিয়ে চলে যায় শহরের, ভিনরাজ্যের এমনকি বিদেশেরও অভিজাত বিপণিতে৷

কিন্তু এই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কারখানার মাতব্বরদের সন্দেহের নজর পড়বে আপনার উপর৷ কেন কথা বলছেন, কীসের প্রয়োজনে, ওদের কথা জানার পর আপনি সেটা নিয়ে কী করবেন, কাকে বলবেন, সাংবাদিকতার কোন দায় আপনাকে ঠেলে পাঠালো এই কারখানায়, এমন হাজারো জেরার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে৷ তার একটাই কারণ৷ যে পরিস্থিতির মধ্যে এই সব কারখানার দর্জিরা কাজ করেন, তা বাইরের পৃথিবীর লোক জানুক, সেটা ওরা চান না৷

প্রথমত, যে ন্যুনতম মজুরিতে, যে অসুবিধার মধ্যে ওদের কাজ করতে হয়, সেটা কোনও সরকারি নিয়ম-নির্দেশিকার ধার ধারে না৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই শ্রমিকদের জন্য যে ভাতা, বা যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আইনত আবশ্যিক, তা কেবল খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে৷ আর তার থেকেও বড় কথা, যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে এরা কাজ করতে বাধ্য হন, তা নিয়ে কথাবার্তা হোক, সেটা কারখানা-মালিকরা আদৌ চান না৷ চারদিক ঢাকা, জানলাবিহীন একটা টানা শেড, ঢোকা-বেরনোর একটিই দরজা৷ মাথার উপরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে আছে জোড়াতালি দেওয়া বিদ্যুতের তার৷

দক্ষিণের বন্দর এলাকা থেকে এবার চলে যান পশ্চিমের বড়বাজার এলাকায়, যা শহরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র৷ এখানে অবস্থা আরও ভয়াবহ৷ পুরনো কলকাতার এই এলাকায় বেআইনিভাবে কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত সব দোতলা-তিনতলা বাড়িতেই হয় পুরবিধি লঙ্ঘন করে এক বা একাধিক তলা বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে, অথবা, আরও বিপজ্জনক, পুরনো আমলের উঁচু সিলিঙের বাড়ির মধ্যেই ঘরের মাঝ বরাবর কাঠের মাচা বেঁধে দুভাগ করে জায়গাটাকে বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে৷

এইসব বাড়ির অধিকাংশেরই বৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ দুটি বা তিনটি৷ কিন্তু যেহেতু ওই মাচাবাঁধা জায়গাগুলো বিভিন্ন ধরনের কারখানার জন্যে ভাড়া দেওয়া হয়, ওই বৈধ সংযোগ থেকেই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বাকিদের৷ ফলে ঘটনা যেটা ঘটছে, পুরনো দিনের ভগ্নপ্রায় বাড়ির মধ্যে, বাড়ির ধারণক্ষমতার থেকে অনেক বেশি লোক, প্রায় জতুগৃহের মতো একটা পরিস্থিতিতে, স্রেফ জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন৷

সরকার বা পুর প্রশাসন এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা জানে না, তা নয়৷ বড়বাজার অঞ্চলের অধিকাংশ সোনার দোকানের কর্মচারী, জরির কারিগর, এমব্রয়ডারি শিল্পী এবং আরও অসংখ্য ধরনের ব্যবসা এবং পেশার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এভাবেই কাজ করে চলেন, যতক্ষণ না বড় কোনও বিপর্যয় নাগরিক সমাজে শোরগোল ফেলে দেয়৷ কিন্তু তার পরেও কি সরকারের টনক নড়ে? আদৌ না৷ রাজ্যের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সগর্বে প্রচার করা হতো, অসংগঠিত শিল্পক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীদের কী ব্যাপক হারে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে৷ নতুন সরকারের আমলেও ঢাক ঢোল পিটিয়ে সামাজিক মুক্তি কার্ড-এর মতো সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল, রয়েছে সেই তিমিরেই৷

Yellow Kolkata taxis and commuters outside Howrah Railway Station in morning rush hour, Howrah, Kolkata (Calcutta), West Bengal, India, Asia Keine Weitergabe an Drittverwerter.
শুনলে অবাক হবেন, খাস কলকাতা শহরে এমন জায়গা আছে, যেখানে ছবি তোলা যায় না (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/Annie Owen/Robert Harding World Imagery

একটা সম্পূর্ণ অন্য উদাহরণ৷ প্রতি বছর উৎসবের আগে দক্ষিণ ভারতের কোনও না কোনও আতসবাজির কারখানায় বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডে বহু লোকের প্রাণ যায়, যাদের অধিকাংশই মহিলা অথবা কিশোর-কিশোরী৷ তাতে কী উৎসবের রোশনাই কিছুমাত্র ম্লান হয়? হয় না৷ কারণ, প্রশাসন তো বটেই, নাগরিক সমাজেরও বোধোদয় হয় না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য