বিমানচালনা গাড়ি চালানোর মতোই সহজ?
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮বিমানটাকে অন্য সব বিমানের মতোই দেখতে৷ ছোট বিমান চালানোর ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা বাড়ানো যায় কিনা, তা দেখার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে ৷
ইউরোপে ছোট বিমানগুলির ক্ষেত্রে প্রতি ১০,০০০ ঘণ্টা উড়ালপ্রতি কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে৷ বড় এয়ারলাইনারগুলির তুলনায় ছোট বিমানের সেফটি রেকর্ড অনেক বেশি খারাপ৷ গবেষকরা সে বিষয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন৷
ধরা যাক, অস্ট্রিয়ান আল্পসের উপর দিয়ে একটি সাধারণ ছোট বিমান উড়ে যাচ্ছে – বিমানটির ফ্লাইট কন্ট্রোল কিন্তু মানুষের হাতে নয়; ইলেকট্রনিক সংকেত আর কম্পিউটারের উপর নির্ভর করে বিমানটি চলেছে৷ সহজ কথায়, পাইলট একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে বিমানটি চালাচ্ছেন – সারা বিশ্বে যা ডিজিটাল ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার' উড়াল প্রণালী বলে পরিচিত৷
‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার'
ছোট বিমানে ওড়ার নিরাপত্তায় ব্যাপক অবদান রেখেছে এই প্রণালী৷ বড় বড় এয়ারলাইনার ও বিজনেস জেটে বহু দশক ধরে এই প্রণালী ব্যবহার করা হচ্ছে – কিন্তু ছোট বিমানের জন্য এই ফ্লাইট সিস্টেম বড় ভারি, আকারে অনুপযোগী এবং দামী বলেই এযাবৎ ধরে নেওয়া হত৷ তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গবেষণা প্রকল্পে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া হয়৷
র সেবাস্টিয়ান পোলেনৎস বললেন, ‘‘আমরা যদি বিমানচালনাকে গাড়ি চালানোর মতো সহজ করে তুলতে চাই, তাহলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না যে, সব পাইলট বিমানচালনায় উচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়ে বিমানে উঠবেন ও বিমান চালনার সময় নানা ধরনের যোগ্যতা প্রদর্শন করবেন৷ কাজেই আমাদের কম অভিজ্ঞ বিমানচালকদের জন্য এমন সব ফাংশন ও অপারেশনের প্রণালী রাখতে হবে, যার ফলে এই বিমানগুলো আরো নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে৷''
‘ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল'
জার্মানির একটি এয়ারোস্পেস ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা নিরাপদ, অটোমেটেড ও অটোনোমাস বিমানচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার তৈরি করেছেন৷ সেজন্য তাদের এমন সব ইলেকট্রনিক প্রণালী উদ্ভাবন করতে হয়েছে, যেগুলি বিমানের কর্মপদ্ধতিতে কোনোরকম গুরুতর গোলযোগ দেখা দিলেও সামাল দিতে পারে – এমনকি বিমানচালক যদি সে গোলযোগ খেয়াল পর্যন্ত না করে থাকেন, সেক্ষেত্রেও৷
নেদারল্যান্ডসে গবেষকরা একটি সিমিউলেটরে একটি ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম পরীক্ষা করেন৷ পরীক্ষায় দেখা যায় যে, সিমিউলেটর বিমানের উড়ালে অথবা পারিপার্শ্বিকে ব্যাপক গোলযোগের অনুকরণ করলেও, ঐ ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম তা সামলে দিতে সক্ষম হয়েছে, এমনকি টেস্ট পাইলটদের হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করতে হয়নি৷
এয়ারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আলেক্সান্ডার ইন 'ট ভেল্ড জানালেন, ‘‘খারাপ আবহাওয়ায় পড়লে অথবা বাতাসের ধাক্কা এলে, বিমানটাকে ঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন৷ এই ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম লাগানোর ফলে শুধুমাত্র বিমানের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করলেই চলে – যা খুব সহজ৷ সিস্টেম সুইচ অন করলেই আর চিন্তা নেই৷ তা বলে বিমান কিন্তু নিজে থেকে উড়ছে না৷ কিন্তু পাইলটকে শুধু ছোটখাট পরিবর্তন করতে হচ্ছে৷ বাতাসের ধাক্কার ফলে যে বিমানের দিক বা গতি পরিবর্তন ইত্যাদি রদবদলের কাজ করতে হয়, সিস্টেমই তা করে দিচ্ছে৷''
গবেষকদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হল: একটানা ওড়া এক কথা – কিন্তু আকাশে ওঠা বা মাটিতে নামার সময়েও ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল ব্যবহার করা কি সম্ভব?