1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অবৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ নেই’

২২ মে ২০১৮

বাংলাদেশ থেকে বৈধ বা অবৈধভাবে বিদেশে, বিশেষ করে ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷ কিন্তু কেন এই অবৈধ যাত্রা? এ নিয়েই ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ৷

https://p.dw.com/p/2y0Qq
ছবি: picture alliance/Asian News Network

ডয়চে ভেলে: ইউরোপে বসবাস করা অবৈধ বাংলাদেশিরা কি ফেরত আসছেন?

মোহাম্মদ ইউসুফ: হ্যাঁ

বছরে এমন কতজন আসেন? কোনো পরিসংখ্যান আছে?

ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে যে প্রতিদিন বাংলাদেশিরা ফেরত আসছে, এমন নয়৷ দেখা যাচ্ছে তিন মাস বা ছ'মাস পরে একসঙ্গে একটা গ্রুপ চলে আসছে৷ আবার কোনো বছর আসেও না৷ এই হিসাবটা মূলত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখে৷ তবে এই সংখ্যা খুব একটা বেশি না৷

ফেরত পাঠানোর আগে বিদেশি কর্তৃপক্ষ কি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে?

তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না৷ তবে সরকারের একটা ‘সোর্স' আছে, সেখানে তারা যোগাযোগ করে৷ যেমন ধরুন জার্মানি বা ফিনল্যান্ড – তারা যখন সিদ্ধান্ত নেয় কাউকে ফেরত পাঠাবে, তখন তারা ঐ দেশে আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ দূতাবাস তখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তারপর পাঠায়৷ তখন এখানে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্র্যাক বা আইএলও, এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ 

Interview of Airport Magistrate Md. Yousuf for dwAlaap - MP3-Stereo

যারা ফেরত আসে সরকার তাদের কি করে?

ঐখানে যারা অনেকদিন ধরে ছিল তারা নিশ্চয় হঠাৎ করে চলে আসার পর হতাশায় ভোগে৷ তারা যাতে ট্রমায় না পড়ে, সেই কারণে সরকার বেসরকারি সংস্থা, মানে আমি যাদের কথা বললাম, বিশেষ করে ব্র্যাক, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিকভাবে একটা সেন্টারে রাখে৷ ব্র্যাক তাদের নিজস্ব উদ্যোগে এটা করে৷ অন্যান্য অনেক সংস্থাও আছে৷ এরপর তাদের কাউন্সিলিং করা হয়৷ কেউ যদি নিজের বাড়ি যেতে চায়, তখন তাদের সেখানে পাঠানো হয়৷ অনেকক্ষেত্রে এদের কর্মসংস্থানও করে ব্র্যাক বা সরকার৷

এভাবে বিদেশে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের বিমানবন্দরে আটকানোর কি কোনো ব্যবস্থা আছে?

আসলে বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ যারা যাচ্ছে, তারা অবশ্যই বৈধভাবে যাচ্ছে৷ তাদের কাছে একটা পাসপোর্ট এবং কোনো না কোনো দেশের ভিসা অবশ্যই থাকে৷ যাওয়ার পর সে কোনো এক সময় অবৈধ হয়ে যায়৷ অথবা সে তৃতীয় কোনো দেশে গেলে বৈধভাবে, ভিসা নিয়ে যায়৷ এরপর সে ওখান থেকে ইউরোপের কোনো দেশে জল বা স্থলপথে ঢুকে পড়ে৷ অর্থাৎ সে অবৈধ হয়ে যায়৷ মূলত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ এখান থেকে যারা যাচ্ছে তারা বৈধভাবেই যাচ্ছে৷

ইউরোপের কোন দেশে অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বাস করেন?

এমন কোনো হিসেব নেই৷ তবে আমরা যেটা দেখি, ইদানীং জার্মানি থেকে অনেক মানুষ ফিরে আসছে৷ ইটালি থেকেও আসে৷ ইটালিতে ঢোকার সম্ভবত অনেকগুলো রুট আছে বিভিন্ন দেশ থেকে৷ এ সব দেশ থেকেই বেশি মানুষ ফিরে আসছে৷

শুধুমাত্র ঐ সব দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতেই কি তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন?

এখানে একটা বিষয় আছে৷ যারা ইউরোপের কোনো একটি দেশের ভিসা নিয়ে সেখানে যাচ্ছে, সেই ভিসা যে ধরনের ভিসাই হোক না কেন, তাদের ফিরে আসার হার কিন্তু অনেক কম৷ কোনো না কোনোভাবে তারা সেখানে ‘পিআর' বা ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্টশিপ' ম্যানেজ করে ফেলছে৷ এ কারণে তারা ওখানে থাকতে পারে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো – কারা ফেরত আসছে? ওই যে বললাম, তৃতীয় কোনো দেশ থেকে জল বা স্থলপথ দিয়ে অবৈধভাবে যারা ঢুকে পড়ছে, তারাই ফেরত আসছে৷

ইউরোপে ধরা পড়ার পর নিশ্চয় তাদের জেল-জরিমানার বিধান আছে?

মধ্যপ্রাচ্যে এমন হয়৷ কিন্তু ইউরোপে শেষ মুহূর্তে, অর্থাৎ দেশে পাঠানোর আগে এদের ধরে৷ এরপর তাদের একটা সেন্টারে রাখে৷ তার আগে তাকে হয়ত একটা সীমারেখা দিয়ে দেয়, যে তুমি এই এলাকার বাইরে যেতে পারবে না বা এত সময়ের মধ্যে এখানে বসে ব্যবসা করতে পারবে৷

সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যারা ফেরেন, তাদের আপনারা কী করেন?

কোনো দেশে অপরাধ করে কেউ যদি সাজা পায়, তাহলে সেই সাজা শেষ হওয়ার আগে তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাবেই না৷ তার মানে সাজা শেষ করেই সে আসে৷ ফলে সে যখন আসে, তখন সে নিরাপরাধ৷ এখানে তাকে নতুন করে সাজা দেয়ার প্রয়োজন হয় না৷ তাছাড়া এক দেশে অপরাধ করলে অন্য দেশে তার বিচারও করা যায় না৷ 

বিদেশে কেউ অপরাধ করে আসলে এখানে কি আটকানোর ব্যবস্থা আছে?

বিদেশে অপরাধ করে যদি সে ধরা পড়ে, তাহলে সেখানেই তার সাজা হবে৷ যে দেশে সে অপরাধ করবে, সেখানে সে ধরা পড়লে কখনই তাকে সাজার জন্য স্বদেশে পাঠাবে না৷ যখন তাকে পাঠাচ্ছে, তখন তাকে মাফ করে দিয়েই পাঠাচ্ছে৷ আর ফেরত পাঠিয়ে দেয়াটাই এক ধরনের সাজা৷ সুতরাং এখানে নতুন করে সাজা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না৷ কেউ চাইলেও পারবে না এখানে তাদের সাজা দিতে৷

অপরাধ করেই কি পালিয়ে আসা সম্ভব?

সেটা তো হতেই পারে৷ তার আবার ভিন্ন একটা ‘প্রসিডিউর' আছে৷ তখন ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট' তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়৷ ইন্টারপোল-এর সহযোগিতা নিতে হয়৷ এখানে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা আছে৷ এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে ঐ দেশের ‘রিকুইজিশন' থাকতে পারে যে, অপরাধীকে আমাদের কাছে ফেরত দাও৷ তখন আমাদের সরকার তাকে ফেরত দেবে কি দেবে না, সেটা আলাদা বিষয়৷

সাধারণত ইউরোপের কোন দেশ থেকে বাংলাদেশিরা বেশি ফিরে আসছেন?

আমরা মাঝে মধ্যে দেখি জার্মানি থেকে চাটার্ড বিমানে এক গ্রুপকে ফেরত পাঠানো হয়৷ তবে সেটা বছরে একবার বা দু'বছরে একবার৷ ইটালি থেকে কিছু ফিরে আসে, সেটাও আমরা দেখি৷ হ্যাঁ, এই দু'টি দেশ থেকেই এমন ঘটনা বেশি দেখি আমরা৷

এ সব মানুষদের ওখানে অবৈধভাবে যাওয়ার মূল কারণ কী?

মূল কারণটা অবশ্যই অর্থনৈতিক অভিবাসন৷ সে হয়ত ঐ দেশের একটা বৈধ ভিসা ম্যানেজ করতে পারছে না, সে কারণে অবৈধ পন্থায় যাচ্ছে৷ অথবা দেখা যাচ্ছে যে, সে তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছে বৈধভাবে৷ তারপর সেখান থেকে অবৈধভাবে ইউরোপের কোনো দেশে চলে যাচ্ছে৷ এ কারণেই আমরা এটাকে অর্থনৈতিক মাইগ্রেশন বা অভিবাসন বলছি৷

এভাবে অবৈধ পন্থায় যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?

দেখুন, কেউ অবৈধ হওয়ার জন্য যায় না৷ মানুষ কখনও অবৈধ হয় না৷ শুধুমাত্র তার ‘স্ট্যাটাস'-টা হয়ত ঐ দেশের প্রেক্ষাপটে ‘ইললিগ্যাল' হয়ে যায়৷ সেটাকে আমরা অবৈধ বলতে পারি না৷ যারা যাচ্ছে, আমি বলব তারা মহৎ উদ্দেশ্যে যাচ্ছে৷ তার যে চিন্তা-ধারা, সেটা অনুযায়ী সে নিজের ভালো এবং দেশের ভালোর কথা চিন্তা করেই যাচ্ছে৷ যাওয়ার আগে সে যদি জানত যে ওখানে গেলে তাকে হয়রানির শিকার হতে হবে, তাহলে কিন্তু সে বৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টাই করত৷ এ কারণে যারা যাচ্ছে, তাদের সচেতন করতে হবে এবং বৈধভাবে যাওয়ার পন্থাগুলো আরো সহজ করতে হবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য