বিলকিস বানো মামলায় গুজরাট সরকারকে নোটিস
২৫ আগস্ট ২০২২স্বাধীনতা দিবসে গুজরাট সরকার বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় ১১ জন অপরাধীকে বিতর্কিত আইনের বলে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এনিয়ে তিনটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে আদালতের এই নোটিস। দুই সপ্তাহ বাদে ফের মামলাটি শোনা হবে।
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় ১১জন মিলে ধর্ষণ করেছিল ২১ বছরের বিলকিস বানোকে। সে সময় বিলকিস গর্ভবতী ছিলেন। বিলকিস অভিযোগ করেছিলেন, তার চোখের সামনে পরিবারের সাতজনকে হত্যা করা হয়েছিল। যার মধ্যে তার তিন বছরের শিশুও ছিল। পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এরপর গর্ভবতী বিলকিসকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।
২০০৮ সালে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত ওই ঘটনায় ১১জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদের আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেষ দেওয়া হয়। হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ওই ঘটনার জন্য বিলকিসকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, চাকরি এবং বাড়ি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি সেই মামলা নিয়েই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গত ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে গুজরাট সরকার ওই ১১ জন অপরাধীকে জেল থেকে মুক্ত করে। বলা হয়, সংবিধানের বিশেষ আইনি ধারা মেনেই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যাকে সংবিধানের ভাষায় রেমিশন পলিসি বলা হয়। যদিও ওই পলিসি নিয়ে আইনি বিতর্ক আছে। আদৌ রাজ্য সরকার সেই পলিসি ব্যবহার করতে পারে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। প্রায় একই সময়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলিও একটি আবেদনপত্র জমা দেন। আরো এক ব্যক্তি একই পিটিশন দেন। বৃহস্পতিবার ওই তিনটি পিটিশনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে মামলাটি শোনে। সেখানেই গুজরাট সরকারের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মুম্বই হাইকোর্টের যে বিচারক প্রথম মামলার রায় দিয়েছিলেন তিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত। গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত শুনে ইউডি সালভি সংবাদমাধ্যমের কাছে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, ''এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিচারকের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল গুজরাট সরকার? আমার সঙ্গে কেউ আলোচনা করেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল? সন্দেহ হচ্ছে, আদৌ নিয়ম মেনে একাজ করা হয়েছে কি না!''
বস্তুত, যে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গুজরাট সরকার জানিয়েছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বিলকিস বানো মামলা প্রথম থেকেই নানা বিতর্ক দেখেছে। অভিযোগ উঠেছে, গুজরাট সরকার মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। শেষপর্যন্ত ন্যায় পেয়েছিলেন বিলকিস। আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার পর বিলকিস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন। দেশের শাসনকাঠামোর উপর আর ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়েছে, দুই সপ্তাহ পর ফের এই মামলা শোনা হবে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এনডিটিভি)