1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিয়ে যেভাবে হয়ে ওঠে দুই কোটি টাকার ‘বিবাহোৎসব’

২৭ অক্টোবর ২০২৩

বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায়, কিভাবে, কাদের জন্য এখন প্রায় মহোৎসবের মতো ডয়েচে ভেলেকে তা-ই জানিয়েছেন ক্রিয়েটিভ ওয়েডিং প্ল্যানার অ্যান্ড ইভেন্ট মানেজমেন্ট-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রহমতউল্লাহ পপেল৷

https://p.dw.com/p/4Y7lS
Heirat von Elita Karim (Sängerin und Journalistin aus Bangladesh)
ছবি: Privat

ডয়চে ভেলে:  প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ওয়েডিং প্ল্যানিংয়ের ব্যবসা কতদিন ধরে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে?

মো. রহমতউল্লাহ পপেল: এটা শুরুর দিকে এরকম প্ল্যান করে হতো না৷ আমরা শুরু করি ২০১০ সাল থেকে৷ আমি ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশুনা করেছি৷ প্রথমে বাংলাদেশে, পরে ফ্রান্সে৷ ওখানে আমি এই ওয়েডিং প্ল্যানিংয়ের ব্য্যাপারটি দেখি৷ তখন হয়তো দুই-একজন এদেশে শুরু করেছে৷ আমি দেশে ফিরে ব্যবসাটি শুরু করি৷

এই ব্যবসা এখন কোন পর্যায়ে আছে?
এখন অনেকেই কাজ করছেন৷ তরুণরা যেমন করছেন, তেমনি অবসরপ্রাপ্ত প্রফেশনালরাও এটা করছেন৷ অনেকেই এটাকে এখন পেশা হিসেবে নিচ্ছেন৷ এখন ছোটখাট জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও অনেকে আমাদের ডাকেন৷

ওয়েডিং প্ল্যানাররা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সব বিষয় নিয়েই কাজ করেন, নাকি কোনো একটি অংশ দেখেন?

আপনি আমাদের কাছে যদি আসেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যা আয়োজন থাকে আমরা সব কিছুই করে দিই৷ আমরা ঢাকা শহরের ১৪টি প্রমিন্যান্ট ভেন্যুতে অনুষ্ঠান করি৷ আমাদের সঙ্গে তাদের চুক্তি আছে৷ এখন গায়ে গলুদ থেকে শুরু করে রিসিপশন পর্যন্ত, ভেন্যু ডেকরেশন, ক্যাটারিং,  ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, মেকআপ আর্টিস্ট- এসব বিষয় চাহিদামতো একটি প্ল্যানের মধ্যে নিয়ে আসি৷ তবে কেউ চাইলে আংশিকও করাতে পারেন৷

এটা কি অনেক সময় থিমভিত্তিক হয়?

অবশ্যই৷ আমরা ড্রেস কোড , কালার থেকে শুরু করে কোন টোনে যাবো, হলুদটা আমরা মাল্টি কালারে করবো, না কোনো দুইটি বা তিনটি কালার নিয়ে কাজ করবো, ওয়েডিংয়ের ড্রেসের কালার কী, সেই কালার মাথায় রেখে দুই-তিনটা কালার দিয়ে আমরা টোটাল ভেন্যুটা সাজাই৷ আমরা পুরো জিনিসটাকে প্রথমে থ্রি-ডি ডিজাইন করি৷ এরপর কালার কারেকশন করে ক্লায়েন্টের সাথে বসি ৷ এরপর তারা আমাদের ডিজাইনারদের সঙ্গে বসে কথা বলে চূড়ান্ত করেন৷ একটা ইভেন্টের সঙ্গে ডিজাইনার, শিল্প নির্দেশকসহ অনেক লোক যুক্ত হন৷

মানুষের চাহিদার তো অনেক পার্থক্য হয়৷ আজকাল কেউ কেউ একটা ইভেন্ট হেলিকপ্টারে করতে চান৷ কেউ আবার একটি অনুষ্ঠান বিশেষ কোনো ভেন্যুতে করতে চান৷ সেটা কিভাবে ম্যানেজ করেন?

প্রত্যেকটা ইভেন্টেই কাপলরা ডিফারেন্ট৷ তাদের আইডিয়াও ডিফারেন্ট৷ তারা যে আইডিয়া নিয়ে আসেন, আমরা সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করি৷ হেলিকপ্টার ট্রেন্ড মফস্বলে বেশি৷ ঢাকার মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের মধ্যে এটা নেই৷ আগে বিয়ের অনুষ্ঠান হতো তিনটি- হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাত৷ এখন আরো বেশি অনুষ্ঠান করে৷ পাঁচটি, ছয়টিও হয়৷ এখন রং খেলা হয়৷ একটা রিসোর্ট ভাড়া করলো, সেখানে রং খেলা হয়৷ আরো আছে মেহেদিনাইট৷ আর এখন কনভেনশন হলে বিয়ের পাশাপাশি রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করার প্রবণতাও বাড়ছে৷

ইউরোপের দেশগুলোতে একটি ওয়েডিংয়ে গেস্ট থাকে ৪০-৫০ জন: মো. রহমতউল্লাহ পপেল

ভেন্যু ডেকোরেশনে কি ফুলের চাহিদা বাড়ছে? লাইটিং কেমন হয়? ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের চাহিদা কেমন?

এটা নির্ভর করে ষ্ট্রাকচারের ওপর৷ আমরা আগে ভেন্যুর স্ট্রাকচার ডিজাইন করি তারপর লাইটিং, ডিসপ্লে বোর্ড, ফুল ব্যবহার করি৷ রংয়ের ব্যবহার আছে৷ আগে তো ফ্রেশ ফ্লাওয়ার ব্যবহার হতো৷অনেক দাম হওয়ায় এখন আর তেমন হয় না৷ আমরা চীন থেকে কৃত্রিম ফুল আমদানি করি৷  

দেশের বাইরেও ওয়েডিং প্ল্যান কেউ করেন ?

এটাকে বলে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং৷ নেপালে এবং ইন্দোনেশিয়ার বালিতে কিছু হয়েছে৷ আমরা নেপালের জন্য একটি প্যাকেজ ডেভেলপ করছি৷ তবে কমপ্লিট হয়নি৷ কারণ, আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি অনেক বেশি থাকেন৷ ইউরোপের দেশগুলোতে একটি ওয়েডিংয়ে গেস্ট থাকে ৪০-৫০ জন৷ কিন্তু আমাদের এখানে ১০-১২ হাজারও হয়৷ সাধারণভাবে এক-দেড় হাজার হয়৷ আমরা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের প্যাকেজে ভিসা, এয়ার টিকেট, ফুড, অ্যাকমোডেশন- সবই আমরা দেখবো৷

ওয়েডিং প্ল্যানারদের সার্ভিস নেয়ার সুবিধা কী?

নিজেরা করলে অনেক সময় এলোমোলো হয়৷ টাকা খরচ বেশি হয়৷ অপচয় হয়৷ অনেকে জানেনই না কোথায় কী পাওয়া যায়৷ ঘুরতে হয়৷ আর আমরা তো সব সার্ভিস এক জায়গা থেকে দিই৷

বর-কনের পোশাক, হলুদের পোষাকের পরিকল্পনা, পোশাক সরবরাহ এগুলোও কি আপনারা করেন?

আমরা অনেক সময় আইডিয়া দেই৷ তবে এগুলো তারা নিজেরাই কেনেন৷ বর-কনের পোশাক অনেকেই এখন বিদেশ থেকে আনেন৷

কোন ধরনের ইনকাম গ্রুপের লোকজন আপনাদের সার্ভিস নেন?

মধ্যবিত্তরা ক্যাটারিং এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট-সেবার জন্য আমাদের কাছে আসেন৷ এখানে প্ল্যানিংয়ের কাজটা ছোট৷ উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এবং যারা দেশের বাইরে থাকেন, তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্ল্যান করেন৷ আমরা সেভাবে কাজ করে দিই৷ আমাদের ক্লায়েন্টের ৩০ ভাগের বেশি অ্যামেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা প্রবাসী৷ আমরা তাদের সঙ্গে অনলাইনে প্ল্যান করি৷ সবকিছ মোটামুটি চূড়ান্ত করে রাখি৷ বিয়ের একমাস আগে তারা আসেন৷ তখন আরেকবার বসে প্ল্যানিংটা চূড়ান্ত করে কাজ করে দিই৷

এমন বিয়েতে কী রকম অতিথি থাকেন?

পলিটিক্যাল লিডার বা গ্রুপ অব কোম্পানিজের যারা মালিক, তাদের পরিবারের বিয়েতে অনেক অতিথি থাকেন৷ ৮-১০ হাজার৷ আর অন্য বিয়েতে সর্বোচ্চ দুই হাজার অতিথি থাকেন৷

কীরকম খরচ হয়? সর্বনিম্ন বা সার্বোচ্চ?

যদি শুধু ভেন্যু ডেকোরেশন হয় তাহলে মোটামুটি পাঁচ লাখে হয়ে যাবে৷ আর ক্যাটারিংসহ সব সেবা নিলে ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে৷ এটা ৫০০ জন অতিথি বিবেচনা করে বলছি৷ এটা মিনিমাম৷

পর্যন্ত একটি বিয়ের কাজ আপনারা কত টাকায় করেছেন৷

একটি বিয়ের কাজ দুই কোটি টাকায়ও করেছি৷ তবে তারা নিজেরা করতে গেলে আরো অনেক বেশি খরচ হতো, কারণ তাদের সোর্সগুলো জানা নেই৷

এই কাজে আরো প্রফেশনাল তৈরির কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে?

না, সেরকম কোনো প্রতিষ্ঠান নেই৷ তবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখে তারা নিজেরাও নতুন প্রতিষ্ঠান দিচ্ছেন৷ আমার এখানে কাজ করে কমপক্ষে ৩০টি প্রকিষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷

দেশে এধরনের প্রতিষ্ঠান কতগুলো আছে?

আমরা তো এক ছাতার নীচে সব সার্ভিস দিই৷ আমরা প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুই নিজেরা তৈরি করি৷ এরকম প্রতিষ্ঠান ৬-৭টির বেশি নেই৷ তবে ছোট, মাঝারি মিলিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক কর্মী আছেন ১০০ জন৷ এর বাইরেও দিন বা ইভেন্টভিত্তিক আমাদের অনেক কর্মী লাগে৷ আবার আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে আরো অনেক সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করে৷

এর ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

আসলে এখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ৷ এর প্রভাব আমাদের ওপরও পড়ছে৷ আমাদের কাজ থাকে প্রধানত ১২ মাসের মধ্যে তিন মাস৷ ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি৷ জুলাই মাসেও কিছু কাজ হয়৷ ৯ মাস আমাদের ফাইট করে টিকতে হয়৷ তবে বিয়ের অনুষ্ঠানের বাইরেও জন্মদিনসহ নানা ইভেন্টে আমাদের চাহিদা বাড়ছে৷ এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য