1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেতন কাঠামো আছে, বেতন কাঠামো নাই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশে সরকারিসহ দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া আর কোনো খাতে ঘোষিত বেতন কাঠামো নেই৷ বিশেষ করে কর্পোরেট খাতে কে কত বেতন পান, তা তাঁর সহকর্মীরাও জানেন না৷ তাই এখানে বেতন বৈষম্য প্রকট৷

https://p.dw.com/p/2iswI
ছবি: picture alliance/Zumapress

একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে তিনি (নাম প্রকাশ করা হলো না) কাজ করছেন প্রায় আট বছর ধরে৷ মধ্যম সারির কর্মকর্তা৷ অথচ তিনি জানেন না যে, তাঁর সমপর্যায়ে (একই গ্রেডে) যাঁরা কাজ করেন তাঁরা কত বেতন পান৷ সেটা জানার অফিশিয়িাল সুযোগও নেই৷ কারণ প্রকাশ্য কোনো বেতন কাঠামো নেই এখানে৷ এখানে নিজের বেতন কত তা প্রকাশ করাও চাকরি-শৃঙ্খলার বিরোধী৷ তাই এখানে বেতন বৈষ্যম্য অনেক৷ সাতটি গ্রেডের কথা বলা হলেও, বাস্তবে যত কর্মচারী তত গ্রেড৷ এখানে বেতন নির্ধারণ করা হয় দর কষাকষির মাধ্যমে৷ প্রতিষ্ঠান যাঁকে যা দিয়ে পারে আর যে যা আদায় করে নিতে পারেন৷ ফলে বেতন বৈষম্য থেকেই যায়৷ অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী যেমন আছে, তেমনই আবার পাঁচ লাখ টাকাও বেতন পান কেউ কেউ৷ অভ্যন্তরীণ একটি বেতন কাঠামো আছে বটে, তবে তা কর্মচারীদের কেউ দেখতে পারেন না৷

তিনি বলেন, ‘‘বেতন কাঠামো প্রকাশ্য করার জন্য আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনও করেছি৷ আন্দোলন করেছি৷ কিন্তু তাতে কাজ হয়নি৷ গ্র্যাইচুয়িটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই যে৷ তবে আমাদের আন্দোলনের মুখে টার্মিনেশন বেনিফিট নামে একটি বেনিফিট চালু করা হয়েছে৷''

বাংলাদেশের অন্তত দু'টি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে সম্প্রতি এই বেতন কাঠামো নিয়ে আন্দোলন হয়েছে৷ তার একটিতে কর্মচারীদের আবার বেতন দেয়া হয় দু'টি ক্যাটাগরিতে৷ একটি গ্রুপ বেতন পান দেশীয় কথিত কর্পোরেট স্ট্রাকচারে৷ আরেকটি গ্রুপ যাঁরা প্রধানত উচ্চ পদে চাকরি করেন তাঁরা বেতন পান তাঁদের বিদেশি মূল প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক স্ট্রাকচারে৷ ফলে একই দায়িত্ব পালন করলেও বেতনের আকাশ পাতাল ব্যবধান হতে পারে৷

বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, সাংবাদিক এবং পোশাক ও শিল্প শ্রমিক ব্যতীত অন্য কোনো খাতে সরকার অনুমোদিত বেতন কাঠামো নাই৷ ব্যাকিং সেক্টরে প্রকাশ্য বেতন কাঠামো থাকলেও তা একেক ব্যাংকে একক রকম৷ সরকারি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব বেতম কাঠামো আছে৷

এর বাইরে সাধারণভাবে বলা হয় কর্পোরেট স্ট্রাকচার বা বেতন কাঠামোর কথা৷ এই কাঠামো কাউকে অনেক বেতনের সুবিধা দেয়৷ আবার কাউকে বেতন বৈষম্যের শিকার করে৷ এছাড়া কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে আউটসোর্সিং নতুন এক বেতন বৈষ্যম্যের সৃষ্টি করেছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অধিকাংশ মোবাইল ফোন কোম্পানির কল সেন্টারগুলো আউটসোসিং-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়৷ যাঁরা কাজ নেন, তাঁদের কাজ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ফোন কোম্পানির নামে৷ কিন্তু ভুল ভাঙে বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা নিতে গিয়ে৷

‘অনেক এনজিও আছে, যারা কম টাকায় প্রকল্প প্রস্তাব করে, তাই সেখানে বেতনও কম’

বাংলাদেশের এনজিওগুলোর বেতন কাঠামোও সুনির্দিষ্ট নয়৷ এমনই একটি এনজিও-র একজন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমির খসরু৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের বেতন নির্ধারণ হয় প্রকল্পের ভিত্তিতে৷ ডোনাদের কাছে যখন কোনো প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়, সেখানেই প্রকল্পে যাঁরা কাজ করবেন তাঁদের কার কত বেতন হবে – সেই প্রস্তাবও করা হয়৷ ডেনাররা প্রকল্পটি যেভাবে পাশ করেন, বেতনও সেরকমই হয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা নির্ভর করে কোনো এনজিও-র সক্ষমতা কেমন, তার ওপরও৷ অনেক এনজিও আছে, যারা কম টাকায় প্রকল্প প্রস্তাব করে৷ তাই সেখানে বেতনও কম৷''

তাহলে এনজিও-র কর্তা-ব্যক্তিরা কত পান? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা তো বেতন পান না৷ তাঁরা নেন সম্মানী৷ এনজিও মানে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান৷ তাই সেখানকার নিয়ন্ত্রকরা তো বেতন নিতে পারেন না৷''

‘আন্দোলন করেছি, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি’

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরেদের সর্বশেষ বেতন কাঠামো অষ্টম পে কমিশন অনুযায়ী মোট ২০টি গ্রেডে বেতন দেয়া হয়৷ এতে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮,২০০ টাকা৷ সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা৷ সপ্তম পে কমিশনে এই সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৪,১০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা৷ তার মানে, আগের পে কমিশনের তুলনায় এখনকার বেতন শতভাগ বাড়ানো হয়েছে৷

এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি তাঁর প্রতিবদেনে বলেছেন, ‘সরকারি চাকরি আকর্ষণীয় না করা হলে আগামী বিশাল ও ক্রম সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ইহার সামাজিক রূপান্তরের জন্য সঠিক সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে না৷'

তিনি একটি স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন অথবা একটি স্থায়ী বেতন ও আলাদা চাকরি পূনর্গঠন কমিশন স্থাপন করারও সুপারিশ করেন৷ প্রতিবেদনে চার সদস্যের পরিবর্তে ছয় সদস্যের পরিবার বিবেচনা করে এবং মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মান বিবেচনা করে শতভাগ বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়৷

‘দেশে বেতনের একটি জাতীয় নীতিমালা থাকা উচিত’

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বেতন দেয়া হয় অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী৷ এটা ২০১৩ সালে কার্যকর হয়৷ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের সর্বনিম্ন মূল বেতন ১২,৬০০ টাকা৷ আর সর্বোচ্চ মূল বেতন ৩৫,৮৭৫ টাকা৷ তবে টেলিভিশন এবং অনলাইনের জন্য সরকার নির্ধারিত কোনো বেতন কঠামো নেই৷

২০১৩ সালে পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৫,৩০০ টাকা৷ একই সঙ্গে অন্যান্য শিল্পেরও শ্রমিকদের মজুরিও নির্ধারণ করা হয়৷ মোট চার সদস্যের পরিবার বিবেচনায় ঐ মজুরি নির্ধারণ করা হয়৷

জাতীয় মজুরি বোর্ডের সাবেক প্রধান ইকতেদার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা দু'টি বিষয়কে বিচেনায় নিই৷ চার সদস্যের একটি পরিবারের ভদ্রস্থ জীবনযাপন এবং জীবনযাত্রার মান দেখা হয়৷ এখানে মজুরি মানে হলো ন্যূনতম মজুরি৷ অর্থাৎ এর কম দেয়া যাবে না৷ তবে বেশি দেয়া যাবে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি বা কর্পোরেট খাতে সরকার ঘোষিত কোনো বেতন কাঠামো নেই৷ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব নিয়মে চলে৷ ফলে বেতন বৈষম্য দেখা যায়৷ যেমন ব্যাংকে সাধারণ কাঠামোর বাইরেও একটি কাঠামো আছে৷ সেখানে এমডিরা পাঁচ লাখ বা তারও বেশি বেতন নেন৷ তাঁরা বেতন নেন দর কষাকষি করে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘দেশে বেতনের একটি জাতীয় নীতিমালা থাকা উচিত৷ সরকারি বা বেসরকারি সবাই সেই নীতিমালার আলোকে বেতন নির্ধারণ করবে৷ এতে বেতন বৈষম্য কমবে৷''

এই বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য