‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখচ্ছবি’
৮ জুলাই ২০১৩মার্কিন টাইম ম্যাগাজিনের সর্বাধুনিক সংস্করণ ছিল ‘‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখচ্ছবি'' নিয়ে৷ ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়াতে পারে আশঙ্কায় সংস্করণটি মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কায় নিষিদ্ধ করা হয়৷ উভয় দেশেই বিগত দেড় বছরে সংখ্যালঘু মুসলিমরা একাধিকবার উত্তেজিত বৌদ্ধ জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছে৷
গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দু'টি সন্ত্রাসের ঢেউয়ে প্রায় দু'শো রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন৷ দৃশ্যত স্থানীয় নেতারা রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষের প্ররোচনা দিয়েছিলেন৷ একাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় অংশ নেন বলে প্রকাশ৷
মিয়ানমারের বিন লাদেন
এ বছরের মার্চ মাসে মিয়ানমারের মেইখতিলা শহরের দাঙ্গায় ৪২ জন প্রাণ হারায়৷ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের উপর আক্রমণ অব্যাহত আছে, যার একটি কারণ ধর্মীয় নেতা আশিন ভিরাথু’র অগ্নিগর্ভ বক্তৃতা৷ ভিরাথু নিজেকে ‘বর্মী বিন লাদেন' বলে বর্ণনা করে থাকেন এবং তাঁকে নিয়েই ছিল টাইম ম্যাগাজিনের কাহিনি৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিরাথুর বক্তৃতায় যে আন্দোলনের বার্তা প্রচার করা হয়েছে, তার নাম ‘৯৬৯'৷ এটি একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী, যাদের ‘মিয়ানমারের নব্য নাৎসি' বলেও অভিহিত করা হয়েছে৷ গোষ্ঠীটির অভিযানের একটি অঙ্গ হলো, স্থানীয় বৌদ্ধ বাসিন্দারা তাঁদের দোকানপাট, বাড়িঘর এবং সরকারি যানবাহনে ‘৯৬৯' স্টিকার ও পোস্টার লাগাবে৷
মুসলিমদের পুড়িয়ে দেওয়া দোকানের ধ্বংসাবশেষের উপর ‘৯৬৯' সংখ্যাটি স্প্রে-পেইন্ট করা হয়েছে৷ আশিন ভিরাথু মুসলিম দোকানপাট ও ব্যবসা বয়কট করার এবং আন্তঃ-ধর্ম বিবাহ নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন৷ কিন্তু এ সব খুঁটিনাটির চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো: বৌদ্ধধর্মের মতো একটি অহিংস ধর্মের মানুষদের মধ্যে এ ধরনের বিদ্বেষ ছড়ানো কি করে সম্ভব হলো?
যারা নীরব, তাদের সোচ্চার হতে হবে
মিয়ানমারে বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর ফলে মধ্যমপন্থি বৌদ্ধরাও যে খুব স্বস্তি বোধ করছেন, এমন নয়৷ এমনকি রাখাইন প্রদেশের জাতীয়তাবাদীদের হাতে মধ্যমপন্থি বৌদ্ধদের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, কেননা তারা হয়ত রোহিঙ্গাদের চাল বেচেছে কিংবা অন্য কোনো সেবা দিয়েছে৷ বলতে কি, কিছু কিছু এলাকায় মধ্যমপন্থি বৌদ্ধরা মুসলিমদের যতটা ভয় করে, তার চেয়ে বেশি ভয় করে ‘৯৬৯' আন্দোলনের সদস্যদের৷
অনেকটা বাকি বিশ্বে সাধারণ, ধর্মপ্রিয়, নিরীহ মুসলিমদের মতোই, মধ্যমপন্থি বৌদ্ধদেরও বেরিয়ে এসে জানাতে হবে যে, এই সহিংসতা বৌদ্ধধর্মের বৈশিষ্ট্য কিংবা অঙ্গ নয়৷